কামরুল হাসান মঞ্জু চিন্তা করতে ভালোবাসতেন। তিনি নতুন এবং মৌলিক চিন্তা করতে চাইতেন। কামরুল হাসান মঞ্জুর পরিচয় তিনি আবৃত্তিশিল্পীও সংগঠক এবং গণমাধ্যম ও উন্নয়নযোগাযোগ ব্যক্তিত্ব। দুই ক্ষেত্রেই তিনি চিন্তাশীলতা, সৃজনশীলতা আর নতুন কিছুর সন্ধানের আনন্দ উপভোগ করে গেছেন।
শিল্পী কিংবা সৃজনশীল সত্তার যে কোনো মানুষের মতো তাঁরও পথচলা মসৃণ ছিল না। সংগ্রাম তাঁরও সঙ্গী ছিল। শ্রদ্ধা-সমীহ-প্রশংসার সঙ্গে কঠিন-তীব্র-তীক্ষ্ন-সমালোচনাও তাকে কম বিদ্ধ করেনি। সত্যিই কিছু অসঙ্গতিও তাঁর থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তিনি পথ চলে গেছেন। আজীবন সংগঠন করে যাওয়া মানুষটিও এই পথ চলায় কখনও বড় একা হেঁটেছেন। তবে তিনি আনন্দ পেয়ে গেছেন তাঁর সৃজনশীলতার অনিঃশেষ প্রেরণা থেকেই। তাঁর যে গণমাধ্যম উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সেখানেও তিনি সব সময় গবেষণা করতে ভালোবেসেছেন। উদ্ভাবনী কিছু করতে চেয়েছেন। আবৃত্তিতেও ছিলেন নিরীক্ষাপ্রিয়। নতুন শব্দ আর শব্দে আঁকা ছবির সন্ধান করে গেছেন সব সময়।
কামরুল হাসান মঞ্জু মানুষের যুথবদ্ধতার শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। কৈশোর থেকেই তিনি সংগঠনে যুক্ত থেকেছেন। সেই প্রক্রিয়াতেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন। দেশের সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চার অন্যতম পুরোধা তিনি। ঢাকায় আশির দশকের গোড়ায় আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বরিত’ গড়ে তোলার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সঙ্গেও ছিলেন কামরুল হাসান মঞ্জু। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সকল মঞ্চে তাঁর আবৃত্তি উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
কামরুল হাসান মঞ্জুর চিন্তার কেন্দ্রে ছিল মানুষ, বিশেষত প্রান্তিক মানুষ। শোষণ-বঞ্চনার শিকার মানুষের কথা বলতে তিনি ভালোবাসতেন। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা আর ক্ষমতায়নের স্বপ্ন তাঁর মননের কেন্দ্রে ছিল। সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে সক্রিয় হওয়ার শুরুর দিকে যশোরেই তিনি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার কিছু গুণী মানুষের সান্নিধ্য পান। তিনি নিজেও সমাজের নিচুতলার মানুষের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। সেই বিশ্বাসের প্রকাশের ঘটে তাঁর লেখা ছড়া-কবিতা-গদ্যে। পরে আবৃত্তিতে। তাঁর কণ্ঠে সুকান্ত ভট্টাচর্যের ‘লেনিন’, নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’, তারাপদ রায়ের ‘গরিবগঞ্জের রূপকথা’, পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘সোনার মেডেল’সহ বহু কবিতার যে উচ্চকিত আর ভিন্নমাত্রার উচ্চারণ সেটি তাঁর সেই বিশ্বাসেরই প্রকাশ।
পরবর্তী সময়ে তিনি যখন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে পেশা হিসেবে নেন, তখন অবশ্য তিনি বলতেন, ‘সিস্টেমকে বাইরে থেকে আঘাত করে ভাঙা যায় না; বরং সিস্টেমের ভেতরে কাজ করে একে পাল্টাতে হয়।’
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
কামরুল হাসান মঞ্জুর জন্ম সেসময়ের ফরিদপুর ও বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের খান্দারপাড়ের মাছিয়ারা গামে নানাবাড়িতে; ১৯৫৬ সালের ১৬ জানুয়ারি। বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ঝুটিগ্রামে। তাঁদের বর্তমান পারিবারিক নিবাস যশোরের আরবপুরের ‘করবী’। কামরুল হাসান মঞ্জুর মা রিজিয়া বেগম এবং বাবা মোজাফ্ফর হোসেন। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে মঞ্জু দ্বিতীয়। যশোরেই তাঁদের বেড়ে ওঠা।
এইচএসসি পাস করার পর কামরুল হাসান মঞ্জুর বাবা মারা যান। সেসময় তাঁদের পরিবার কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগোয়। কামরুল হাসান মঞ্জু সে সময় ‘উন্মেষ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এর মাঝেই স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন কামরুল হাসান মঞ্জু। নেদারল্যান্ডের আইএসএস থেকে তিনি পলিটকস অব অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটিজিস-এএম.এস.এস. করেছেন। ইংল্যান্ডের ক্রস কালচারাল কমিউনিকেশন সেন্টারে ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন এবং ডারহাম ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুলে রিসার্চ ইভালুয়েসান অ্যান্ড মনিটরিং এর ওপর পড়াশুনা করেছেন কামরুল হাসান মঞ্জু।
গণমাধ্যম উন্নয়ন কর্মকাণ্ড
কামরুল হাসান মঞ্জু দীর্ঘদিন মানব উন্নয়নের বিভিন্ন ধারার কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সাংবাদিকতা ও বিকল্পধারার ওপর দেশ ও বিদেশে অর্জিত তাত্ত্বিক ধারণাকে বাংলাদেশের উন্নয়ন যোগাযোগের বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নতুন ধারার যোগাযোগ কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছেন তিনি। বিশেষ করে মানবাধিকার, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপটে গ্রাম ভিত্তিক সাংবাদিকতার চর্চা করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন মঞ্জু। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা’য় কয়েক বছর কাজ করার পর এই ব্রত নিয়েই তিনি ১৯৯৬ সালের পয়লা জুলাই ম্যাস-লাইন মিডিয়া সেন্টার এমএমসি প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সংস্থাটি তাঁর একটি গবেষণার ফসল। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা’য় কাজ করার সময় তিনি গবেষণাটি করেন। এতে তিনি দেখান দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পারে না। গণমাধ্যমগুলো তাদের চেয়ে সমাজের উঁচুতলার মানুষের খবর প্রকাশ ও প্রচারে বেশি ব্যস্ত থাকে। আর এভাবে দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার থেকে ক্রমাগত বঞ্চিত হতে থাকে।
তিনি এমএমসি’র মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলসহ স্থানীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাদার সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশপাশি তৃণমূল সংবাদকর্মী নামে নতুন একদল তরুণকে গণমাধ্যমে সক্রিয় করেছে এমএমসি। তাদের অনেকে এখন মূলধারার গণমাধ্যমে সামনের সারিতে কাজ করছেন।
কামরুল হাসান মঞ্জু সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন যাতে তারা অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে সাধারণ মানুষের শোষণ-বঞ্চনা-সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। সাধারণ মানুষের কথাকে প্রধান সংবাদ করে তোলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে নোয়াখালী থেকে ‘লোক সংবাদ’ এবং এবং পটুয়াখালী থেকে ‘মেঠোবার্তা’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করে গেছেন কামরুল হাসান মঞ্জু। ঢাকা থেকে ‘প্রান্তজন’ নামে একটি জার্নালও সম্পাদনা করেন তিনি। এদেশে কম্যুনিটি রেডিও প্রতিষ্ঠা এবং তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের ধারণার একজন পুরোধা কামরুল হাসান মঞ্জু। তাঁর প্রতিষ্ঠা করা কম্যুনিটি রেডিও ‘লোক বেতার’ এখনও বরগুনায় কাজ করছে।
আবৃত্তি
‘নতুন শতাব্দীর সূচনালগ্নে রণযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে জনযুদ্ধের শেষ সম্ভাবনাটুকুকেও যখন বোমাবৃষ্টির আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হলো অস্তিত্বহীন করা হলো লাখো লাখো নিরীহ ইরাকির অস্তিত্বকে এবং তাদেরই অস্তিত্ব রক্ষার নামে তৈরি করা হলো অন্য এক রাজনীতির পাটাতন তখন কোথায় খুঁজব গণমানুষের কবিতা, তখন কে খোঁজে, কে বলে গণায়নের কবিতা শত শত গণকবরের মাঝে? এসব কবরের অন্ধকারে কবিতা সন্ধানের আদৌ আগ্রহ আছে কি না সেটি কে খুঁজবে আজকের তারকাজীবীদের মাঝে? ডলারের আকাক্সক্ষা আজ যখন আমাদের শিল্পী, কাব্যকার, বিপ্লবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধীজীবী, রাজনীতিক, শিক্ষক, ছাত্র, চোর, হাইজ্যাকারের সকল সীমানা ভেঙে দিয়ে আমাদের সমস্ত চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে টুকরো টুকরো করে মিকশ্চার মেশিনে পুরে গ্লোবালাইজ করেছে তখন ‘হাকালুকি’, ‘চান্দরবলি’ আর ‘নিঝুম দ্বীপ’, আমাদের মাঝে আর কোনো আকর্ষণ জাগায় না।
এই নিষ্ফলা ভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা কোথায় খুঁজবো কবিতার সেই কল্লোল যেখানে কোলাহল করে ওঠে শিশুদের মুখরিত মুখ? তখন খুব সহজেই মানুষের বুক হয় এক মানবিক ধ্বংসের পাটাতন। মানবিক যুদ্ধসম্ভব সেই সব মানুষের মুখ আজ যখন ধুয়ে মুছে গেছে তখন কবি ও কবিতার ভাষ্যকার কোথায় খুঁজবে মানুষের অস্তিত্ব?’
‘বৃত্তের ওপারে ঝুমকো ফুল’ বইয়ে এভাবে নিজের আবৃত্তি ভাবনা বলেছেন কামরুল হাসান মঞ্জু। তিনি বলতেন, আবৃত্তি হচ্ছে বিশ্বাস থেকে বলার শিল্প; শিল্পীর সত্যস্বর; আত্মার উচ্চারণ। বৃন্দ আবৃত্তি আর অবৃত্তি প্রযোজনার মধ্য দিয়ে আত্মার যুথবদ্ধ উচ্চারণের প্রয়াসে সংগঠন গড়ে তুলেছেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকার প্রথম আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বরিত’ গঠনের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে জড়িত মঞ্জু। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় মঞ্চে মঞ্চে তাঁর আবৃত্তি ছিল এক বড় অনুপ্রেরণা। পরে তিনি তরুণদের নিয়ে আবৃত্তি স্কুল ‘পাঠশালা’ গড়ে তোলেন। এই ব্যানারেও আবৃত্তি কর্মশালা পরিচালনা এবং প্রযোজনা মঞ্চায়ন করেন তিনি।
কামরুল হাসান মঞ্জুর আবৃত্তির কবিতা নির্বাচন, নির্মাণ, স্বরপ্রক্ষেপণ এবং তাঁর পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি প্রযোজনাগুলোতে নতুন ধরনের চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। এটিই তাঁকে অনন্যতা দেয়। তিনি একটি ধারার পুরোধা হয়ে ওঠেন। তাঁর অগ্রজ আবৃত্তিশিল্পী, বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় ময়মনসিংহ নিবাসী তারিক সালাউদ্দিন মাহমুদের বস্তুবাদী আবৃত্তির চিন্তা মঞ্জুর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। মঞ্জু তাঁর প্রতি সব সময় শ্রদ্ধা প্রকাশ করে গেছেন। কামরুল হাসান মঞ্জু শুরুর দিকে তাঁর সহপাঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আহাদুজ্জামান মো. আলীর কাছ থেকে আবৃত্তির অনুপেরণা পেয়েছেন। কাঠামোগতভাবে আবৃত্তি চর্চার শুরুটাও তাঁর সঙ্গেই।
তাঁর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলোর মধ্যে রয়েছে দলছুট কবিতার কঙ্কাল, ১৯৯৯,পাঠশালা; বৃত্তের ওপারে ঝুমকো ফুল, ১৯৯৮, স্রোত আবৃত্তি সংসদ; দূরের পাল্লা, ১৯৯৬,স্বরিত; পরাণের গহিন ভেতর, ১৯৯৫, স্বরিত; যদি বৃষ্টি নামে, ১৯৯৪; পরাণের গহিন ভেতর, ১৯৯১, স্বরিত; পৃথিবী আমাদের বন্ধু, ১৯৯০, স্বরিত; কালো মানুষের গান, ১৯৮৯, স্বরিত; গীত সুধারসে এসো, ১৯৮৮, স্বরিত; রুদ্র তোমার দারুণ দীপ্তি, ১৯৮৬, স্বরিত; রুপালী স্নান সোনালী কাবিন, ১৯৮৫, স্বরিত; আমরা অনার্য আমরা দ্রাবিড়, ১৯৮৪, স্বরিত; প্রসূনের জন্য প্রার্থনা, ১৯৮৩এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছয় শিল্পীর পরিবেশনা, ১৯৮৩।
কামরুল হাসান মঞ্জুুর একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মেঘের ভেতর আত্মগোপন,১৯৯৬; একক সন্ধ্যা দ্বিতীয়, ১৯৯৪ এবং একক সন্ধ্যা প্রথম, ১৯৯৩। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চ পরিবেশনা যদি বৃষ্টি নামে, ১৯৯৬, পাঠশালা এবং ফাউস্ট, ১৯৮২, গ্যোটে ইনস্টিটিউট।
কামরুল হাসান মঞ্জুর আবৃত্তি অ্যালবামগুলো হলো আমরা আবহমান ধ্বংস এবং নির্মাণে, ১৯৯৮ ও ২০০৯; তুমি হেমন্তের মতো, ১৯৯৪ ও ২০০৯; তুমি সুন্দর শুধু সুন্দর, ১৯৯৪ ও ২০০৯; যদি বৃষ্টি নামে, ১৯৯৪ ও ২০০৯; চির প্রণাম অগ্নি, ১৯৯৩ ও ২০০৯; দুজনে মিলে কবিতা, ১৯৯৩ ও ২০০৯; কালবেলার সংলাপ, ১৯৯২ ও ২০০৯; গীতাঞ্জলি, ১৯৯১ ও ২০০৯; এক অচ্ছুত অনার্য, ১৯৮৯ ও ২০০৯; যন্ত্রণার জয়াশা, ১৯৮৮ ও ২০০৯; কালো কবিতার কোলাজ, ১৯৮৮ ও ২০০৯, অর্জুন শুধু অর্জুন, ১৯৮৭ ও ২০০৯ এবং প্রসূনের জন্য প্রার্থণা, ১৯৮৬ ও ২০০৯।
প্রকাশনা
শুরুতে কবিতা লেখাসহ সাহিত্য চর্চা করলেও পরে কামরুল হাসান মঞ্জুর লেখার বড় ক্ষেত্র ছিল সাংবাদিকতা, আবৃত্তি এবং গবেষণা। সাংবাদিকতা বিষয়ে তাঁর বইগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি, সংবাদে নারীর সঠিক উপস্থাপনা, অ্যাডভোকেসি রিপোর্টিং এবং নীতিমালা: সংবাদ লিখন ও পরিবেশন। গবেষণা নিয়ে তিনি লিখেছেন, গবেষণার রীতি ও পদ্ধতি। আবৃত্তি বিষয়ে কামরুল হাসান মঞ্জুর বই, বৃত্তের ওপারে ঝুমকো ফুল। এছাড়া সাংবাদিকতা এবং আবৃত্তি নিয়ে তিনি অনেক নিবন্ধ লিখেছেন এবং বই ও পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
কামরুল হাসান মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ২০১১ সালে তিনি গ্রিসে একটি সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে প্রথম স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর আরো দু’বার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে তাঁর বাসায় নিভৃত জীবনযাপন করছিলেন। ২০১৯ এর ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে আশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রাত ৯টা ৩০ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন তাঁকে যশোরের কারবালা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
এখনো অনেক গ্রন্থ …
কামরুল হাসান মঞ্জু বই পড়তে এবং গান শুনতে ভালোবাসতেন। তাঁর পড়ার অভ্যাস ছিল বহুমাত্রিক তবে শিল্প-সাহিত্য তাঁর প্রিয় প্রসঙ্গ ছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ বলেন, উপার্জনের বড় অংশ দিয়ে বই-ই কিনেছেন। তিনি বলতেন, ‘বই পড়লে মানুষের মুখশ্রীতেও দ্যুতি প্রকাশ পায়।’ বাসায় এবং অফিসে তিনি মিনি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন। মৃত্যুর আগেও তাঁর ঘরজুড়ে ছিল শুধু বই। বিছানার চারপাশজুড়ে বই। মনে পড়ছে, সুবোধ সরকারের ‘পলাশপুর’ কবিতার একটি পঙ্ক্তি তিনি প্রায়ই আওড়াতেন ‘এখনো অনেক গ্রন্থ পড়া হয় নাই।’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)