চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কামদেব ও বিএনপি

কালিকা পুরণের সন্ধ্যাকে নিয়েই কামদেবের সৃষ্টি। কামদেবের সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ষড়রিপুর ঊর্ধ্বে থাকা মহাদেবের মনে কামভাব জাগ্রত করা, কেননা ভবিষ্যতে সতীর সাথে শিবের বিয়ে দেয়ার দরকার হবে। কামদেব সৃষ্ট হয়ে ব্রহ্মাকে জিজ্ঞেস করল যে কাজ কী হবে। ব্রহ্মা তার কাজ নির্ধারণ করে দিলো দুনিয়ার সমস্ত প্রাণী তো বটেই, এমনকি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবও তার ‘বশবর্তী’ হবে। লোককে মত্ত করে বলে তার আরেক নাম মদন।

কামদেব মনে মনে চিন্তা করল ব্রহ্মা যখন বলেছে যে সে, বিষ্ণু, শিবসহ সকল প্রাণী তার অস্ত্রের বশবর্তী, তখন একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক। সে তখন ধনুকে ‘কামশর’ জুড়ে দক্ষ-প্রজাপতি, ব্রহ্মার সব মানসপুত্র এবং ব্রহ্মাকে উদ্দেশ্য করে ‘কামশর’ নিক্ষেপ করল। তখন তারা সবাই সন্ধ্যার দিকে বার বার তাকাতে লাগল আর তাদের কামভাব বাড়তে লাগল। আর কামশরবিদ্ধ হয়ে সন্ধ্যার থেকে “৬৪ কলার” উৎপন্ন হল। সন্ধ্যাও কামতাড়িত হয়ে সকলের দিকে আঁড়ে আঁড়ে তাকাতে লাগল। ব্রহ্মা তখন ঘামছে। এসব দেখে কামদেব তার শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হল। পুরো ঘটনাটা আবার মহাদেব উপর থেকে দেখতেছিল। ব্রহ্মা আর তার মানসপুত্রদের এরকম কামবিকারগ্রন্থ দেখে উপহাসের হাসি হাসতে লাগল।

হিন্দু পুরাণোক্ত কামদেব বা মদন প্রেম ও কামের দেবতা। এর কীর্তি-কাহিনি কথিত হয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পরে কামদেবের তিরে আহত হয়েই পার্বতীর প্রতি আকৃষ্ট হন শিব। অবশ্য কৃষ্ণের উপর কামদেবের কোনও প্রভাব খাটেনি। অজস্র গোপিনীর সঙ্গে রাসলীলায় মত্ত হওয়ার পরেও কৃষ্ণের মনে গোপিনীদের প্রতি বিন্দুমাত্র কামবাসনা জাগ্রত হয়নি। কিন্তু তেমন ইন্দ্রিয়জয়ী পুরুষ আর ক’জন হতে পারেন। ফলে কামদেবের ধনুকের তিরের প্রভাব আপামর জীবজগতের উপরই কার্যকর।

পুরাণ মতে, মদন হলেন ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর সন্তান। প্রেমের দেবী রতি তার স্ত্রী। তবে কোনও কোনও পুরাণকাহিনিতে মদনকে ব্রহ্মার সন্তান হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সন্তান তিনি যারই হোন না কেন, তার কাজ জীবজগতে কাম ও প্রেমের জন্ম দেওয়া। কামদেবকে সন্তুষ্ট করার একমাত্র উপায় তার পুজো নয়, বরং উপযুক্ত উপচার সহ কামদেব মন্ত্র জপ করলেও বাঞ্ছিত মানুষকে লাভ করা সম্ভব। কিন্তু কীভাবে কার্যকর হয় সেই মন্ত্র?

প্রকৃত অর্থে কামদেব মন্ত্র হল এক ধরনের বশীকরণ মন্ত্র। অর্বাচীন কালের তন্ত্রাচারে এই মন্ত্রের প্রয়োগ রয়েছে বলে শোনা যায়। বলা হয়, কাম্য নারী বা পুরুষকে আকর্ষণ, পুরনো প্রেমকে ফিরে পাওয়া, কিংবা প্রেমের বাধা দূরীকরণের মতো কার্যসিদ্ধি সম্ভব এই মন্ত্রের সাহায্যে। ঠিক কী করতে হয় এই মন্ত্রের সুফল ভোগ করতে হলে? বলা হচ্ছে, কোনও এক শুক্রবারে শুরু করতে হয় এই মন্ত্রের জপ।

প্রথমে ফুল ও ধুপ-ধুনো সহ পুজো সারতে হয় কামদেবের। তারপর প্রজ্জ্বলিত করতে হয় বিশুদ্ধ ঘি’র দীপ। তারপর একটি কাগজে নিজের ভালবাসার মানুষের নাম লিখে শুরু করতে হয় মন্ত্রোচ্চারণ। মন্ত্রটি এরকম: ‘‘ওম কামদেবায় কামবশম করায় অমুকস্য (প্রার্থিত ব্যক্তির নাম সহযোগে) হৃদয়ম স্তম্ভয়’’ ইত্যাদি। এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় ১০৮ বার। এমনটা টানা তিন সপ্তাহ রোজ করতে পারলেই নাকি কাঙ্ক্ষিত মানুষ ধরা দেবে মন্ত্রজপকারীর কাছে। আজকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘মদন ভস্মের পর’ কবিতা পড়ার পরে হঠাত কামদেবের কথা মনে পড়ে নেট ঘেঁটে ঘেঁটে আবার পুরাতন জ্ঞান ঝালাই করে নিলাম।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকেই তার স্ত্রী, আওলাদরা আর কিছু ‘চামচা’র সহযোগিতায় কামদেব মদনের মতো ‘মিথ্যাশরে বিদ্ধ ক’রে’ মানে মিথ্যাচারের মাধ্যমে আওয়মী লীগ বিরোধী বাংলাদেশের প্রায় ৪০% ভোটাদের মনে নিজেদের আসন পাকা করার চেষ্টায় উন্মত্ত হলেন। যাতে করে তারা মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির মাঝে বিভক্তি এনে ক্ষমতায় যেতে পারেন। কিছুটা সফলতাও পেয়েছেন তারা। বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশে আওয়মী লীগ বিরোধী ভোটার ছিল ৩০% এর মতো, কিন্তু এখন তা ৪০ এ দাঁড়িয়েছে।

এ সবই ‘যুবরাজদের’ ‘মিথ্যাশরের’ প্রভাব। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের লুটপাট নিয়ে জিয়াউর রহমান মিথ্যাচার শুরু করেন। তিনি ৩২ নং এ প্রাপ্ত সম্পদের শ্বেতপত্র প্রাকশ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু বাস্তবে কিছু না পেয়ে চেপে যান বেমালুম। ধাক্কা খেয়ে এর পরে অন্যের মুখ দিয়ে শুরু করেন আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। জাসদের নেতা কর্মীদের মুক্তি দিয়ে তাদের পত্রিকার (গণকন্ঠ) মাধ্যমে শেখ কামালকে ব্যংকডাকাত বানানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। কিন্তু নিজেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করেননি। কারণ উনি অন্যদের সাথে যে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন তা ছিল ২৭ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ তারিখে নয়।

জিয়ার মৃত্যুর পরে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ নিয়ে বিএনপি প্রথম জাতীয়ভাবে মিমাংসিত বিষয়ে মিথ্যাচার শুরু করে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী, আওলাদরা আর কিছু ‘চামচা’র সহযোগিতায় জিয়াকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বানালেন। তাতে বেশি কাজ না হয়ায় হঠাৎ করেই ১৫ই আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন হয়ে গেলো সেখানেও সেই পুরাতন কামদেব স্টাইলে ‘মিথ্যাশরের’ ব্যবহার। এর পরে ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে ‘মিথ্যাশরের’ ব্যবহার করে নির্বাচন বর্জন। এর পরে চরম মিথ্যাচারের মাধ্যমে চলে অগ্নিসন্ত্রাস। যাতে হাজার হাজার নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষের প্রাণ যায়।

ছয় কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর নকল করে বিবৃতি জালিয়াতি, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধান অমিত শাহের সঙ্গে ফোনালাপের মিথ্যা দাবি এবং কিছুদিন আগে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়ার কথিত ইনজেকশন নিয়ে ঘুমানোর দাবির ঘটনাগুলিতে ছিল মিথ্যাচারার অদক্ষ প্রয়োগ। এতে ব্যক্তি বিশেষের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে মিথ্যাশ্রয়ী হওয়ার ফলে দল হিসেবে বিএনপির অনেক ক্ষতি হয়েছে। দলটির কর্মকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অমিত শাহের সঙ্গে মিথ্যা ফোনালাপের ঘটনায় সারাবিশ্বে বিএনপিসহ বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিককালের মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে মিথ্যা বলা, চাপাতি পার্টির সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা এখন দেশের সীমা পেরিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। যদিও কামদেবের মন্ত্র জপার মতো ১০৮ বার মন্ত্র জপেও কাজ হয় নি তার প্রমান দেখা গেলো পত্রিকার খবরে। খবরে দেখা গেলো বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’ সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত ছিল, আছে এবং থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট।

স্বেচ্ছাসেবক দলের জুয়েল হোসেন রাজি নামের এক সদস্যের কানাডা ইমিগ্রেশনের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করলে তা বাতিল করে দিয়ে কানাডার আদালত এ মত দেয়। এর আগে কানাডার ইমিগ্রেশন পুলিশও একই কারণ দেখিয়ে জুয়েলের আশ্রয় বাতিল ঘোষণা করে। এরপর জুয়েল আবার জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে আপিল আবেদন করেন। কিন্তু ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি হেনরি এস ব্রাউন ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে একমত হয়ে বাতিল সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।

আদালত রায়ে বলা হয়েছে হরতালের সময় যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য হয়েছে দলটির সদস্যরা যে তার সাথে যুক্ত নয় তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। মানে বিএনপি’ সন্ত্রাসী সংগঠন তাই তার দলের কাউকে কানাডা রাখবে না।

স্বেচ্ছা ইংল্যান্ডপ্রবাসী তারেক জিয়া হয়তো ভাবতে পারছেন না যে, বাংলাদেশ এখন কতদূর এগিয়ে গেছে। তার চামচারা তাকে কী বুঝাচ্ছেন তা এখন সবাই জানে। নিজের কোন বৈধ কোন আয় না থাকার পরেও ইংল্যান্ডে ‘যুবরাজে’র মতো জীবন যাপন করছেন তিনি। যদিও তার বাবা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সময় তাদের ছিল একটা ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি।

এখন গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়ছে, সারা দুনিয়ার সব খবর সবাই জেনে যায় কয়ে সেকেন্ডের মধ্যে। তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ফেরারি আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কাগজে কলমে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কি কি মিথ্যাচার করছেন, তাও আজ দেশের মানুষ তৎক্ষণাৎ জানতে পারছে। মিথ্যাশ্রয়ী হয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার দিন শেষ। মিথ্যার ফল কী কী তার প্রমান দিল কানাডীয় আদালত।

স্বেচ্ছা ইংল্যান্ডপ্রবাসী ‘যুবরাজ’ তারেক জিয়ার মিথ্যাচার এখন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। তাই কবিগুরু রবীন্দরনাথ ঠাকুরের ‘মদন ভস্মের পর’ কবিতার একটা লাইন মনে পড়ে। কামদেবকে ভয় করার পরে যখন ছাই বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হলো তখন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে স্বর্গের বাইরেও সব প্রাণীকূলের শরীরে অবস্থান নিলো একেকটা কামদেব মদন। তাই আমাদের সবার মনে আর দেহে এখন বিরাজ করছে প্রেম ও কাম। তাইতো ঠাকুর তার কবিতায় বলেছেন, ‘করলে একী সন্যাস্যি, বিশ্বময় দিলে তারে ছড়িয়ে’! তারেক জিয়ার দলের মিথ্যাচার এতদিন ছিল দেশের সীমানায়, কানাডার আদালতের মাধ্যমে এখন তা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেলো।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)