মুক্তিযোদ্ধা ও আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফকে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় দাফন করা হয়েছে। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
গতকার মঙ্গলবার কাজী আরিফের মরদেহ ঢাকায় আনার পর সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। তারপর ধানমন্ডিতে বাদ আসর তৃতীয় জানাযা শেষে রাতে একই জায়গায় মরহুমের ছোট মেয়ে অনুসূয়ার বাড়ির সামনে ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয়। গতকাল বুধবার সকালে বড় মেয়ে ন¤্রতা আরিফ কানাডা থেকে আসলে বিকালে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মাউন্ট সেইন্ট লুকস হাসপাতালে কাজী আরিফকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গত মঙ্গলবার এই হাসপাতালে দ্বিতীয় বারের মতো তার হৃদপিন্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। কাজী আরিফের হার্টের বাল্ব অকেজো হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার বাল্ব পুনঃস্থাপন এবং ধমনীতে বাইপাস অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কাজী আরিফ। পরে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বাদ মাগরিব তাঁর প্রথম জানাজা হয়।
কাজী আরিফের মরদেহ গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকা এসে পৌঁছায়। হয়রত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজী আরিফের মরদেহ গ্রহণ করেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু শমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম হারুণসহ আরও কয়েকজন। ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।
কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ী সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এসব কিছুরই হাতেখড়ি হয় সেখানে। আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে।
১৯৭১ সালে ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কাজী আরিফ। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে লেখাপড়া শুরু করেন আর সাথে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি। বাংলাদেশের আবৃত্তিশিল্পের অন্যতম রূপকার কাজী আরিফ। তিনি মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য।