ব্যাঙ্গালুরু (কর্ণাটক), ভারত থেকে: চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গোটা পঞ্চাশেক বাংলাদেশী দর্শক বিজয় উৎসবের
প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিজয়তো হলো না! প্রায় জেতা এক ম্যাচ
অবিশ্বাস্যভাবে ভারত ১ রানে জেতার পর যখন তাদের দর্শকরা গগনবিদারী শব্দে উৎসব করছিলেন, তখন বাংলাদেশী
এই সমর্থকরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে শুধু কাঁদলেন! প্রতিপক্ষের উৎসবের
শব্দে তাদের কান্নার শব্দ কেউ শোনেনি ঠিক, কিন্তু চোখের পানিতো অনেকে
দেখেছে।
প্রতিপক্ষের দর্শকদের যারা ভদ্র তারা অবশ্য এই চোখ ভেজা দেশপ্রেমিক মানুষগুলোকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, গুড ক্রিকেট গুড ক্রিকেট। বাংলাদেশের খেলা আমরা অনেক দিন মনে রাখবো। বাংলাদেশ যে এতো ভালো ক্রিকেট খেলে তা আমরা এমন সামনাসামনি জানতাম না। ব্র্যাভো বাংলাদেশ।
বুধবারের খেলায় বাংলাদেশের বোলাররা টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ভারতীয় প্রধান ব্যাটসম্যানদের কাউকেই বিশেষ বড় স্কোর করতে দেননি। ভারত দলটিকে বেঁধে ফেলেছিলেন ১৪৬ রানে। সেই রান তাড়ার বিষয়টিও মোটামুটি ভালোভাবে চলছিল। এক মিঠুন আলী ছাড়া টপ-অর্ডারের সবাই মোটামুটি রান করছিলেন।
জয়ের নায়ক হতে পারতেন সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক অথবা শুভাগত হোম। কিন্তু নায়কতো না, অবশেষে এরা খলনায়ক হয়েছেন! নায়ক হয়েছেন ভারতীয় বোলার হার্দিক পান্ডিয়া।
স্টার স্পোর্টসের ভাষ্যকাররা অবশ্য বলেছেন, ম্যাচের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট ছিল সাকিবের আউট হওয়া। তার মতো একজন ব্যাটসম্যানের এভাবে আউট হওয়াকে তারা অবিশ্বাস্য বলেছেন। এরপর ১৯তম ওভারে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন। প্রধান সব ভারতীয় বোলারের কোটা শেষ হয়ে যাবার পর হার্দিক পান্ডিয়ার কাছে শেষমেষ হেরে গেলো বাংলাদেশ।
এ হার অভিজ্ঞতার কাছে। শুধু হার নয়, একই সঙ্গে টাইগারবাহিনী ছিটকে গেলো এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিযোগিতা থেকে। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যে ম্যাচ আছে কলকাতায়, তা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
টানা তিন ম্যাচ জিতে এরমাঝে সেমি ফাইন্যাল নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ড দলটি এখন টগবগ করে ফুটছে। সুপার টেনের তিন খেলাতেই টানা হারে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর জিতবে এটি আশা করাটা বেশি কিছু হয়ে যেতে পারে।
বুধবার বাংলাদেশের বোলাররা আবার তাদের জাত চিনিয়েছেন। পঞ্চাশ হাজার ধারণ ক্ষমতার চেন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের প্রায় পুরোটা ভর্তি ভারতীয় দর্শকরা অবাক হয়ে দেখেছেন তাদের বিশেষ পাত্তা না দেয়া বাংলাদেশী বোলারদের বোলিং বিষপ্রবাহ!
অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং যতোটা নড়েবড়ে ছিল বুধবার বাংলাদেশ দলের চেহারা ছিল ভিন্ন। সৌম্য আবার একটি চোখ ধাঁধানো ক্যাচ ধরেছেন এ ম্যাচে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের জয় ছিলো যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কিন্তু চেন্নাস্বামীতে সবাই আবার দেখলো ক্রিকেট সত্যি এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সে খেলার হাতের মুঠোর জয় অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে শেষ প্রাপ্তি কান্না ছাড়া আর কিছু ছিলোনা বাংলাদেশের দর্শকদের। দলের অন্যতম ফিনিশার নাসির হোসেন কার অপছন্দের কম্বিনেশনের শিকার হয়ে এদিনের খেলাতেও অবাঞ্ছিত থাকলেন সে প্রশ্ন আবার কড়াদাগে চলে আসবে সামনে।
কিন্তু এসব বলে যে সত্য লুকোনো যাবে না তাহলো চেন্নাস্বামীতে হেরেছে বাংলাদেশ, জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। শ্বাসরুদ্ধকর জয়টির পর ভারত যেভাবে বিজয় উদযাপন করেছে তাও প্রমাণ করেছে ক্রিকেট শক্তি হিসাবে বাংলাদেশের গুরুত্ব।