সুপার টেনের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে এরই মধ্যে বিদায় অনেকটা নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। তবে কাগজ-কলমে এখনো সব আশা ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু বাস্তবে সেটা অনেকটা দূরে। তাই আজকের ম্যাচটিকে নকআউট ধরে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছেন মাশরাফিরা।
নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ হওয়ায় যেকোনো দলের জন্যই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত। তবে বাংলাদেশের এ কঠিন পরিস্থিতির বিপরীতে খুব একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই ভারতও। ‘গ্রুপ-২’ থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে বাকি দুই ম্যাচ জিততে হবে তাদেরও। শুধু জিতলেই হবে না, থাকতে হবে রান রেটের হিসেবও।
পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে এমনিতেই পয়েন্ট তালিকার তলানিতে বাংলাদেশ। পাশাপাশি পেসার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি ইস্যুতেও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে নেই মাশরাফিরা।
তবে কিছুদিন ধরে দলের মনোযোগে যে বিপর্যয় ঘটে গেছে, গোছানো একটি দলকে দেখতে হয়েছে কদর্য, নিষ্ঠুর দৃশ্য। তা থেকে গা-ঝাড়া দিয়ে তাই ধোনিদের সামনে আগের সেই রুদ্ররূপেই মাঠে নামতে যাচ্ছে টাইগাররা। এশিয়া কাপ ফাইনালের চাপা যন্ত্রণা, তাসকিনদের হারানোর ক্ষোভ, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে হারের কষ্ট সবকিছু দূরে ঠেলে চেন্নাস্বামীতে সর্বস্ব দিয়ে মাঠে নামার পণ করেছেন মাশরাফিরা।
অন্যদিকে নাগপুরে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল ভারত। ইডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া জয় পেয়েছে তারা। আজকের ম্যাচটি স্বাগতিকদের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ ম্যাচে জয় পেলে শেষ চারের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে তারা।
ভারতের বিপক্ষে আজ জিততে পারলে শেষ চারের আশা টিকে থাকবে বাংলাদেশেরও। পরের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। শেষ দুই ম্যাচে জয় তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রান রেটের হিসাব করতে হবে মাশরাফিদেরও। তাই শুধু জয় নয়, ব্যবধানও মাথায় রাখতে হবে তাদের। তার উপর ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম ভারতের মাটিতে ভারতের সঙ্গে মোকাবেলায় নামছে টাইগাররা।
তবে শেষ ১১ ম্যাচের ১০টিতে জয় নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করা ভারত এ মুহূর্তে ফর্মের তুঙ্গে। অন্যদিকে বড় আসরে বড় দলকে প্রায়ই হারানোর সুনাম থাকলেও টি২০তে বাংলাদেশের রেকর্ড তার বিপরীত। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামছে ভারত।
ধোনিদের দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপের কারণেই দুই দলের ব্যবধান স্পষ্ট। ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এ মুহূর্তে সেরা ফর্মে আছেন। তার অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংসে ভর দিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ জয় পেয়েছে ভারত। ওই ম্যাচে ২৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের পর আত্মবিশ্বাসী থাকবেন অভিজ্ঞ যুবরাজ সিংও।
তবে ব্যাটিংয়ে তাদের দুশ্চিন্তা থাকছে ওপেনার শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়নাকে নিয়ে। শেষ দুই ম্যাচে খুব একটা ছন্দে দেখা যায়নি তাদের। তাই আজকের ম্যাচে অজিঙ্কা রাহানের দলভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এছাড়া ব্যাঙ্গালুরুর স্পিনবান্ধব ট্র্যাকে হরভজন সিংকে দেখা গেলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
নিষেধাজ্ঞা আর অসুস্থতায় আক্রান্ত বাংলাদেশের পক্ষে নেই ইতিহাসও। টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল তারা। কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ছোট ফরমেটে এর পর আর জয় নেই টাইগারদের। নয় বছর পর আক্ষেপ ঘোচাতে সামনে মাত্র দুটি ম্যাচ রয়েছে টাইগারদের।
টি২০ ফরমেটের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের বিচারে এগিয়ে রয়েছে ভারত। এশিয়া কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন তারা। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে জিতেছে চারটিতেই। বাংলাদেশের জয় সেখানে দুটিতে।
দুই দলের ব্যাটিং শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকবে ভারতই। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে তাদের অনেক বিকল্পও রয়েছে। বিশেষ ওপেনিংয়ে শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার পর বিরাট কোহলি এদের যে কেউ যেকোনো সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
এর পর সুরেশ রায়না ও অধিনায়ক ধোনি তো রয়েছেনই। দারুণ ফর্মে রয়েছেন কোহলি। গত ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রায় একা হাতেই ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। আর আইপিএলে ব্যাঙ্গালুরু তার ঘরের মাঠ।
ব্যাঙ্গালুরু কন্ডিশন খুব বেশি পরিচিত না হলেও বর্তমান ক্রিকেট বিচারে কম যাবে না বাংলাদেশও। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের বড় শক্তি ওপেনার তামিম ইকবাল সুস্থ হয়ে ফিরলে শক্তি বাড়বে টাইগারদের। বাংলাদেশর ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর ব্যাটে ঝড় উঠলে প্রতিপক্ষ বিধ্বস্ত করতে পারেন সাব্বির রহমানও। আর গত দুই ম্যাচে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছেন দলের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দলে ফিরতে পারেন অবিশ্বাস্যভাবে গত ম্যাচে বাদ পড়া নাসির হোসেন।
মুখোমুখি সাক্ষাতে অবশ্য বেশ এগিয়ে ভারত। ওয়ানেডেত ৩২ সাক্ষাতে ২৬টিতে জিতেছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের জয় পাঁচটিতে। আর চারটি টি-২০ সাক্ষাতে অবশ্য সবকটিতেই জিতেছে ভারত। ২০০৯ বিশ্বকাপের প্রথম টি-২০ ম্যাচে ২৫ রানের হারের পর মিরপুরের ম্যাচে ৮ উইকেটে জেতে ভারত। এরপর এক মাসেরও কম সময় আগে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচে জয় পায় ভারত।
ব্যাঙ্গালুরুর পিচে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। গত রোববার একই গ্রুপের ম্যাচে এখানে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং সোমবার হয় বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে বলে টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে স্পিনারদের সঙ্গে পেসাররাও খারাপ করেননি। তবে স্বাগতিক হিসেবে ঘূর্ণি পিচ বানিয়ে সুবিধা নিতে পারে ভারত।
ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে টি২০’র সর্বোচ্চ স্কোর ১৫৭ রান। আগের ম্যাচেই বাংলাদেশের করা ১৫৬ রানের জবাবে এই রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে এই মাঠে আগে ব্যাট করে সর্বনিম্ন ১৩৪ রান করেও জয়ের রেকর্ড রয়েছে। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ১ রানে জিতেছিল পাকিস্তান। তৃতীয় সর্বােচ্চ ইনিংস ১২৭। যেটা গত রোববার শ্রীলঙ্কার করা ১২২ রানের জবাবে করেছিল ওয়েষ্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে এখনো কোনো বৃষ্টি বা ঝড়ের আভাস নেই। তবে প্রচন্ড গরম থাকতে পারে। ওয়েদার ডটকমের সূত্রানুযায়ী ব্যাঙ্গালুরুতে আজ তাপমাত্রা থাকবে ৩০ ডিগ্রির বেশি।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের চালানো জরিপে এই ম্যাচে ভারতের জয়ের সম্ভাবনেই বেশি। সেটা ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ৩৫ শতাংশ। তবে ক্রিকেট যেহেতু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, তাই সব প্রেডিকশনই উল্টে দিতে পারে মাশরাফিরা।
সম্ভাব্য বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা(অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল/মোহাম্মদ মিথুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম(উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, আবু হায়দার রনি, আল-আমিন হোসেন ও নাসির হোসেন।
সম্ভাব্য ভারত দল: মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, বিরাট কোহলি, আশিস নেহরা, হার্দিক পান্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, এবং জাসপ্রিত বুমরাহ।