কক্সবাজারে দখলে থাকা ঐতিহ্যবাহী স্কুল ‘ঝাউবন বিদ্যা নিকেতন’ থেকে কথিত রাজারবাগী পীরের আস্তানা উচ্ছেদ করে ১৪ বছর পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামের ওই স্কুলে পতাকা উত্তোলনের সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এসময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। দরিয়ানগর থেকে ১৪ বছর পর রাজারবাগীরা আস্তানা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রোববার ঝাউবন স্কুলে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড নির্মাণ করে গ্রামবাসী। সোমবার সকালে অতিথিদের সাথে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে সেখানে পতাকা উত্তোলন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল, সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবীর হিমু, কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়েস এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন, কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি এইচএম নজরুল, টেরিটোরিয়াল নিউজ এর চিফ রিপোর্টার আজিম নিহাদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক ও গবেষক আহমদ গিয়াস। আরো বক্তব্য রাখেন দরিয়ানগর বড়ছড়া যুবসমাজের সভাপতি মাহবুব আলম, সহ-সভাপতি আবু ফরহাদ বোখারী হিরু, সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা পারভেজ মোশাররফ, স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলম, কৃষক লীগ নেতা ইমাম হোসেন, শ্রমিক নেতা মো. রুবেল, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আজিজ প্রমূখ। এসময় এলাকার গণ্যমান্য মুরুব্বী ও বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশুগণ উপস্থিত ছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, রাজারবাগীরা স্কুলের দখল ছেড়ে দিয়ে রোববার দুপুরের আগেই তল্পিতল্পা নিয়ে সরে যায় তারা। প্রায় ১৪ বছর আগে এক একর আয়তনের জমিসহ এই ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি ও আরো একই পরিমাণ জমিসহ গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি জোরপূর্বক জবর দখল করে রাজারবাগ পীর দিল্লুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড তুলে দেয়া হয়েছিল। এনিয়ে গ্রামবাসীর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে জামে মসজিদ থেকে এবং গত রোববার স্কুল থেকে আস্তানা সরিয়ে নেয় রাজারবাগীরা।
নব্বই এর দশকের শুরুতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০০৭ সালে উন্নত ও বিনাবেতনে শিক্ষাদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্কুলটি দখল করে নিয়েছিল রাজারবাগীরা। এরপর স্কুলটি বন্ধ করে সেখানে কথিত মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলানো হলেও বাস্তবে সেখানে কেউ পড়ালেখার সুযোগ পেত না। জবর দখলমুক্ত হওয়ার পর স্কুলটি একই নামে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, কথিত ওই পীরের আস্তানা থেকে নানা অনিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো, যার শিকার শহরতলীর এই গ্রামের বহু মানুষ। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আস্তানা সরিয়ে নেয় রাজারবাগীরা।