সাগরে ভাসমান অবৈধ অভিবাসীদের নৌকাগুলো যেন আর কবরস্থানে পরিণত না হয় সেই আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ২০১৫ সালের প্রথম দিক থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের জীবন রক্ষার আন্দোলনে আছে এই সংস্থা।
ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ব্যুরোর পরিচালক ডেইসি ডেল কূটনৈতিক সব প্রচেষ্টার সঙ্গে মানুষের হৃদয়ে মানুষের কথা পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমেও আবেদন-নিবেদন চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ের সব থেকে ভয়াবহ এই সমস্যাটি নিয়ে সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে তার একটি আবেগঘন লেখা প্রকাশ হয়েছে।
শরণার্থীরা যেরকম অমানবিক অবস্থায়
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে ৪০০ শরণার্থীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে নৌকায় ওঠেছিলেন এক রোহিঙ্গা পুরুষ। ইউএনএইচসিআরের কাছে তিনি অমানবিক জীবনের হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন।
পাচারকারীরা শুধু একবেলা একচামচ ভাত ও ছোট এক কাপ পানি দিতো। কেউ এর থেকে বেশি খাবার চাইলে বা পাশের কারো সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে রড দিয়ে মারধর করতো দালালরা। এর মধ্যে তার সঙ্গে থাকা ২ জন শরণার্থী প্রহারের কারণে মারা গেছেন। আর একজন মারা গেছেন হতাশ হয়ে সাগরে ঝাপ দিয়ে।
বেঁচে যাওয়া এই শরণার্থী ইউএনএইচসিআরের ডেইসি ডেলকে বলেন, তীরে আসার সব আশা তারা ছেড়েই দিয়েছিলেন।
ইউএনএইচসিআর দলটি জানায়, গত বছর তারা এই ধরনের অনেক অমানবিক কাহিনী শুনেছেন। দলটি প্রায় ৫০০ শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যাদের বেশিরভাগই মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে সাগর পথে অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে যাচ্ছিলেন।
তারা সবাই মানবেতর দিন কাটিয়েছেন থাইল্যান্ডের শরণার্থী ক্যাম্পে। অপহৃতদের পরিবারের কাছ থেকে অন্ততঃ দুই হাজার ডলার মুক্তিপণ আদায় না করা পর্যন্ত তাদেরকে কাঠের খাঁচায় ঝুলিয়ে রাখা হতো।
ইউএনএইচসিআর থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কুয়ালামপুরের অফিসে আসা শতাধিক অভিবাসী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন এবং অনেকের শরীর অবশ হয়ে গেছে। তাদের ধারণা, এই বছর তিন শতাধিক শরণার্থী পুষ্টিহীনতায়, বিভিন্ন রোগে এবং দালালদের প্রহারে মারা গেছেন যাদের মৃতদেহ থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে কবর দিয়েছে পাচারকারীরা।
তারা আরো বলেন, প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে তিনজন এইভাবে ভয়াল নৌকায় ওঠেন যারা আর কোনো দিন সেই কবরে পরিণত হওয়া নৌকা থেকে নামতে পারেন না।
ইউএনএইচসিআর’র মতে করণীয়
অবৈধ অভিবাসীদের নৌকাগুলোর ক্রমাগত কবরে পরিণত হওয়া বন্ধ করতে ও সাগর পথে মানবপাচার রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে ইউএনএইচসিআর। তাদের মতে, বাংলাদেশী এবং মিয়ানমারে যেসব রোহিঙ্গা এরইমধ্যে যেসব দেশে কাজ করছেন তাদের সেসব দেশে বৈধভাবে থাকার অনুমতি দেয়া উচিৎ।
এছাড়াও থাইল্যান্ডের উচিৎ মানাবপাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি শরণার্থীদের অন্তত্ঃ সাময়িকভাবে থাকার ও কাজ করার অনুমতি দেয়া। এই অঞ্চলের দেশগুলোকে সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতেও বলেছে জাতিসংঘ সংস্থা।
এরমধ্যে দেশগুলো কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। ইউএনএইচসিআর বলেছে, প্রতিদিনই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সবাই পিছপা হচ্ছে যার ফলে নৌকাগুলো সাগরের বুকে পরিণত হচ্ছে ভাসমান কবরে।