করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সচল করতে বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা বা বৈধ করার সুযোগ থাকছে। এই সুযোগ রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটি ক্ষমতাসীন সরকারের চলতি মেয়াদের দ্বিতীয় এবং দেশের ৪৯তম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেট তুলে ধরার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, কেবল রাজস্ব আহরণই নয়, বরং করোনাভাইরাসজনিত চলমান সংকটের কারণে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এবং মানুষকে নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, করোনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দারও পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছর আমাদের অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে রাজস্বনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি এবং তা বজায় রাখার নিমিত্তে পর্যাপ্ত সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য একদিকে আমাদের অধিক পরিমাণে রাজস্ব জোগান দিতে হবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে হবে।
‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে করদাতার রিটার্ন দাখিলে অজ্ঞতার কারণে তাদের কিছু অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নের এই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ প্রদান এবং অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি আয়কর অধ্যাদেশে আয়কর প্রণোদনা সংক্রান্ত দুটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করছি।’
যেমন- দেশের প্রচলিত আইনে যা–ই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।
এ ছাড়া একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাগণ পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।
প্রস্তাবিত বিধানসমূহ কার্যকর হলে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ বাড়বে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং আয়কর রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।