জয়পুরহাটে এক ঘণ্টার প্রতীকী পুলিশ সুপার (এসপি) এর দায়িত্ব পেয়ে শহরের যৌন হয়রানি, কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের ঘোরাফেরার ৭ স্থানের নাম বলেছেন জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত মাহিরা।
বিদ্যালয় খোলার পর শিশুদের অনুপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানায় সে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞার কাছে থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) জয়পুরহাটের শিশু সাংবাদিক নুসরাত মাহিরা।
প্রতীকী দায়িত্ব নিয়েই জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলাকে নারীবান্ধব করতে ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়ে নুসরাত মাহিরা ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয়।
নুসরাত মাহিরা জানায়, জয়পুরহাট জেলায় নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়ে চলছে। নারী ও কিশোরী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আমি একজন মেয়ে হিসেবে এদেশের লাখ লাখ কিশোরীর মত স্বপ্ন দেখি একটি সুস্থ, নিরাপদ পরিবেশ এবং সুন্দর সমাজের।
একটি ধর্ষণমুক্ত, ইভটিজিংমুক্ত নারী ও শিশুবান্ধব জয়পুরহাট জেলা গড়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানায় মাহিরা।
সে জানায়, এক বছরে অসচেতনতা বা দরিদ্রতা দেখিয়ে জয়পুরহাটে ব্যাপক হারে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এনসিটিএফের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিদ্যালয় খোলার পর শিশুদের অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসনসহ বিভিন্ন এনজিও কয়েক বছর ধরে তৎপর তবুও রোধ করা সম্ভব হয়নি।
নুসরাত মাহিরা আরও জানায়, দেশব্যাপী যৌন হয়রানি নারী- শিশুদের ভোগান্তির অন্যতম একটি কারণ। জয়পুরহাটেরও প্রতিটি অলিগলি, রাস্তাঘাটে, বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তাগুলোতে যৌন হয়রানির প্রভাব রয়েই গেছে। যৌন হয়রানিতে দেখা গেছে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে থেকে এলাকার কিশোর গ্যাংরা জড়িত। বখাটে ছেলেরাও ঘুরাফেরা করে।
‘যৌন হয়রানি, কিশোর গ্যাং ও বখাটেদের উৎপাত হাজী মাদরাসা রোড, বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ও পেছনের অলিগলি, জয়পুরহাট সদর থানা স্কুলের দুটি গলি, নতুন হাট, রেল স্টেশনের সামনে, বদরউদ্দিন রোড, বকুল ছাত্রীনিবাসের নাম বেশি শোনা গেছে’, জানায় মাহিরা।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা এনসিটিএফ’র সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, নারীদের বাদ দিয়ে কোন সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের নিয়েই আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অসীম ক্ষমতার অধিকারী নারী। যে সব রাষ্ট্র নারীর ক্ষমতায়ন দিয়েছে তারাই এগিয়ে গেছে। তাই নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন না দিলে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে না।
এসময় তিনি আরও বলেন, সমাজ ব্যবস্থাকে ভালো রাখতে হলে পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জন করতে পারলেই আমরা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে বসবাস করছি। এখানে আমরা কেউ মনে করি না যে আমার পাশের বাড়ির লোকটা হিন্দু না মুসলমান। আমরা মনে করি তিনি আমার প্রতিবেশী। এ রকম পরিবেশে আমরা বেড়ে উঠেছি। এইটাকে তোমাদের জাগ্রত করতে হবে।
এক ঘণ্টার পুলিশ সুপার নুসরাত মাহিরা দায়িত্ব শেষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা।
এনসিটিএফ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অন্যায়ের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম (অপরাধ ও প্রশাসন), এনিসিটিএফের জেলা উপদেষ্টা তিতাস মোস্তফা, জেলা ভলান্টিয়ার তৃষা রানী, সালেহুর রহমান সজীব, জেলা কমিটির সভাপতি কেএম সাজিন, সম্পাদক লেফতাকুল মদিনা, শিশুগবেষক ফারহানা আফরিন সাথী সহ অন্যরা।