পর্যটন নগরী কক্সবাজার তার বিশাল সমুদ্র সৈকতের জন্য মানুষের কাছে আকর্ষণীয় একটি শহর। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে কক্সবাজার সর্বদা নিজের স্থান উঁচুতে ধরে রেখেছে। কিন্তু গতকাল একটি ন্যাক্কারজনক এবং গর্হিত ঘটনার শিকার হয়েছেন এক নারী পর্যটক। এই ঘটনা অতি জঘন্যতর একটি লজ্জাকর ঘটনা। এই লজ্জার শেষ নাই।
চ্যানেল আই অনলাইনের এক সংবাদে জানা যায়: কক্সবাজার বেড়াতে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ পর্যটক। স্বামী সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। বুধবার রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের রিসোর্ট থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। আর তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে।
ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটক জানান: ২২ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে এসে শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন। পরে বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এসময় এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে ভুক্তভোগী নারীর ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে অটোরিকশায় কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় ৩ যুবক। পরে পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে ধর্ষণের শিকার হন। জিম্মি করা সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলে ভয় দেখিয়ে নারী পর্যটককে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে আরেক দফা ধর্ষণ করা হয়। ঘটনা কাউকে না জানানো হুমকি দিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ধর্ষকরা। পরে ভুক্তভোগী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। এরপরে র্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন: এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। মামলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন: সংবাদ পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করি। এখন পর্যন্ত তিনজন ধর্ষক ও দুবৃর্ত্তদের মধ্যে দু’জনকে শনাক্ত করেছি। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
এরকম একটি জানোয়ারসুলভ আচরণের জন্য আমরা স্তম্ভিত হয়েছি। একটি পর্যটক শহরে যদি কোনো পর্যটকের ন্যূনতম নিরাপত্তা না থাকে তাহলে নারীরা কোথায় যাবে? শহরে বন্দরে নগরে সর্বত্র নারীরা এই দেশে অনিরাপদ। পদে পদে তাদের বিপদ ওঁৎ পেতে থাকে। তার মধ্যে বেড়াতে গেলেও নিস্তার পাচ্ছে না নারীরা। তাহলে দেশের পুলিশ পর্যটন কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ কী? দেশের একজন নাগরিক যদি সামান্য আনন্দের জন্য বেড়াতে গেলেও ধর্ষণের মত পাশবিকতার শিকার হয় তবে তো সব কিছু অর্থহীন। পর্যটক পুলিশ বা অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীদের কী কাজ? আমরা মনে করি এই ঘটনায় যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এটি হবে আমাদের জন্য জাতীয় লজ্জার বিষয়। আর শহর কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই ঘটনার জন্য দায়ী নরপশুদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া। আমরা মনে করি এই ঘটনার কঠোরতম শাস্তি না হলে পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজার তার গৌরব হারাবে। এবং হারাবে হাজারও পর্যটক। সরকারে সম্ভাবনাময় একটি অন্যতম আয়ের উৎস নষ্ট হওয়ার জন্য সবাই দায়ী থাকবে। যেখানে নারী পুরুষের নিরাপত্তা থাকবে না সেখানে কেউ যাবে না। আর পর্যটক না গেলে পরিত্যাক্ত শহর হিসেবে ইতিহাসের ফসিল হয়ে যাবে কক্সবাজার।
সুতরাং আমরা মনে করি প্রশাসনকে এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ তৈরি করতে হবে। নচেৎ মানুষ হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় নিজেদের পরিচয় দিতে পারব না। আর এই লজ্জা শুধু একটি শহরের নয়। এই গ্লাণি মানুষ হিসেবে আমাদের প্রতিটি নাগরিকের।