টেলিভিশনে সাবানের একটি বিজ্ঞাপনে বলতে শোনা যায় ‘লেখাপড়া শিখেছ বলে কী স্বামীকে শিখাবে।’ এই কথায় মধ্যযুগীয় চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে। অপর কণ্ঠ বলে উঠে ‘জামা কাপড় আর চিন্তা ভাবনা দুটো থেকেই পুরনো ময়লা দূর করতে হবে।’ আহা, কতই না মূল্যবান কথা! সত্যিই,আমাদের মনে অর্থাৎ সমাজে পুরনো চিন্তা ভাবনা স্তুপ হয়ে আছে। সমাজ এখনও অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে আরব সমাজে কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো, যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি জঘন্য কাজ বলে আখ্যায়িত। মানুষ এখনও সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। কেবল ধরণ পাল্টেছে। আমাদের বর্তমান সমাজে আছে মানুষরূপী অমানুষ, এরা সুযোগ পেলে কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করে। যে প্রকারেই হোক নারীর প্রতি পাশবিকতা একটি সামাজিক ব্যাধি।
এই ব্যাধিগ্রস্ত প্রাণীগুলোকে চিহ্নিত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সচেতন নাগরিকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বাল্যবিবাহও সামাজিক ব্যাধির পর্যায়ে পড়ে। করোনা দুর্যোগের সময় দেশে সাড়ে সাত হাজার বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে। বাল্যবিবাহ জীবন্ত কবর দেয়ারই সামিল। কেননা, এটিও এক প্রকার ধর্ষণ। যেখানে অভিভাবকের সমর্থন থাকে। সমাজের আষ্টেপৃষ্ঠে গেঁথে আছে নারীর প্রতি সহিংসতা। দেশের আনাচে কানাচে নারীরা নানান অজুহাতে নির্যাতিত। নারী শিক্ষার পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া দেড়শ বছর আগে ঘুমন্ত নারীকে জাগ্রত করতে চেয়েছেন। সময়ের দাবিতে তিনি যথাসাধ্য সফলও হয়েছেন। তবে পুরুষ শাসিত সমাজে নারীকে আরও সোচ্চার হতে হবে। প্রতিটা নারীকে মেরুদণ্ড সোজা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে শেখ হাসিনার মতো একজন প্রধানমন্ত্রী আমরা পেয়েছি। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করেছেন। এই বিষয়টিও নারীর জন্য শিক্ষণীয়। যেমন নারীরা বাবা, ভাই, স্বামীর উপার্জনের দিকে নির্ভর না করে নিজে উপার্জনের চেষ্টা করা দরকার। পুরুষ শাসিত সমাজ থেকে বেরিয়ে আসতে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। দেশ যেভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে চিন্তা চেতনায় আমরা ততটাই পিছিয়ে আছি। শুধু সার্টিফিকেট আর অর্থ উপার্জনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া অনাবশ্যক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শপথ বাণী পাঠ করানো হয় তা অক্ষরে অক্ষরে বোধগম্য করাতে হবে প্রতিটা শিক্ষার্থীকে। প্রাথমিকে পাঠ্য বইয়ে যেমন পড়ানো হয় ‘সব পেশাই সমান মূল্যবান।’ ঠিক তেমনই সব পেশার জন্যই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত নিয়োগ দান করা জরুরি। দরকার সকল প্রকার বৈষম্য পরিহার করা ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির অগ্রপথে। কর্ণফুলী টানেল আর মেট্রোরেলের প্রতিক্ষার দিন প্রায় নিকটে। করোনাভাইরাস মহামারিতে গোটা বিশ্ব যখন চরম অনিশ্চয়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন দেশবাসীকে সাহস দিয়েছেন। কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থাসহ দেশের সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক সচলসহ নানা কর্ম দক্ষতায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করে দেশের গৌরব বয়ে এনেছেন। ২০২১ সালের জাতিসংঘ সম্মেলনে শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন (এসজিডি)পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন। যা তিনি দেশের জনগণের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। জাতিসংঘের আঙ্গিনায় তিনি একটি বৃক্ষ রোপণ করেছেন। যা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। সরকারি চাকরিতে যথেষ্ট সংখ্যক নিয়োগ দানের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশে দূরীকরণ হতে চলেছে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে শিক্ষা ও বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আরও সম্ভাবনা ভবিষ্যতে। পঞ্চাশের বাংলাদেশ অতীতের ৪০ বছর যা পায় নি এই ১০/১২ বছরে হয়েছে অনেক পাওয়া, অনেক সম্ভাবনা । এতো কিছুর পরও আমাদের মনের মাঝে আছে আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা , অলসতা। এইসব নেতিবাচক মানসিকতা পরিহার করে তৈরি করত হবে নতুন সমাজ। এর জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার প্রয়োজন। প্রয়োজন সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। শিক্ষক যেহেতু মানুষ গড়ার কারিগর সেহেতু শিক্ষকের মানসিক পরিবর্তনের দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষককে গুরু গম্ভীর হয়ে শিক্ষার্থীর প্রতি যা খুশি তা আচরণ করলেই হবে না। সুশিক্ষা দানের জন্য শিক্ষককে হতে হবে সহনশীল, স্নেহ পরায়ণ। মনে রাখতে মা বাবার চাইতে ছেলে মেয়েদের প্রতি শিক্ষকের দায়িত্ব কর্তব্য কোনও অংশে কম নয়। আর প্রত্যেকই যদি নিজ নিজ পেশায় নিষ্ঠাবান হই তবেই দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)