চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ইতিহাস গড়া বোলিংয়ের পর উইকেটের প্রশংসা

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম বোলার হিসেবে ইনিংসে ৮ উইকেট শিকারি ইয়াসির আরাফাত মিশু ম্যাচ শেষে ফতুল্লার উইকেটকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সে খেলা ১৯ বর্ষী ডানহাতি পেসার মনে করেন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এমন উইকেটে নিয়মিত পাওয়া গেলে লিগের মান বাড়বে।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে ইয়াসির বললেন, ‘উইকেটে কিছুটা ঘাস ছিল। এই সুবিধাটা কাজে লাগিয়েছি। সামনে বল করে ব্যাটসম্যানকে ড্রাইভ খেলিয়েছি। যে বলগুলো পেছনে করেছি, সেগুলো ভাল হয়নি। সামনে খেলাতে চেষ্টা করেছি। ব্যাটসম্যান ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্লিপে, গালিতে ও উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়েছে। এমন উইকেট যদি আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে পাই, পেস বোলাররা সবসময় রাজত্ব করবে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আরও উন্নত হবে।’

বুধবার ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আরাফাত একাই ধসিয়ে দেন আবাহনীর তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন। ৮.১ ওভার বল করে ৪০ রান খরচায় ৮ উইকেট নিলে ২৬.১ ওভারে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় আবাহনী। জবাবে ২৯.১ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে গাজী।

ইয়াসির এদিন ৮ উইকেট পাওয়ায় লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসে ১১তম আর সেরা বোলিংয়ে বিশ্বের অষ্টম স্থানে উঠে এসেছেন। সেরা বোলিং ভারতের রাহুল সাংভীর। দিল্লির হয়ে হিমাচল প্রদেশের বিপক্ষে ১৫ রানে ৮ উইকেট শিকার করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। আট উইকেট শিকারি বোলারদের মধ্যে চামিন্দা ভাস, মাইকেল হোল্ডিং, শন টেইটের মতো বিখ্যাত খেলোয়াড় রয়েছেন। রথী-মহারথীর পাশে নাম উঠে যাওয়া উচ্ছ্বসিত চট্টগ্রামের এই তরুণ। জানালেন এতটা আশা করেননি।

‘বোলিং ভাল হচ্ছিল। উইকেট পাচ্ছিলাম। আট উইকেট পেয়ে যাবো ভাবিনি। যখন ৬টা পেলাম মনে হল শেষের উইকেটগুলো নেয়া যায় কিনা, হয়ে গেছে। ভাল লাগছে, এটা আমার অনেক বড় অর্জন।’

ম্যাচটিতে বল হাতে ইনিংসের সূচনা করেন ইয়াসির। প্রথম ওভারে দেন ৫ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকান বিজয়। তখন কে জানত সামনে কত ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আবাহনীর জন্য। বিজয় সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক বদলানোর পরই মড়ক লাগে। সাইফ হাসান প্রথম বল মোকাবেলা করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নাঈম হাসানের হাতে।

নাজমুল হোসেন শান্ত নেমে প্রথম বলটি ডট খেলেন। পরের বলে নাঈমের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ওই ওভারে দুই উইকেট নেয়া ইয়াসির আর থামেননি। পরের ওভারে নাসির হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনকে সাজঘরে পাঠান। নিজের সপ্তম ওভারে নেন তিন উইকেট। আর নবম ওভারে আবাহনীর শেষ ব্যাটসম্যান মানান শর্মাকে সাজঘরে পাঠিয়ে ইতিহাসের অংশ হন।

আট উইকেটের মধ্যে কোন উইকেটটি এগিয়ে রাখবেন? উত্তরে তিনটি নাম উঠে এসে আরাফাতের কণ্ঠে। শান্ত, নাসির, মিঠুন। পরে অবশ্য যোগ করলেন মাশরাফীর নামও। ইয়াসির বলেন, মাশরাফী ভাইয়ের উইকেটটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সে জুটি গড়ে ফেলেছিল। তাকে ফেরানোর পরই টানা উইকেট পেয়ে গেছি। আবাহনীর সব ক্রিকেটারই অনেক বড় মাপের। তারা সবাই জাতীয় দলে খেলেছেন। প্রত্যেকটা উইকেটই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইনজুরির কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে নিউজিল্যান্ড যেতে পারেননি আরাফাত। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ছিলেন দুমাস। বল হাতে সেভাবে অনুশীলনও করতে পারেননি। চম্পকা রামানায়েকের (একাডেমি কোচ) অধীনে দুই সপ্তাহ কাজ করেছিলেন। সেটি যে কাজে দিচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমেই করলেন বাজিমাত। ক্যারিয়ারের তৃতীয় আর চলতি লিগে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই করে ফেললেন ইতিহাস।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ওয়ানডে লিগে ৮ উইকেট শিকারের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটনা এটি। গত বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে আট উইকেট শিকার করেছিলেন অনিল বাবু। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমির প্রথম আট ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান ওল্ড ডিওএইচএসের এই বাঁহাতি পেসার। ৮ উইকেট নিতে টানা ১০ ওভার বোলিং করে ৩০ রান খরচ করেন। আট উইকেটে নেয়া প্রথম বোলার আলাউদ্দিন বাবু।