ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
তবে সকল জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় ও দেশীয় সংস্কৃতির আবহে পালন করা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর যে নির্দেশনা ছিল, তা বহাল রাখা হয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুলের অধ্যক্ষের করা লিভটু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করে রোববার এই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এই রিটের শুনানি নিয়ে এবিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে অভিভাবকদের করা আরেক রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। পরবর্তীতে দুটি রুলের একসঙ্গে চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সাথে এ ধরনের স্কুল পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জাতীয় দিবস পালন, দেশীয় সংস্কৃতিসহ বাংলাকে গুরুত্ব দিতে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়:-
* বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে।
* অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ওই অভিভাবক প্রতিনিধির বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
* ‘পেছনের দরোজা দিয়ে’ শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ করতে হবে। তাতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না।
* এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি’র নামে কোনো ‘ফি’ আদায় করা যাবে না।
* ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে ম্যানেজিং কমিটি। তাতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে।
* ইংরেজি মাধ্যমের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রত্যেক অভিভাবককে ওই রিপোর্ট সরবরাহ করতে হবে।
* প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে হবে।
* জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
* প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখন যেভাবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে তার চেয়ে আরও ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার চর্চা করাতে হবে। যাতে তারা শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল করেন গুলশান-২ অবস্থিত গ্রিন ডেল ইন্টারনেশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ।