সারি করে বসা শিশুর দল। সকলের পরণে সাদা পোশাক। পেছনের মঞ্চে অগ্রজরা বসে। তানপুরা, তবলা, খোল আর হারমোনিয়াম প্রস্তুত মঞ্চ। চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় ছোট বড়দের ভীড়। ‘মা মা বলে ডাকো/ মাতৃভাষার সঙ্গে থাকো’- আহির ভৈরব রাগে শুরু হয় সন্ধ্যা। ভোরের রাগ কেন সন্ধ্যায়? প্রশ্নটি স্বাভাবিক। উৎসবের অন্যতম আয়োজক, বাংলা খেয়াল স্রষ্টা, সংগীতজ্ঞ ও ‘সংস্কৃতি কেন্দ্র’র চেয়ারম্যান আজাদ রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমি এটা বুঝেই করেছি। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্ব দেখছে। এখানে যখন সন্ধ্যা পৃথিবীর অন্যখানে ভোর।
২২ মিনিটের সূচনায় রাগ ব্যবহৃত হয়েছে মালকোষ, আড়ানা, মিঞাটরি সহমোট ১০টি। সবগুলো খেয়াল সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমানের লেখা ও সুর করা। কখনও লিখেছেন ‘ভাষাতেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব/ জাতীয় স্বত্বা ভাষায় প্রকাশিত। আজাদ রহমান বলেন, আমি নির্দিষ্ট কোন ভাষাকে বোঝাতে চাইনি। গরিষ্ঠ বা ক্ষুদ্রজাতিস্বত্বা সবার ভাষাকে বুঝিয়েছি।’ আবার তিনি লিখেছেন, ‘আপন ভাষায় আপন গান/ গাইরে সবাই জুড়াই প্রাণ।’ লিখেছেন, ‘সবার হোক কল্যাণ/ এসো গাই শান্তির গান’। খেয়ালের ভাঁজে ভাঁজে সারগামের নানা কারুকার্যময় চলাচল উৎসবের সূচনাকে উদ্ভাসিত করে।
নিজের সৃষ্ট রাগ পদ্মাও ব্যবহার করেছেন উৎসবের সূচনা পর্বে। স্বাধীনতার পরপরই এ রাগের সৃষ্টি করেন তিনি। কেবল যে খেয়াল ছিল তা নয়। ছিল ধ্রুপদ এবং ধামারও। তবু উৎসবের নাম খেয়াল উৎসব। ব্যাখ্যায় ‘মনেরও রঙ্গে রাঙ্গানো’ গানের সুরকার বলেন, অনেকে আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে খেয়াল উৎসব চলবেনা। চলেনা। আমি তাদের খেয়াল করিয়ে দিতে চেয়েছি বাংগালির স্বাভাবিকতাতে খেয়াল বা ধ্রুপদ রয়েছে। দ্বিমাত্রিকতার জায়গা ধরতে খেয়াল উৎসব বলছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগে যে খেয়াল মানুষ শুনত না, চ্যানেল আই এর কল্যাণে গত তিন বছর উৎসবের কারণে অনেক নবীন শিল্পীরা খেয়ালে আগ্রহী হচ্ছেন। বাংলা খেয়ালের বিকাশে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বাংলা খেয়াল শুধু বাংলা শব্দ নয়, বাংলা দর্শন ধারন করে’।
সংস্কৃতি কেন্দ্র’র সচিব সেলিনা আজাদ বলেন, চ্যানেল আইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন আয়োজনের জন্য। ভবিষ্যতে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করি’।
তার আগে বিকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। এ উৎসব চলবে রাত জুড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত। পুরো উৎসব স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করছে চ্যানেল আই। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগসহ আরও ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবে। এ বছর ২০০ জন নবীন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এ বছর ২০০ জন নবীন
এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘প্রতি বছর উৎসব আরও উন্নত হচ্ছে। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগসহ আরও ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন এ উৎসবে। শুদ্ধ সংগীত বিকাশে উচ্চাঙ্গ সংগীত ও খেয়াল কাজ করে যাচ্ছে। এটি সংগীতের এমন শাখা যার সাথে সাধারণ দর্শকের সরাসরি সম্পৃক্ততা অনেক কম। চ্যানেল আই সেই সম্পৃক্ততা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বাংলা খেয়াল নিয়ে উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে’।
খেয়াল উৎসবে অংশ নিচ্ছেন সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান, ড. নাশিদ কামাল, ড. লিনা তাপসী খান, ফেরদৌস আরা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, হারুনুর রশীদ, প্রিয়াঙ্কা গোপ, আলিফ, গাজী আব্দুল হাকিম, ফিরোজ খান, লিত্ত জে বাড়ৈ প্রমুখ।
‘বাংলা খেয়াল উৎসব ২০১৮’ উপস্থাপনা করছেন দিলরুবা সাথী ও মৌসুমী বড়ুয়া। প্রযোজনায় রয়েছেন অনন্যা রুমা।
ছবি: এস এম নাসির