চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আসুন বেছে বেছে ‘স্ত্রী মশা’কেই মারি

ভাগ্যিস মশাদের ফেসবুক নেই। অথবা থাকলেও সেখানে কোনো মানুষ নেই। না হলে গত কয়দিনে ফেসবুকে মশাদের নিয়ে যা লেখা হচ্ছে তা দেখে মশাদের রিয়্যাক্ট হতো দেখার মতো। এক বড়ভাই মশাদের নিয়ে গণহারে পোস্ট দেওয়া দেখে বিরক্ত হয়ে বলল, কয়েকদিনে মশা নিয়ে যতগুলো পোস্ট দেওয়া হয়েছে দেশে ততগুলো মশাও নেই।

এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। দেশে মশা বেশি না মশা নিয়ে স্ট্যাটাস বেশি? মশা বেশি হলে আমরা যেমন ফেসবুকে পোস্ট দেই; পোস্ট বেশি হলে মশারা কী করে? মশারা কি মশাদের মেয়রের কাছে অভিযোগ করে? ‘মানুষের জ্বালায় আর চলতে পারছি না। সকাল বিকাল পোস্ট দিয়ে বড্ড জ্বালাচ্ছে।’

দেশে মশা বেশি না মশা নিয়ে পোস্ট বেশি? এই প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরছে তখন একজনের ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়লো। তিনি লিখেছেন, ‘মনে হয় খালই ভরা মশা নিয়ে ঘরে ঢুকছি।’

লাল টি-শার্ট পরা এমপি জগলুল হায়দার। মশা নিধনে খালে নেমেছেন।

একজন ফেসবুকে লিখেছেন, মশার কারণে টয়লেট অভ্যাস বদলে যাচ্ছে। এই পোস্ট দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন বলতে পারবো না। মশা মারা নিয়ে ব্যস্ত আছি।’

মশা শুধু আমাদের ক্ষতি করছে এমনটা ভাবার সুযোগ কম। এক ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখে সেটাই মনে হলো। তিনি লিখেছেন, ‘সকাল থেকে রাত শুধু হিটই করে যাচ্ছি। বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ফেইল।’

এভাবে মশা বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য কষ্ট করে খেলোয়াড় খুঁজতে হবে না। ইলেকট্রিক ব্যাট চালাতে চালাতে ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন ব্যাট চালানো দক্ষতা অর্জন হবে সবার। মশা ধরে ধরে দক্ষ হবে ক্যাচ ধরারও।

মশারা নাকি অ্যারোসল ছিটালে এয়ার ফ্রেশনার মনে করে নতুন উদ্যমে কামড়াতে থাকে। ফলে ইলেকট্রিক ব্যাট ছাড়া উপায় নাই।

ভাবছেন, কয়েল জ্বালালেই হিসাব চুকে যায়? ভুল ভাবছেন। কারণ এখনকার মশারা সম্ভব অক্সিজেন মাস্ক আবিষ্কার করে ফেলেছে। তারা মাস্ক পরে উড়ে উড়ে রক্ত খায়। উড়তে উড়তে হাঁপিয়ে উঠলে জ্বলন্ত কয়েলের উপর বসে জিরিয়েও নেয়।

মশাদের জ্বলন্ত কয়েলের উপর বসে থাকা দেখে  একজন মন্তব্য করেছেন, বিশ্বাস তো কবেই উঠে গেছে; যেদিন দেখলাম কয়েলের উপর মশা বসে আছে।

মশাকে কোনোভাবে দমন করতে না পেরে ধরে ধরে খাওয়া শুরু করেছিল একজন। তিনি পরবর্তীকালে ডিসকভারি চ্যানেলে ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ নামে একটা অনুষ্ঠান করতেন। ঠিক ধরেছেন। তিনিই পোকা মাকড় খাওয়া বিখ্যাত বিয়ার গিলস।

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে সাতক্ষীরার এমপি জগলুল হায়দার নিজেই নেমে পড়েছেন খাদে। কচুরি পানা তুলে মশার জন্মই বন্ধ করে দিচ্ছেন তিনি। এই ছবি দেখে এক সহকর্মী টিটকারি মেরে বলল, সারাজীবন শুনেছি অমুক এমপি খাদের কিনারায়। আজ দেখলাম মশা এমপিকে খাদেই নামিয়ে দিল।

মশা মারতে ডিসিসির কামান দাগানো।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অবশ্য মশা মারতে সত্যি সত্যিই কামান দাগানো শুরু করেছে। এক ছবিতে দেখলাম উত্তরায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় খোলা জিপের দুই পাশে মেশিন গানের মতো অস্ত্র থেকে ধোঁয়া ছাড়া হচ্ছে। হলিউড সিনেমায় যেমনটা দেখে থাকি আমরা।

ছবি দেখে আরেক সহকর্মী বলল, ২০১৮ সালে এসে সুলতানি আমলের কামানে কাজ হবে? এখন মশা মারতে চাইলে মিসাইল দাগাতে হবে।

ইংলিশ মিডিয়ামের এক পিচ্চি অবশ্য মশা মারার বিরুদ্ধে। সে বলেছে, মশাতো শুধু একটু রক্তই খায়। আর আমরা যে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সব খাই। কই এতসব খাওয়ার জন্য আমাদের তো কেউ মারে না?
সে শুধু মশা হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। মারে না।

মশা মারা নিয়ে কথা উঠতেই একটা কথা মনে পড়লো। আমরা সবাই জানি, প্রাণীর রক্ত খায় শুধু মাত্র স্ত্রী মশা। পুরুষ মশার খাদ্য ঘাস। তাহলে আমরা যখন মারছি নারী পুরুষ নির্বিচারে মশা মারছি। যা মশাধিকার আইনের পরিপন্থী। এ ক্ষেত্রে আমরা বেছে বেছে স্ত্রী মশাকেই শুধু মারতে পারি। কী দরকার নিরামিষভোজী মশাদের মেরে হাত রক্তাক্ত করার?