আমি নিজেকে
যেভাবে দেখি, সমাজ ও সারা বিশ্বের চোখে আসলে আমি সেটা নই। আমি সেই নিরীহ
মেয়েটি নই যার দ্বারা এই পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবার নয়।
বোস্টন ম্যারাথনের
বোমা হামলা থেকে শুরু করে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী যুবকের বোমা হামলার
পরিকল্পনা, এইসব সহিংসতার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়েন, দৃশ্যতঃ আমি সেইসব
সন্ত্রাসীদের সন্তান।
সারা বিশ্বেই এরকম গৎবাঁধা বিশ্বাসের হাতে আমাকে
বিচার করা হচ্ছে এবং ভুল বোঝানো হচ্ছে আমার ধর্ম
সম্পর্কে।
আমি মুসলিম এবং মুসলিম হবার অর্থ কী, সে
ব্যাপারে অন্য সবার কী ধারণা সেটার কারণে আমার পরিচয় আমি লুকাবো না। কিছু
মানুষের কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ড যেগুলো তাদের ধর্মকে অবমাননা করেছে, তার মানে
এই নয় যে ধর্ম এসবের জন্য দায়ী।
মুসলিমদের যেভাবে
উপস্থাপন করা হয় সেজন্য সামাজিক মাধ্যমের একটি ব্ড় ভূমিকা রয়েছে। বলা হয়
যে মুসলিমরা দেশে ভীতি ছড়াচ্ছে, কিন্তু আসলে ঘটনা তা নয়। সত্যিকার অর্থে
এজন্য দায়ী সেই ব্যক্তি যে ভুল পথ বেছে নিয়েছে।
গৎবাঁধা
বিশ্বাস একবার আমাকে প্রচন্ড আঘাত করেছিলো। রাত ১২টার দিকে আমি, আমার বোন ও
বন্ধুর সাথে মসজিদ থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। আমরা হাঁটছিলাম এবং আমরা
হিজাব পরেছিলাম। আমার বাসার গ্যারেজের কাছে আসা মাত্র লক্ষ করলাম যে দুইজন
লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এবং কানে কানে কীসব কথা
বলছে।
আমি ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসা করলাম যে তারা আমাদেরকে
কিছু বলতে চায় কি না। তারা জবাবে হাসতে হাসতে বললো, ‘বিপদ! বিপদ! এরা
মুসলিম!’
প্রথমে খুব ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলাম এবং এক দৃষ্টিতে
তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। যখন তারা হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিলো, আমি রেগে
ঘুরে দাঁড়ালাম এবং চিৎকার করে বললাম, ‘আমরা তোমাদের পেছনে আসা পর্যন্ত
অপেক্ষা করো। তোমরা আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না।’’
আমি আবার
ঘুরে দাঁড়িয়ে রাগের চোটে জোরে জোরে হাঁটতে থাকলাম। আমি যা করেছিলাম তার
জন্য এখন আমার খারাপ লাগে। তারপরও অন্য মানুষের কর্মকান্ড থেকে গৎবাঁধা ধারণা
নিয়ে আমাদের সাথে যে আচরণ তারা করেছিলো, এটা তাদের প্রাপ্য ছিলো। তারা
আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক যে আচরণ করেছিলো সেটা কোনো কারণ ছাড়াই।
আমি মুসলিম এবং বাংলাদেশী। আমার এই দুই বৈশিষ্ট্য
থাকার অর্থ এই নয় যে আমি সন্ত্রাসী বা এমন কেউ যারা সমাজের ক্ষতি
করে।
কারো একজনের অপরাধের জন্য গোটা সম্প্রদায়ের মানুষ
দায়ী হতে পারে না। সেভাবে তাদেরকে চিহ্নিতও করা উচিৎ নয়। মানুষের উচিৎ
অনুমান করা বন্ধ করা এবং গৎবাঁধা ধারণা থেকে বেরিয়ে
আসা।
বিশেষ করে গৎবাঁধা ধারণায় ততোক্ষণ বিশ্বাস করা ঠিক
নয় যতোক্ষণ না সেই মানুষটির সাক্ষাৎ আপনি পাচ্ছেন এবং তার সম্পর্কে নিজে
জানতে পারছেন।
(বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সুমাইয়া মাহী
ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস এর অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। একটি কোর্সের অংশ
হিসেবে তার লেখা নিবন্ধটি পাবলিক রেডিও ইন্টারন্যাশনাল (পিআরআই)-এর ওয়েবসাইটে জায়গা
করে নেয়। অনুবাদ করেছেন মো: জাহিদুল করিম।)