রাসেল ক্রো। হলিউডের তারকা অভিনেতাদের মধ্যে তিনি একজন। সাধারণ অভিনেতা হিসেবে তার পরিচিত থাকরেও তিনি একাধারে সিনেমা প্রযোজক ও মিউজিশিয়ান। ২০০০ সালে রিডলি স্কটের ঐতিহাসিক ছবি ‘গ্লাডিয়েটর’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। যার কারণে তিনি সে বছরে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারও অর্জন করেছিলেন। তবে শুধু গ্লাডিয়েটর ছবির জন্য নয়, বরং তিনি দ্য ইনসাইডার, অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড, থ্রি টেন টু জুমা, উইন্টার’স টেল ছবির মতো বিখ্যাত ছবিগুলোর জন্যও সারা বিশ্বের সিনেপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয়। সম্প্রতি এই অভিনেতার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে সাক্ষাৎকার পৃথিবী বিখ্যাত অনলাইন পোর্টাল ‘দ্য টকস’। যেখানে বেশীর ভাগ জুড়েই তিনি ব্যক্তিগত জীবন, সংসার, যাপন নিয়ে কথা বলেছেন। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন সারারা মুশাররাত তূর্ণা-
আপনার সবচেয়ে বড় খুঁত কোনটি?
আমি ধূমপায়ী! মদ্যপানের অভ্যাস থাকলেও সেটা দৈনন্দিন নয়। অবশ্য, ধূমপানকে ঠিক জীবনের খুঁত বলা যায় কিনা তা বলতে পারছি না। অন্য কোন শব্দ দিয়ে বরং এটাকে ব্যাখ্যা করা যায়।
কখনও ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন?
আমি ছেড়ে দেই আবার শুরু করি। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ লাগে, প্রতিবার ধূমপান ছেড়ে দেয়ার সময় আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও আমাকে যেন ছেড়ে যায়। ধূমপান ধীরে ধীরে ছাড়ার চেষ্টা করেছি, নিকোটিনের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দ্রব্যও চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ছাড়তে পারিনি। ২০১০-এ একবার চার মাসের জন্য ধূমপান ছেড়েছিলাম। নিউ ইয়র্কের এক প্রেস সপ্তাহে অংশ নেয়ার তৃতীয় দিনে আর পারলাম না! আবার ধূমপান শুরু করে দিলাম। আমি আসলে ধূমপান করা বা না করার ব্যাপারে কাউকে পরামর্শও দিতে চাই না। নিজে কম বয়সে ধূমপান শুরু করেছি, এটা আমারই দোষ। এই বদভ্যাস নিয়েই চলতে হবে আমাকে।
আপনার সন্তানদের কোন ভুল সিদ্ধান্তে আপনি কোন রকম হস্তক্ষেপ করেন নাকি তাদেরকে তাদের মতো কাজ করতে দেন?
আসলে প্রযুক্তির এই যুগে এত কম বয়সে এমন অনেক বিষয় আমাদের সন্তানদের হাতে চলে আসে যে আমরা যারা অভিভাবক তারা সবাই একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় থাকি বলতে পারেন। বিশ বছর বয়সে আমরা যা জেনেছি, তা এখনকার সন্তানেরা শিশু অবস্থায় জানছে, এটা সত্যি বেশ ভয়ঙ্কর।
এটা তাদেরকে আরও তাড়াতাড়ি বড় করে তুলছে, যেটা অবশ্যই খুব ভালো ব্যাপার না।
একদম ঠিক! এরফলে নেতিবাচক ব্যাপারগুলো তাদের মনের গভীরে গেঁথে যায় একদম ছোটবেলা থেকেই। এটা মোটেই স্বাস্থ্যকর না। আপনি যখন বড় হবেন তখন অবশ্যই অনেক বিষয় সম্পর্কে জানবেন। কিন্তু ছোট থেকেই যদি আপনার শিক্ষক বা ইউনিফর্ম পরিহিতদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়, সেটা মোটেও ভালো ব্যাপার না। সন্তানেরা কম্পিউটারে বুঁদ হয়ে থাকে কারণ জীবন থেকে সে যে নিশ্চয়তা চায়, তার সমাধান এই প্রযুক্তি থেকে পায়। যখন ইতিহাসের বই এর চেয়ে কম্পিউটার গেমস আনন্দপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন বুঝতে হবে চারপাশের পরিস্থিতি আসলে অনেক খারাপ।
চলচ্চিত্র এক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখে বলে আপনি মনে করেন? পর্দার সংঘাত বা যৌনতাকে কি আপনি আপনার সন্তানদের থেকে লুকানোর চেষ্টা করেন?আচ্ছা, ‘রুম’ চলচ্চিত্রটির কথাই ধরুন। চলচ্চিত্র নির্মাণের দৃষ্টি থেকে একে আমি অবশ্যই খুব ভালো বলব। কিন্তু আমার জীবনে কি এটা খুব দরকার? পর্দায় কি চলছে এটা যতটা না দরকারি, পর্দার সংঘাত থেকে যে নেতিবাচকতার সৃষ্টি হয় সেটাকে দূরে সরিয়ে রাখাটা বেশি দরকার।
আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন?
ব্যাপারটা হচ্ছে চলচ্চিত্র দেখে আপনি একটা জিনিস কল্পনা করবেন আর তারপরই সেটা আপনার জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করবেন। আমি নিজেই এই চলচ্চিত্রের সংলাপ বলে বেড়িয়েছি একা একাই। আমি চলচ্চিত্রটিতে ডুবে গিয়েছিলাম, এটা খুবই ভালো। কিন্তু এরফলে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আমার মধ্যে হয়নি, কারণ আমি কল্পনা করতে পেরেছিলাম চলচ্চিত্রটির নারী চরিত্রটির ভেতর দিয়ে কী বয়ে চলেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের দিক থেকে আরও কিছু অসাধারণ দৃশ্য ছিল সেই ছবিতে। কিন্তু, মানবজীবনের অন্ধকার দিকগুলো যেখানে উঠে এসেছে তা আমাদেরকে কোন পথে চালিত করবে এটি প্রশ্ন। আমাদের সন্তান বা নতুন প্রজন্মকে শিক্ষাদান যদি আমাদের প্রথম লক্ষ্য না হয়, তাহলে কখনই আমরা কোন ইতিবাচক দিকে এগিয়ে যেতে পারব না।
আপনার বাবা-মা কি আপনার জন্য কোন নীতিগত আদর্শ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন?
অবশ্যই। এটাতো প্রায় সব বাবা-মাই করে দেন।
তারা কি আপনার চেয়ে বুদ্ধিমান?
আমার মা তো অবশ্যই। আমার বাবাও কম নন। তারা সহজেই কাউকে বিচার করেন না। নিজেরা খুব প্রাণবন্তভাবে বেঁচেছেন এবং আমাদেরও বাঁচতে শিখিয়েছেন। নিজেরা ৫৫ বছর বিবাহিত জীবন পার করলেও সবার জীবন একইরকম হবে এটা তারা মনে করেন না। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের কারণেই জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়েও তারা একসাথে আছেন। আপনার সন্তান হওয়ার পরই আপনি আসলে সবকিছু নতুনভাবে দেখা শুরু করবেন, আপনি চিন্তা শুরু করবেন তাদেরকে আপনি কোন অবস্থানে দেখতে চান, তদেরকে কী দিতে চান।
আপনার জীবনে বা কর্মক্ষেত্রে কি এমন কোন পরিবর্তন এসেছে সন্তানের কারণে?
হ্যাঁ অনেকটাই। যেমন ধরুন, আমি বুঝতে পেরেছি আমার সন্তানদের মায়ের সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সন্তানদের সামনে আমার বান্ধবীদের আনা ঠিক না। এতে তারা কষ্ট পায়। আমি যা করছি তার সবকিছুই তারা দেখতে পারছে, এই ক্ষেত্রে আমার কিছু কাজ অবশ্যই বুঝে করা উচিত। আমি সবসময় আমার সন্তানদের কাছে আদর্শ হয়ে থাকার চেষ্টা করেছি।
একজন তারকা হিসেবে এই আদর্শ হয়ে ওঠার মাত্রাটি কি একটু বেশি?
আমার ধারণা আমি এমন একজন মানুষ যার দিকে মানুষ খুব সহজে আঙুল তোলে। আমাকে নানাভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করাটাও সহজ। এগুলো নিয়ে আমি তেমন চিন্তা করি না, কিন্তু এসব কিছু আমার সন্তানদের উপর কী প্রভাব ফেলছে এটা আমার চিন্তার বিষয়।
মানে, গণমাধ্যম আপনাকে কীভাবে উপস্থাপন করছে, সেটাই কি বলতে চাচ্ছেন?
হ্যাঁ, কিন্তু আমি তো এটা বন্ধ করতে পারব না। আমার সন্তানেরা আমার সামনে ইন্টারনেটে আমাকে খোঁজার অনুমতি না পেলেও তার বন্ধুদের বাসায় গিয়ে তো দেখতে পারে। একারণে অনেক রকম বিষয় নিয়েই আমি তাদের সাথে কথা বলি। আমার মতে, এসব আলোচনা একটু মজা করে হলেই সেটা বেশি উপকারি হয় সন্তানদের জন্য।
যাতে আপনার সন্তানেরা আপনার বেশি প্রশংসা না করে?
অনেকটা তাই। কারণ, অনেক সময়ই সন্তানরা বাবা-মাকে একটু বেশিই আদর্শ মানে এবং যখন তাদের খারাপ দিকগুলো জানতে পারে তখন মেনে নিতে পারে না। আমি চেষ্টা করি আমার সন্তানকে আমি ঠিক যা, তেমন রূপই তাদের দেখাতে। আমার নিজের কিছু নীতিগত আদর্শ আছে। ঠিক ও ভুলের পার্থক্য আমি করতে জানি, জানি কি করতে আমি পারদর্শী। আর আপনি যখন নিজের একটা আদর্শ নিয়ে বাঁচবেন, তখন আপনার জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে। আপনি যদি সেই মানুষ হন, যিনি অন্য কারও জীবনের আদর্শ অনুসরণ করে চলতে চেষ্টা করে, তবে আমি আপনার সাথে থাকতে আগ্রহী নই। আমার সন্তানদেরকেও তাই আমি আমার কোন কৃত্রিমতা দেখিয়ে ধোঁকা দিতে চাই না।