করোনা মাহামারীতে আফ্রিকার দেশগুলোয় তুলনামূলক কম সংক্রমণ এবং কম মৃত্যুর সঙ্গে কি দারিদ্র্য, ঘনবসতির কোন সংযোগ আছে?
বিশষেজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন আফ্রিকা মহাদেশে সাউথ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। তারা ধারণা করছেন এর পেছনের কারণ হতে পারে শহুরে জনবহুল বসাবাস, স্বাস্থ্যবিধি তেমনভাবে রক্ষা না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারা। যেখানে বড়সড় একটি পরিবারের সবাইকে একটি মাত্র ঘরে গাদাগাদি করে বাস করতে হয়।
মাসের পর মাস ধরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, আফ্রিকার জনবহুল শহরগুলোতে ব্যাপকহারে করোনার প্রকোপ দেখা দিতে পারে।
সাউথ আফ্রিকার উপদেষ্টা কমিটির প্রধান অধাপক সেলিম আব্দুল কারিম বলেছিলেন, “করোনা প্রতিরোধে জনবসতির ঘনত্ব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে না পারলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে।”
কিন্তু সেই একই পরিস্থিতি যদি বিপরীত ভূমিকা রেখে থাকে তাহলে এ রহস্যের কিনারা কোথায়? তাহলে দারিদ্র্যই কি কভিড-১৯ প্রতিরোধের প্রধান অস্ত্র?
এটা একটা বিস্ময়: মহামারি ছড়িয়ে পড়ার শুরুতে বিশেষজ্ঞরা ধরেই নিয়েছিলেন, বড় বিপদের সামনে আফ্রিকা মহাদেশ। সাউথ আফ্রিকার শীর্ষ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ শাবির মাধি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম আমরা একটা দুর্যোগের মধ্যে পড়েছি। সামনে কঠিন বিপদ। এ মহাদেশের সবচেয়ে ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোর হাসপাতালও রোগী ধারণ করতে পারবে না বলে ধরে নিয়েছিলাম।” কিন্তু এখন পযর্ন্ত দেখা যাচ্ছে প্রথম ধাক্কা (ফার্স্ট ওয়েভ) পার হওয়ার পর সাউথ আফ্রিকার সংক্রমণ যুক্তজ্যের সংক্রমণের তুলনায় সাত ভাগ কম। মৃত্যুর হারও পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
এই প্রবণতার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর তুলনায় সাউথ আফ্রিকা মহামারী মোকাবেলায় কিছু তরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অধ্যাপক কারিম বলেছেন, “আফ্রিকার কোন দেশই সেভাবে পিক এ যায়নি। পশ্চিমা দেশগুলো সংক্রমণ কেন সেটা জানি না।পশ্চিমা দেশগুলো সংক্রমণ পিক এ উঠে আবার নিম্নমুখী হয়েছে। আমরা পুরোপুরি এক ধরণের ধোঁয়াশার মধ্যে অবস্থান করছি।”
অধ্যাপক কারিম এর সঙ্গে সহমত জানিয়ে ড. মাধি বলেছেন, “এটা একটা বিস্ময়। যা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য।”
বিশ্বাস করার মতো কাছাকাছি একটা ব্যাখ্যা অবশ্য বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ধারণা, তরুণ বয়সের জনগোষ্ঠী সংক্রমণ ঘটাচ্ছে কম। সাউথ আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর গড় বয়স ইউরোপের যে কোন দেশের মানুষের গড় বয়সের অর্ধেক। ৮০ বছরের বেশী বয়সী মানুষের সংখ্যা সাউথ আফ্রিকায় খুব কম।
টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ এর আঞ্চলিক পরিচালক টিম ব্রোমফিল্ড বলেছেন, “করোনা সংক্রমণে বয়স হচ্ছে সবচেয়ে ঝুকির বিষয়। আফ্রিকার তরুণ বয়সী জনগোষ্ঠী করোনা প্রতিরোধ করছে।”
তবে অধ্যাপক কারিম অবশ্য করোনা প্রতিরোধে মানুষের বয়সকে অত গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না।
তিনি মনে করেন, “মহামারীর যাত্রাপথে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি জয়। বিশ্লেষকরা এই মহাদেশের করোনা সাফল্যের পেছনে এখানকার জনসংখ্যার স্বাস্থ্য সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছেন না।”
মহামাহরী ছড়িয়ে পড়ার আগে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করার ফলে করোনা থাবা বসাতে পারেনি। জনগণকে মাস্ক পরা এবং অক্সিজেন সরবরাহ বিষয়ে মানুষকে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আরো ধারণা করা হচ্ছে, উষ্ণ আবহাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে অধ্যাপক কারিম সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “এটা ভেবে খুশি হওয়ার কারণ নেই যে আফ্রিকার তার খারাপ সময় পার করে এসেছে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, হয়তো যেকোন সময় ব্যাপকহারে মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে।”