১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। দিনাজপুরের দশ মাইল মোড় থেকে ভোরে বাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল কিশোরী ইয়াসমিন। নিরাপদে যাতে ইয়াসমিন বাড়ি যেতে পারে সেজন্য স্থানীয় মুসল্লীরা তাকে তুলে দিয়েছিল একটি পুলিশ ভ্যানে। কিন্তু কিছু দূর যেতেই ব্রাক স্কুলের সামনে ইয়াসমিনের ধর্ষণ করে পিক আপ ভ্যান থেকে ফেলে দিলে মৃত্যু হয় কিশোরী ইয়াসমিনের।
ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী কাজী হারেস জানান, মেয়েটা দিনাজপুর যাবে তো মেয়েটাকে সহযোগিতা করি। একটা পিকাপ এসে দাঁড়ালো। দাঁড়ানোর পর কে কি বলছে জানিনা। তবে পিকাপ ড্রাইভার অমৃতলাল ঐ মেয়েটাকে ধমকাধমকি করলো। ঐ ধমকা-ধমকি দেখে আমি আবার চলেেএলাম। রির্টান আসার পর বললাম কি হইছে? তারা বলল, মেয়েটাকে আমরা গাড়িতে উঠে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, মেয়েটা যাইতে চায় না।
ঘটনার ২ দিন পর ২৭ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা দোষীদের শাস্তি দাবি করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে। ওই ঘটনায় নিহত হয় কয়েকজন। আহত হয় আরও শতাধিক মানুষ। ওই ঘটনায় পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক ব্যক্তি জানান, আমার পায়ে গুলি লেগেছিলো। আমাকে পুলিশ ভ্যানে পুলিশ ওঠাইয়ে নিছিল।
ওই ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে ইয়াসমিন হত্যা মামলাটি স্থানান্তর করা হয় রংপুরে। ইয়াসমিন হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন রংপুরের বিশেষ আদালত। নারী নেত্রী ও ইয়াসমিন আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী মনোয়ারা সানু বলেন, আমরা চাইনা এভাবে কেউ ধর্ষিতা হয়ে মারা যাবে। এটা আমাদের বাংলাদেশের সমাজে চাইনা; গোটা বিশ্বের সমাজেও চাইনা। আমরা চাই আর কোনো নারী যেন ইয়াসমিন হয়ে মারা না যায়।
২৪ আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন ইয়াসমিনের মা ও নারী সমাজ। নিহত ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম বলেন, কেউ আমার খোঁজ খবরও নেয়না কিছু নেয় না। যখন এই মৃত্যুবার্ষিকী আসে তখন সাংবাদিকরা আসে।
ইয়াসমিনের পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল, কবর জিয়ারত ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আমি কিভাবে কি করি কেউ কোন খোঁজ খবর নেয় না।
এ ঘটনার পর থেকে প্রতি বছর ২৪ আগস্ট পালিত হয় ‘ইয়াসমিন ট্রাজেডি’ দিবস। দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।