চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অস্ট্রেলিয়াকে জিততে দিলেন না বাবর-রিজওয়ান

বাবর আজম যতক্ষণ ব্যাট করেছেন, করাচি স্টেডিয়ামে ছিল ‘বা…বর, বা…বর’ উল্লাস ধ্বনি। পাকিস্তান অধিনায়ক যদিও শেষপর্যন্ত দৃশ্যপটে থাকতে পারেননি, তার আগে ক্যারিয়ারসেরা ১৯৬ রানের ইনিংসে গড়ে দিয়ে গেছেন ম্যাচের ভাগ্য। পরে মোহাম্মদ রিজওয়ানের অপরাজিত শতকে অস্ট্রেলিয়াকে জিততে না দিয়ে ড্র ছিনিয়ে নিয়েছে স্বাগতিক দলটি।

বুধবার করাচিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ম্যাচের পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ের দুর্দান্ত গল্পই লিখেছে বাবর আজমের দল। ৫০৬ রানের লক্ষ্যে অজিদের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপকে পাত্তা দেয়নি তারা। রিজওয়ান-বাবরের সঙ্গে শফিকের দৃঢ়তায় চতুর্থ ইনিংসে ১৭১.৪ ওভার লড়ে ড্র এনেছে পাকিস্তান।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

প্রথম ইনিংসে ভরাডুবি, ১৪৮ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। অজিরা প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৫৫৬ তুলে ইনিংস ছেড়েছিল। স্বাগতিকদের নাগালে পেয়েও ফলোঅন করায়নি। ২ উইকেটে ৯৭ তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। পাঁচশ পেরোনো লক্ষ্য ছোড়ে বাবরদের সামনে। জবাবে ৭ উইকেটে ৪৪৩ পর্যন্ত গেছে পাকিস্তান।

দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে ২২৮ রানের জুটি, মাঝে ফাওয়াদ আলমকে নিয়ে লড়াই এবং নিজে ফেরার আগে রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ১১৫ রানের জুটি। ৩৯২ রানে বাবর যখন ফেরেন, করাচি টেস্টের ফল ড্রয়ের পথে। শেষে নাথান লায়ন কিছুটা রোমাঞ্চ আনলেন বটে, কিন্তু রিজওয়ানের অসাধারণ শতকে টেস্টের ফল থাকল অপরিবর্তিতই।

পাকিস্তান অধিনায়কের ৩৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে, ১৪৩ রানের। সেটা ছাপিয়ে নিলেন দেড়শতে, জাগালেন প্রথম দ্বিশতকের আশাও। কিন্তু বাবরের ষষ্ঠ শতককে দুইশ থেকে চার রান দূরে থামিয়ে দিলেন লায়ন। ২১ চার ও এক ছক্কায় ১৯৬ রানে শর্ট লেগে লাবুশেনকে ক্যাচ দেন করাচি টেস্টের নায়ক।

বাবর এদিন গড়েছেন দারুণ কিছু কীর্তি। দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তোলা সপ্তম ব্যাটার এখন তিনি। মাইক আথারটন, হার্বার্ট সাটক্লিফ ও সুনীল গাভাস্কারের পর চতুর্থ কোনো ব্যাটার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে খেললেন চারশতাধিক বল। স্টেডিয়ামকে পিনপতন নীরাবতা নামিয়ে যখন ফেরেন, বাবরের নামের পাশে ৪২৫ বল।

পাকিস্তান চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় গড়েছে ইতিহাস। পাঁচ শতাধিক রানের লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ৪৪৩ রান করেছে দলটি। ১৯৩৯ সালে সাউথ আফ্রিকার ছোড়া ৬৯৬ রানের লক্ষ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬৫৪ রান করেছিল সর্বোচ্চ আসনে থাকা ইংল্যান্ড।

রাওয়ালপিন্ডিতে রানফোয়ারা ছোটানো টেস্টের পর করাচিতেও অস্ট্রেলিয়া দিচ্ছিল একই আভাস। শুরুতে ব্যাট করে স্পোর্টিং পিচে করাচির ছেলে উসমান খাজার ১৬০ ও অ্যালেক্স ক্যারির ৯৩ রানে সাড়ে পাঁচশ পেরোনো সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।

পাকিস্তান নামতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। স্টার্ক-কামিন্সদের কাছে নাস্তানাবুদ পাকিস্তান গুটিয়ে যায় দেড়শ রানের আগেই। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে অধিনায়ক বাবর আজমের ব্যাটে।

৪০৮ রানের বড় লিড নিয়ে তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানকে ফলোঅন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খাজা-লাবুশেন ব্যাট করেন ২২.৩ ওভার। দুজনের ব্যাট থেকেই আসে ৪৪ রান করে।

সফরকারীদের সিরিজে এগোনোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বাগতিক অধিনায়ক বাবর ও তরুণ ওপেনার শফিক। শতকের থেকে চার রান দূরে ৯৬ রানে শফিককে ফেরান কামিন্স। ভাঙেন ২২৮ রানের জুটি। পরে ফাওয়াদ আলম বেশি সময় থাকতে পারেনি। ফিরেছেন ২৭ বলে ৯ রান করে।

শেষে পাকিস্তানের দৃশ্যপটে বাবরের সঙ্গে আসেন রিজওয়ান। গড়েন ১১৫ রানের জুটি। বাবর ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে ফেরেন, তখন ম্যাচের রোমাঞ্চের মোড় এনে দেন নাথান লায়ন। ফাহিম আশরাফকে শূন্য ও সাজিদ খানকে ৯ রানে ফিরিয়ে আশা জাগান জয়ের।

কিন্তু দুর্দান্ত শতকে অজিদের আশায় জল ঢালেন রিজওয়ান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক পাওয়া ডানহাতি ব্যাটার এদিন ১৭৭ বলে খেলেন ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস। লায়ন থ্রিলিং ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৫৫ ওভারে খরচ করেছেন ১১২ রান। দিনের খেলার দুই বল বাকি থাকতে টেস্ট ড্রয়ের ঘোষণা দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।

তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে রাওয়ালপিন্ডির পর করাচিতেও পয়েন্ট ভাগাভাগি করল দুদল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আওতায় সিরিজের শেষ টেস্ট হবে লাহোরে, ২১-২৫ মার্চ।