চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সব না হলেও কিছু উদ্ধারে ১৩০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ

লোকসানের কারণ দেখিয়ে অলটেক্স গ্রুপের ঋণের সুদ হওয়া প্রায় ১৩০ কোটি টাকা মওকুফ করে দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে সুদ মওকুফের তথ্য জানা গেছে।

গ্রুপটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স স্পিনিং, অলটেক্স ফেব্রিক, অলটেক্স ওয়েভিং, অলটেক্স ডাইনিং, ফিনিশিং ও প্রিন্টিং লি.। এদের মধ্যে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, অলটেক্স স্পিনিং ও অলটেক্স ফেব্রিক্স-এই তিন কোম্পানির কাছে সুদে-আসলে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ছিল মোট ৩৬০ কোটি ৬৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪২ টাকা। তার মধ্যে সুদ হিসেবে পাওনা মোট ১শ ২৯ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৪ টাকা মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

গত আগস্টে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই করে সেপ্টেম্বরে সুদ মওকুফের অনুমোদন দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব সুদ পাওনা ছিল সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের স্থানীয় শাখায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে সোনালী ব্যাংক খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে। ব্যাংকটির বর্তমানে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। প্রায় ২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে ব্যাংকটির।



সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন আহমেদ অলটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হলেন আফসার উদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

ব্যাংক সূত্র জানায়, অলটেক্স গ্রুপের অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে সোনালী ব্যাংকের আসল ও সুদ মিলে পাওনা ২৩৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৯ টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ হিসাবসমূহের অনারোপিত সুদের প্রায় ৮৭ শতাংশ মওকুফ করা হয়, যা টাকার অংকে ৭২ কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৪৮তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এছাড়া অলটেক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অলটেক্স ফেব্রিক্সের কাছে সুদ-আসলে পাওনা ৪৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার টাকার মধ্যে সুদ বাবদ ২০ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ৩০৬ টাকা ও অলটেক্স স্পিনিংয়ের কাছে সুদে-আসলে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৩ টাকার মধ্যে সুদ বাবদ ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৫৮ টাকা মওকুফ করে দেয় সোনালী ব্যাংক।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: হয়তো আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ মওকুফের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু দেখার বিষয়ে হচ্ছে, সুদ মওকুফ করার পর আসল টাকা পাওয়া যাবে কি না। সেটার নিশ্চয়তা কতটুকু আছে? কারণ অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ সুদ মওকুফ নিয়ে পরে আসলও দিচ্ছে না। যদি দেনাদারের এরকম চিন্তাধারা থাকে তাহলে সুদ মওকুফ করে লাভ নাই।

অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ মূলত রপ্তানিমুখী একটি প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইডেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশে পণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

পুঁজিবাজার সূত্রে জানা গেছে, হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিতে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ বেশ কয়েকবার রপ্তানির জন্য ট্রফিও পেয়েছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তির পর গত ২০ বছরে কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিয়েছে মাত্র ৪ বার।

জানতে চাইলে অলটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘রপ্তানি কমে যাওয়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। তাই ওয়ান টাইম এক্সিটের আওতায় সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আবেদন করেছিলাম। আসলে আমার ছেলে কোম্পানি তিনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে এসব বিষয়ে ভাল বলতে পারবে।’

তবে, তার ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গ্রাহক থেকে বকেয়া উদ্ধারে এই সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ওই তিনটি কোম্পানির মধ্যে দুটি বন্ধ রয়েছে। একটি চলমান। সেখানে আমাদের অনেক ঋণ বকেয়া হয়ে গেছে। বকেয়া উদ্ধারে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণকে সচল করতে এই ঋণ রিশিডিউল করেছি।’

‘সব টাকা না পাওয়ার চেয়ে অন্তত কিছু পাওনা উদ্ধার করা তো ভাল। সে বিষয়ে বিবেচনা করেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

আশরাফুল মকবুল বলেন, ‘এটা এককভাবে সোনালী ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষক রয়েছেন। তিনিও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কোম্পানি আইন অনুযায়ী রুগ্ন শিল্প এ ধরণের সুবিধা পেয়ে থাকে। সে দিক বিবেচনা করে সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অনেক সময় ঋণের টাকা উদ্ধারের জন্য কোম্পানিকে কস্ট অব ফান্ড রেখে বাকি টাকার বিষয়ে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এই সুযোগ নিয়েও যদি ঋণের অর্থ আদায় করা না যায় সেক্ষেত্রে ব্যাংককে লোকসান গুণতে হয়।’