টেলিভিশনের পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে ইউটিউবের জন্য ইদানিং অনেক নাটক নির্মিত হচ্ছে। ঈদসহ নানা উৎসব কালীন সময়ে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল মোটা অংকের টাকা লগ্নি করছে।
ইউটিউব থেকে দর্শক নাটক বেশি দেখেন, নাকি টেলিভিশন থেকে? নাটক দেখার আবেদন এখনও আছে? যারা ইউটিউব দর্শক টার্গেট করে নাটক বানাচ্ছেন তারা কতটা কমফোর্ট ফিল করছেন? বাজেট নিয়ে কী সন্তুষ্ট? এসব নানা প্রশ্ন নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে অনেক কিছু জানিয়েছেন জনপ্রিয় নাট্য-নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ।
মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেন, নাটক প্রচারের পর ফিডব্যাকের কথা যদি বলি, তাহলে টেলিভিশনকে এগিয়ে রাখবো। কারণ, টেলিভিশনে একেবারে ফিডব্যাক আসে। একসঙ্গে হাজার কিংবা লাখও মানুষ দেখতে পারেন। সেজন্য একেবারেই ঝড়ের মতো সাড়া আসে। এটা শুধু টেলিভিশনেই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ইউটিউব থেকে ফিডব্যাক আসে ধীরে ধীরে। জিরো থেকে ভিউ শুরু হয়, সেটা কোটিও হতে পারে। ভিউ না হলে কাজের কোনো দাম নেই। তাই কাজের রেসপন্সের হিসেব করলে আমার কাছে টেলিভিশন এগিয়ে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু কাজের কমফোর্ট জোনের ক্ষেত্রে অনলাইন (ইউটিউব) এগিয়ে। আর বাজেটের কথা বলতে গেলে টেলিভিশনের চেয়ে এখন ইউটিউবের কাজে বেশি বাজেট দেয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে আরো বাড়বে। ঈদ কিংবা বিশেষ দিবস বাদ দিলে টিভি চ্যানেল নানা কারণে খুব বেশি টাকা দিতে চায় না। কিন্তু অনলাইনের জন্য আমরা যারা কাজ করছি, সারাবছর ভাল বাজেট নিয়েই কাজ করছি। আর না হলে করি না। আমি নিজের উদাহরণ দিচ্ছি। ইউটিউবের জন্য আমি যেসব কাজ করি সবকিছু ব্যাটেবলে মিলে গেলে করি। যেমন বাজেট, গল্প ও কাজের স্বাধীনতা, সময়, শিল্পী নির্বাচন ইত্যাদি। মানে আমি আমার মতো কাজ করতে পারি।
অনলাইনের দর্শক বিষয়ে তিনি বলেন, অনলাইনে কাজ করলে কতজন দেখছেন, পছন্দ করছেন, অপছন্দ করছেন সেটা কিন্তু দেখতে পায় সবাই। এমনকি কাজ কেমন হয়েছে সেটা মন্তব্য করে জানাতে পারছেন। টেলিভিশনে এটা নেই। সবচেয়ে মজাটা এখানেই, অনলাইনে ফাঁকিবাজির কোনো জায়গা নেই।
ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অশ্লীলতা বিষয়ে তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস বলতে চাই, অনলাইনে জনপ্রিয় এবং ভাল কনটেন্ট দুটো আলাদা জিনিস। আমি যেটা লক্ষ্য করছি, মাঝখানে কিছু অশ্লীল কনটেন্ট বানানো হয়েছে। এগুলো উচিত না। অশ্লীল কনটেন্টে দর্শক বিমুখ হবে। দর্শক একবার মুখ ফেরালে তাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। তবে এসব থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা দেখছি। শেষ ঈদ যদি আমরা দেখি, অনেক ভালো ভালো কাজ কিন্তু অনলাইন থেকে এসেছে। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বড় হওয়াতে টেলিভিশন নাটকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হবে, তা কিন্তু নয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, দুটো দুইভাবে চলবে। বরং চ্যানেলগুলো নাটক প্রচারের পর কনটেন্ট তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে দিচ্ছে। আগামীতে আমি যেটা দেখি সেটা হলো ‘কিং অব দ্য কনটেন্ট’ হবেন পরিচালক। উদাহরণ দেই- মোশাররফ করিম, অপূর্ব কিংবা আফরান নিশোর সব নাটক কি হিট হয়? কটা নাটক হিট করে, আর সেগুলো বানান কারা? ঘুরে ফিরেই দশ-বার জন্য নির্মাতার নির্দেশনায় তাদের নাটক হিট হয়। তাই আমি মনে করি শিল্পী ও নির্মাতা দুজনেই পরিপূরক। কেউ কারো ছাড়া চলতে পারবে না। তবে ভালো নির্মাতা হলে ভা্লো শিল্পী তৈরি হবে। ভালো ভালো নাটক নির্মাণ হবে। এতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে।
অনুলিখন : নাহিয়ান ইমন