বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় ফরেনসিক রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত না পাওয়ার বিষয়টি মামলায় কোনো ধরণের প্রভাব পড়বে না বলে সুপ্রিম কোর্টের দু’জন আইনজীবী জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলছেন, যেহেতু আসামীরা ধর্ষণে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাই ফরেনসিক রিপোর্টের ওপর নির্ভর না করে মামলা তার নির্দিষ্ট গতিতেই চলবে।
সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে ধর্ষণের ঘটনার অনেকদিন পর ফরেনসিকের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এতদিনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া এখান থেকে সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে মামলা কোনভাবেই ধীরগতি পাবে না, বরং মামলা তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।
তিনি বলেন, ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়াও সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্তরাও ধর্ষণে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাদের মৌখিক সাক্ষ্য যেহেতু রয়েছে, তাই এখানে ফরেনসিক রিপোর্টের কোন প্রয়োজন নেই।
শেখ আতিয়ারের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন আইনসেবা’র নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী স্বর্ণকান্তি দাস চৌধুরি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, বনানীতে দুই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় এখন আর ফরেনসিক রিপোর্টের প্রয়োজন নেই। সাধারণত ধর্ষণের পর ধর্ষিতা পযাপ্ত পানি ব্যবহার করলে ২৪ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যেই আলামত নষ্ট হয়ে যায়, এছাড়া স্বাভাবিকভাবে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত ধর্ষণের আলামত থাকে।
তিনি জানান, এই ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের নিকট ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, অভিযুক্তরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ফলে ফরেনসিকের রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও মামলায় কোনো প্রকার প্রভাব পড়বে না।
গত ৯ মে বিকেলে মামলাটির তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার)। তবে ঢামেকের ফরেনসিক রিপোর্টের পর খানিকটা বিচলিতই মনে হয়েছে এ তদন্ত সংস্থাকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ধর্ষণের পরে ৪০ দিন অতিবাহিত হলে সাধারণত ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায় না। এছাড়া তাদের ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ে কামিজ ও হাইভেজনাল সফট পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছিল। সেখানে কোনো ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তাদের শরীরে কোনো নির্যাতনের আঘাত পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইতে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ৭ মে তাদের মেডিকেল পরীক্ষা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে দুটি টেস্ট করতে বলা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ধর্ষণের রিপোর্ট যাতে আমরা কোনো আলামত পাইনি। আর দ্বিতীয়টি ভিকটিমের বয়স, আমরা ভিকটেমের বয়স ২২ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে পেয়েছি। এসবই আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। পরবর্তী আরো কোনো কিছু যদি তারা জানতে চায় তবে আমরা সেসবেরও রিপোর্ট দিবো।
গত ২৮ মার্চ বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বন্ধুর মাধ্যমে এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এরপর অভিযুক্তরা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে।
যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তাদের একজন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ। প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি উপেক্ষা করে ঘটনার একমাসের বেশি দিন পর ওই দুই তরুণী ৪ মে বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করতে যান। তবে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে তাদেরকে হয়রানী করে বলে অভিযোগ ওঠার ৪৮ ঘণ্টা পর ৬ মে ওই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১১ মে সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দিন আদালতে তোলা হলে আদালত সাফাতকে ৬ দিন এবং সাদমান সাকিফকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এছাড়া গত ১৫ মে সাফাতের দেহরক্ষী রহমতকে গুলশান থেকে এবং ড্রাইভার বিল্লালকে নবাবপুর থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে রহমতকে ৩ দিন এবং বিল্লালকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মামলার অন্যতম আসামী নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিমকে ১৭ মে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তার গ্রেফতারের পরদিন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন বনানীতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে।