বনানীর আলোচিত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাদেম উল কায়েস এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ সাফাত আহমেদের জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য ছিল। সেই হিসেবে জামিনে থাকা সাফাত আহমেদ জামিনের আবেদন করলে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন একই বিচারক।
এ ছাড়াও কারাগারে থাকা এই মামলার আসামি সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার এ মামলার ভিক্টিমকে জেরা করার দিন ধার্য ছিল। আদালতে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। তবে তাকে জেরা করা শেষে না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী জেরার জন্য আগামী ৬ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
জেরা করার সময় আদালতের উদ্দেশে ভিকটিম বলেন, আসামিরা একের পর জামিন পাচ্ছে। আসামিদের জন্য আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এসময় ভিকটিম সাফাতের জামিন বাতিল এবং অপর আসামি নাঈম আশরাফের জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করেন।
ভিকটিম আদালতকে দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে অনুরোধ করেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তিনি একটি চাকরি করেন, সেখানে বারবার ছুটি চাওয়া যায় না। আর যে বিষয় নিয়ে ছুটি চাইবেন সেটা সবার সামনে প্রকাশও করা যায় না।
সাফাতের আইনজীবী তার জামিন চেয়ে শুনানিতে বলেন, সাফাতের কিডনিতে পাথর জমেছে। ডান পাশের কিডনিতে অপারেশন করা হয়েছে, বাম পাশেও অপারেশন করতে হবে। আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি, নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। পলাতক হওয়ার সুযোগ নেই। আর হুমকি-ধমকির বিষয় ভিত্তিহীন।
শুনানিতে বাদী পক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামি সাফাতকে মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সুস্থ। তাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। তার জামিন বাতিল করা হোক। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার না। আর কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসা করা হোক।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সাফাতের জামিন বাতিল করেন এবং নাঈম আশরাফের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৬ মার্চ দিন ধার্য করেন।
২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক তরুণী।
এজাহারভুক্ত অপর চার আসামি হলেন- সাদমান সাকিফ, সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ (রহমত)।
৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। অভিযোগপত্রে ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়।
১৩ জুলাই ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামি সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ (১) ধারা এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।