ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় নিজের জন্মভূমি, বসত বাড়ি ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য কোনো অচেনা দেশে পাড়ি দিতে চেষ্টা করছে হাজার হাজার শরণার্থী। তারা জানে না এই যাত্রার শেষ কোথায়? বা আদৌ পৌঁছাতে পারবে কিনা গন্তব্যস্থলে। কোথাও পাবে কিনা সামান্য মাথা গোঁজার ঠাঁই।
তবুও রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনো সমুদ্র পথে, কখনো পায়ে হেঁটে এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু আজকের এই সভ্য সমাজ ঘরে বসে থেকে কেউ কী উপলব্ধি করতে পারছে কীভাবে এক একেকটি দিন কাটাচ্ছে এসব শরণার্থীদের?
মাত্র এক দিনের মধ্যেই হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের কেলেটি রেলস্টেশনে হাজার হাজার শরণার্থীর উপচে পড়া ভিড় আর বিক্ষোভ। ২টি ফেরিতে করে আসা প্রায় ৪ হাজার অভিবাসীর অনেকেই টিকিট উচু করে ধরে জার্মানি অথবা অন্য কোনো উন্নত দেশে যেতে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা
তাদের মধ্যে রাতে স্টেশনের মূল গেটেই ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে। জীবন হাতে নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এখন অনেক অভিবাসী ইংল্যান্ডে প্রবেশের আশায় ফ্রান্সে অপেক্ষায় আছে।
সেখানে শরণার্থীদের একেকটি দিন যেনো একেকটি বছরের মতো দীর্ঘ। আর কতোটা করুণ ও মর্মান্তিকভাবে দিনগুলো কাটাচ্ছে তা আর মুখে বলার প্রয়োজন হয় না। একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক বিশ্ব যদি বুঝে তাহলে ছবি দেখেই বুঝতে পারবে না হলে কখনোই তাদের বোধগম্য হবেনা।
১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ স্থানীয় সময় রাত ১:০৫ মিনিট: লিবিয়ার সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের উদ্ধার অভিযানে বের হয়েছেন নরওয়ে নেভির চীফ অফিসার।
১লা সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ২:১৫ মিনিট: সিরিয় শরণার্থী আবেদ হাদী (১৯) তার ছোট ভাতিজাকে খাওয়াচ্ছে। অন্যান্য শরণার্থীর মতো সেও অপেক্ষায় আছে কখন হাঙ্গেরি থেকে ইউরোপের কোনো দেশে যেতে পারবে।
একই দিনে স্থানীয় সময় রাত ৩টা: খোলা আকাশের নীচে রাস্তাকেই খাট বানিয়ে ঘুমিয়ে আছে শরণার্থীরা।
স্থানীয় সময় ভোর ৪টায়: কম্বল দিয়ে শরীরটুকু ঢাকতে পারলেও পা দুটো ঢাকতে পারেনি। তাই খালি পায়েই ঘুমিয়ে আছে গাছের নিচে।
১লা সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় ভোর ৫টা: এই সময় থেকেউ লাইনে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষা করছে গৃহহীণ এসব শরণার্থী।
ভোর সাড়ে ৫টা: এক সিরিয় শরণার্থীকে মাদক চোরাচালানী সন্দেহে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
কেলেটি রেলস্টেশনের বাইরে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে আছে এক সিরিয় শিশু। সে হয়তো ধারণাও করতে পারছে না ঘুম থেকে উঠে তার জীবনে কী হতে পারে।
১লা সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা: আরো শরণার্থী হেঁটে চলেছে বুদাপেস্টের রেলস্টেশনের দিকে। তাদের এই যাত্রা কখন শেষ হবে তার ঠিক নেই। কোথায় গিয়ে ঠেকবে তারা, তাও জানা নেই। আর এইভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেটে যাচ্ছে তাদের একটি করে দিন, ২৪ টি ঘণ্টা।