শামীম শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ও ফুলার রোডে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ভাস্কর্যের নির্মাতা শামীম শিকদার একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী ভাস্কর। তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টীল ও গ্লাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করতেন তিনি।
২০০০ সালে একুশে পদক অর্জন করেন শামীম শিকদার। ১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত।

শামীম শিকদার নারী ভাস্কর হিসেবে নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে অনন্য সব কীর্তি গড়ে বাংলাদেশের নারীদের জন্য পথিকৃৎ হয়ে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

শামীম শিকদারের প্রয়াণে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।
খ্যাতনামা বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক এবং সমাজকর্মী কাবেরী গায়েন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “শামীম শিকদারের সাহস আর কাজ করার স্পৃহা অসাধারণ। তাঁর জীবন বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য পথ প্রদর্শনকারী। এই সাহসের একটুও আর দেখিনা। মেয়েরা কি এখন আর ভাস্কর্য বানান বাংলাদেশে? বাংলাদেশে ভাস্কর্য শিল্পের আসলেই প্রকট দৈন্য। সত্যি বলতে, শামীম সিকদারের বানানো ভাস্কর্যের খুব ভক্ত আমি, এমন দাবি করি না। কিন্তু তাঁর কাজ করে যাওয়াকে সম্মান করি। তাঁর ভাস্কর্য বানানোর তাগিদ এবং চেষ্টা অসম্ভব মূল্যবান। নভেরা, শামীম শিকদার… ।
শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা জানাই।”
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসমা আহমেদ লিখেছেন, “অনেক আগে স্বাধীনতার পর পরই আধুনিক পোষাকে সাইকেল চালিয়ে চারুকলায় পড়া একজন নারী, যার দিকে অনেকেরই কৌতুহলী নজর ছিল, সেই শামীম শিকদার চলে গেলেন আজ।”
বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি গায়ক, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক কবীর সুমন লিখেছেন, “জানলাম শামীম শিকদার চলে গেছেন। পশ্চিমবঙ্গে মনে হয় কম মানুষই জানেন তিনি কে। তাঁর সৃষ্টি আমি বাংলাদেশে দেখেছি। কখনও পরিচয় হয়নি তাঁর সঙ্গে। পাথর কেটে কুঁদে রূপ দিতেন তিনি। তাঁর ভাস্কর্য দিত শুধু তাঁর দেখার ক্ষমতা আর পেশীর ক্ষমতার খবর নয়। তাঁর অন্তর্দৃষ্টিরও খবর। আমার সময়ের এক বড় শিল্পী চলে গেলেন।”
স্থপতি, নাট্যকার, নির্মাতা শাকুর মজিদ লিখেছেন, “১৯৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল ফুলার রোডের বাসায় সন্ধাবেলা তাঁর ইন্টারভিউ করেছিলাম। রাতে একসাথে খেয়েও ছিলাম। পরদিন, ২৬ এপ্রিল তিনি যথাসময়ে আসেন, তাঁর নির্মিত ভাষ্কর্যগুলোর পাশে এসে দাঁড়ান। আমি তাঁর কয়েকটা ছবিও তুলি। এর পর শামীম শিকদারকে আর কখনো দেখিনি, কথাও হয় নি। আজ শুনি তিনি চলে গেলেন ।”