ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করার জন্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ তাগাদা দিয়েছেন। এসময় ইতিকাফ করলে রোজাদারের ইবাদতের মাত্রা বেড়ে যায়। ইতিকাফ একটি নিজস্ব ইবাদত। এটি সেসব ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, যা যুগযুগ ধরে বিভিন্ন নবীর সময়কাল থেকে চলে আসছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.-কে কাবাঘর নির্মাণের পর তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং নামায আদায়কারীদের জন্য নবনির্মিত ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আদেশ দিয়েছেন।
ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়া। পুরুষেরা নিজেদের মসজিদে আবদ্ধ করে নেয় এবং নারীরা ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয় বলেই একে ইতিকাফ বলা হয়। রমজান মাসে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ সাধারণত একটি সমাজের প্রত্যেকের উপর এ দায়িত্ব নয়; সমাজের পক্ষ থেকে যেকোন একজন ইতিকাফ করলে বাকী সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়েছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর যদি সমাজের সকল ব্যক্তিই ইতিকাফ করা থেকে বিরত থাকে, সেক্ষেত্রে সবাই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তরকের দায়ে দায়ী বলে বিবেচ্য হবেন।
রমজান মাসের শেষ দশ দিন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাগাতার ইতিকাফ করেছেন। নিজে করার সাথেসাথে অন্যদেরও এসময় ইতিকাফ করার বিষয়ে তাগাদা দিয়েছেন। যার ফলে এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। সহীহ বুখারী: ৩/৪৭
ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো, শবে কদর তালাশ করা এবং নেক আমলের মধ্যে থাকা। ইতিকাফকারী ব্যক্তি ইতিকাফের কারণে অনেক নেক আমল করতে পারে না। যেমন, রোগীর সেবা, জানাযায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি। যেসব আমল ইতিকাফে থাকার কারণে ইতিকাফকারী করতে পারে না, সেসব আমল না করেও তার সাওয়াব ইতিকাফকারীর আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়।
সুনানে ইবনে মাজাহর এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ইতিকাফকারী গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্যে ততটুকু নেকিই আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয় যতটুকু একজন নেক আমলকারী করতে পারে। অর্থাৎ ওই নেক আমলও সে পেয়ে যায়, যা অন্যান্য নেক আমলকারীরা করছে; কিন্তু ইতিকাফে থাকায় ইতিকাফকারী করতে পারছে না।
পুরুষরা ইতিকাফ করবে মসজিদে। আর নারীদের ইতিকাফ হবে ঘরে। বিশেষকরে, ঘরের সেই রুমে যেখানে মানুষজনের যাতায়াত কম। ইতিকাফ থাকাবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়কেই কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। অন্যথায় ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে।
ইতিকাফের সেসব বিধি-বিধান নিম্নরূপ:
১. ২০তম রমজান সূর্যের ডুবে যাবার আগেই নিয়ত করে ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করা সুন্নাত। যদি কেউ পরদিন অবস্থান করে, তবে তার ইতিকাফ সুন্নাত হবে না; বরং তা নফল ইবাদত বলে ধর্তব্য হবে।
২. ইতিকাফকারীর জন্যে উত্তম হচ্ছে ঈদের নামায আদায়ের পর ঘরে ফিরে যাওয়া।
৩. শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কারণ কিংবা প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতিত ইতিকাফকারী বাইরে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে এধরণের প্রয়োজনে কোথাও গেলে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার সাথেসাথে ফিরে আসতে হবে। অন্যথায় ইতিকাফ ভঙ্গ হবে।
৪. রোজা না রাখলে কিংবা রোজা ভঙ্গ হলে সাথেসাথে ইতিকাফও ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৫. নারী ইতিকাফ অবস্থায় মাসিক তথা হায়েয বা নেফাস চলে এলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে।
৬. কোনো নারী ইতিকাফ অবস্থায় সহবাস করে ফেললে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, ইতিকাফ যেহেতু নেক আমল বৃদ্ধির নিমিত্তে বিধিবদ্ধ হয়েছে, সেহেতু এসময় যথাসম্ভব নেক আমল বেশিহারে করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষত, নফল ইবাদত করা। কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবীহ-তাহলীল, দরুদ পাঠে নিমগ্ন থাকতে পারলেই ইতিকাফকারীর মূল উদ্দেশ্য সার্থক।