চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে টোটাল ফিটনেস ডে

শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সব দিক থেকে ফিটনেস অর্জনের আহ্বান নিয়ে দেশব্যাপী প্রথমবারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে ‘টোটাল ফিটনেস ডে‘। ২০২৩ সাল থেকে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন‘ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাদেশে দিবসটি উদযাপন করতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ৭টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সচেতনতামূলক বিশেষ সেশনের আয়োজন করছে সংগঠনটি। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে থাকবে যোগব্যায়াম, শারীরিক ভারসাম্য পরীক্ষা বা বডিব্যালান্স টেস্ট, সচেতনতামূলক বুলেটিন, ব্রোশিউর বিতরণ সহ আলোচনা, প্রাণায়াম ও মেডিটেশন।

শরীরচর্চাকারী ও স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও উদযাপনে যুক্ত হচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে এধরনের শতাধিক সেশন আয়োজিত হবে।

দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য টোটাল ফিটনেস নিয়ে মানুষের ভেতর যথাযথ সচেতনতা তৈরি করা। একজন মানুষের ভালো থাকা মানে সবদিক থেকে ভালো থাকা। সবদিক মানে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক এই চার টি দিকেই ভালো থাকা। সবদিক থেকে ফিট থাকলেই সার্বিক ভাবে ভালো থাকা সম্ভব। তাই চারক্ষেত্রের প্রতিটিতেই ফিটনেস দরকার।

শারীরিক ফিটনেস মানে সুস্থ থাকা, নিরোগ থাকা। এবং অবশ্যই কর্মক্ষম থাকা। এটা অর্জনের জন্যে ছোটছোট কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়াই যথেষ্ট, যেমন -খাদ্যাভ্যাস। ইমিউনোলজিস্ট প্রফেসর ক্যারোলা ভিনেস ও জেমসলি দীর্ঘ গবেষণার পর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু রোগের উৎপত্তি হচ্ছে, যার আগে কখনও কোনো দেখা মেলেনি। তাঁরা এজন্যে খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করেছেন, বিশেষ করে ফাস্টফুড ও প্যাকেটজাত খাবারের প্রতি বিশ্বজুড়ে সবার আগ্রহকে।(সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট ১০ জানুয়ারি ২০২২)। খাদ্যাভ্যাস সঠিক করতে অর্থনয়, প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। টিনজাত, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে বেশি বেশি প্রাকৃতিক খাবারে অভ্যস্ত হলে শারীরিক ফিটনেস সহজে অর্জিত হয়। রাতে বেশি না খেয়ে সকালে বেশি খেলে তা সুস্থতাকে সুনিশ্চিত করে। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম, দম ইত্যাদির চর্চা দেহকে রাখে প্রাণবন্ত।রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম এবং অবশ্যই ভালো ঘুম দেহের ক্লান্তি দূর করে দেহকে পরের দিনের জন্যে ফিট করে তোলে।আর এই সকল কিছুর জন্যে দরকার একটি সুন্দর রুটিন।যদি শারীরিক ফিটনেস অর্জন করতে হয় তাহলে জীবনের গুরুত্বের তালিকায় এসব রাখার কোনো বিকল্প নেই।

মানসিক ফিটনেসের মানে হলো মানসিকভাবে সুস্থ সবল থাকা।সবসময় প্রশান্ত থাকা।রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা, লোভ, মোহ, স্ট্রেস, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকা।কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়া এবং নিজের প্রজ্ঞা অনুসারে কাজ করা।সেজন্যে সবার আগে দরকার মমতা,সমমর্মিতা। দালাইলামার উক্তি, ‘যদি তুমি অন্যকে সুখী দেখতে চাও তাহলে সমমর্মী হও, নিজেকে সুখী দেখতে চাইলেও তুমি সমমর্মী হও‘।পাশাপাশি নিজেকে প্রশান্ত রাখা, রাগ-ক্ষোভ থেকে মুক্ত রাখা, ক্ষমা করা, ছোটখাটো বিষয় থেকে আনন্দ খুঁজে নেয়া ইত্যাদিও জরুরি।অর্থাৎ নিজের মনটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব দরকার।এজন্যে মেডিটেশন হতে পারে খুব কার্যকর উপায়।

সামাজিক ফিটনেসের মানে হলো সকলের সাথে মিলেমিশে ভালো থাকতে পারার যোগ্যতা।একা একা স্বার্থপরের মতো বাঁচা মানে ভালো ভাবে বাঁচা নয়।সবাই মিলে ভালো ভাবে বাঁচতে পারাটাই প্রকৃত ফিটনেসের প্রমাণ।এই যোগ্যতাটা জরুরি তাই।সামাজিক ভাবে ফিট থাকতে হলে সকলের সাথে মেলামেশার দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন।একই সাথে খুব ভালো হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদলে বাস্তব সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে পারলে, সবাইকে আগে সালাম দিতে বা সম্ভাষণ করতে পারলে।প্রতিবেশির খোঁজ খবর নেয়া, সমাজের আর দশজনের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো, সবার সাথে সম্মানজনক আচরণ ইত্যাদি মানবিক চর্চাও একজন কে সামাজিকভাবে ফিট করে তোলে।স্যোশাল নিউরোসায়েন্সের প্রবক্তা অধ্যাপক ড. জন টিক্যাসিওপ্পো বলেন, একাকীত্ব মানে শুধু পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়, একাকী জীবনের অর্থ হলো অন্যকে দেওয়ার পথ ও রুদ্ধ হয়ে যাওয়া।আর এই বিচ্ছিন্নতা আমাদের সুখ ও সামগ্রিক ভালো থাকাকে ব্যাহত করে।

সামাজিক ফিটনেস বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আত্মিক ফিটনেস বাড়ানোর পথও সহজ হয়ে যায়। কারণ অন্যের জন্যে করার সক্ষমতা বা পরার্থ পরতা আত্মিক ফিটনেসের জন্যে খুব জরুরি বিষয়। বস্তুত, স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্যে সাধনা করতে পারা, অন্যকে সহজে ক্ষমা করতে পারা, অন্যের বেদনায় সমব্যথী হওয়া এবং সকল সৃষ্টির সেবা করতে পারাই আত্মিক ফিটনেসের প্রমাণ।সকল ধর্মই অপরের কল্যাণে নিজের মেধা শ্রম সময় অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছে, তাই জীবে দয়া করে এবং নিজ নিজ ধর্ম পালন করার ভেতর দিয়ে একজন মানুষ আত্মিক ভাবে ফিট থাকতে পারেন।প্রার্থনা উপাসনার মাধ্যমে স্রষ্টার স্নেহভাজন হতে পারেন।পেতে পারেন অনাবিল প্রশান্তি।

দিবসের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক সমন্বয়ক সুরাইয়া রহমান বলেন, সবদিক থেকে ফিট হতে পারলেই সামগ্রিকভাবে একটি সুন্দর জীবন পাওয়া সম্ভব। নির্মাণ করা সম্ভব একটি সমমর্মী সমাজ।  ‘টোটাল ফিটনেস ডে‘ উদযাপনের প্রাসঙ্গিকতা এখানেই।

ক্রমশ ভোগমুখী আত্মপর হয়ে ওঠা এবং অবৈজ্ঞানিক জীবনাচার অনুসরণ করে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষকে সার্বিক ভালো থাকার সন্ধান দিতেই এ উদ্যোগ।সকলের মাঝে টোটাল ফিটনেস বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হলেই মানুষ ভোগমুখী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।পরিশ্রমমুখী, সমমর্মী ও সুখী জীবনে প্রবেশ করতে পারবে।