রমজান মাসের প্রধানতম প্রকৃতি হলো, এই মাসটি ইবাদতের সীমানায় ঘূর্ণায়মান থাকে। ধর্মের প্রতি মুসলমানদের অনুরাগ, আখেরাতমুখী চিন্তা-চেতনা এই এক মাসেই সর্বাধিক উদ্ভাসিত হয়৷ সারাবছর কে বড় ধার্মিক ছিল, কে ছিল বড় পরহেজগার— তা রমজান মাসে দেখার সুযোগ নেই। ধার্মিক থেকে আরম্ভ করে বকধার্মিক পর্যন্ত সবাই এমাসে কম-বেশ ইবাদতমুখী। তার কারণ, সবাইকে ধর্মের পথে ফিরে আসার বিশেষ আহ্বান জানায় মাহে রমজান।
একটি নয়, দুটি নয়; বরং অনেকগুলো ইবাদতের ক্ষেত্র আমাদের সামনে সাজিয়ে রেখেছে রমজান। এজন্য রমজানকে ‘ইবাদতের বসন্ত’ বলা হয়। কেনই বা বলা হবে না? যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা প্রতি ইবাদতের বিনিময়ে ৭০০ গুন পর্যন্ত সওয়াব গুণেগুণে দেন। আর রোযার সওয়াব তো অগুণিতই। তা আল্লাহর যাকে যেমন ইচ্ছা তাকে তা-ই দিয়ে দেন।
মাহে রমজানের প্রধান ইবাদত রোযা। বাহ্যত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম রোযা হলেও প্রকৃতপক্ষে রোযার রয়েছে এক সবিশেষ পরিচয়। রোযাকে রোযার মত করে পালন করতে না পারলে রোযার মূল উদ্দেশ্যই উদ্ধার হয় না। সেকারণেই আল্লাহ তায়ালা রোযা পালনের সওয়াব অজ্ঞাত রেখেছেন। যার রোযা যত উন্নতমানের, তার সওয়াব তেমনই। অর্থাৎ রোযা পালনের ক্ষেত্রে কোয়ালিটি মেইন্টেইন করা জরুরী। কে কত রোযা রাখলেন, তা দেখার বিষয় নয়। বরং ধর্তব্য হবে, রোযাটা আপনি কতটা বিশুদ্ধতার সাথে পালন করলেন। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে কেবল উপোষ যাপন করলেন, নাকি ইবাদতের দিনকে ইবাদতের মধ্য দিয়ে কাটালেন! রাতকে রাতের মতই ব্যবহার করলেন কিনা তাও বড়ই দেখার বিষয়।
রমজানের রাত সুন্দর করার আরেকটি ইবাদত হলো কিয়ামে রমজান তথা তারাবিহ নামাজ৷ প্রতি রমজানের রাত্রে ২০ রাকাত করে যে তারাবিহ নামাজ আদায় করা হয়, তা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ৷ গুরুত্বের দিক থেকে এটি সুন্নাত হলেও এর ফজিলত অপরিসীম। হাদিস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি ইমান ও নেক নিয়্যাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
গুনাহের ক্ষমা নিয়ে হাজির হয় তারাবিহ। এর পরিধি একটু বেশি হওয়ার কারণে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ সারাবছর আমরা যে গুনাহগুলো করি, তা ফজিলতপূর্ণ তারাবিহ নামাজের বরকতে এ রমজানেই মাফ হয়ে যেতে পারে। তারাবিহর ক্ষেত্রে যেমন পূর্বের গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতি প্রদত্ত হয়েছে, অনুরূপ প্রতিশ্রুতি রোযার বেলাতেও এসেছে। নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি ইমান ও নেক নিয়্যাতে রমজানের রোযা পালন করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
এতে বোধগম্য হয়, রমজান মাসের উক্ত দুটি ইবাদতের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে গুনাহের বেড়াজাল থেকে মুক্তি সম্ভব৷ আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে মাফ করার কথা বলেছেন এর বিনিময়ে। অতএব রোযা ও তারাবিহর ক্ষেত্রে কোনপ্রকার অবহেলা কাম্য নয়।
মাহে রমজানের মূল ইবাদত এ দুটিই। তাই বলে এ দুই ইবাদত করেই থেমে যেতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। যেহেতু এ মাসে প্রতি ইবাদতের বিনিময়ে অধিকহারে সওয়াবের কথাই বলা আছে; সুতরাং এর প্রতিটি মুহূর্তে ইবাদতমুখর হওয়া দাবি করে। যখন যেই ইবাদতের মাধ্যমেই হোক, ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোই রমজানের প্রকৃতি। সেটা কুরআন তেলাওয়াত হতে পারে। হতে পারে দুরুদ পাঠ কিংবা জিকির-আজকার ও নিত্তনৈমিত্তিক মাসনুন দোয়া ইত্যাদি।
মূলকথা হলো, রমজানকে ইবাদতের বসন্ত বলা হয়। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারলে রোযার কোয়ালিটি সুন্দর হবে। বান্দার গুনাহের ক্ষমা হবে। নাজাতের দ্বার উন্মোচিত হবে। তাই ইবাদতের মধ্যেই রমজান কাটানোর প্ল্যান সাজানো উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককেই রমজানের বরকত হাসিলের তাওফিক নসীব করুন। আমীন।