অ্যাডিলেড থেকে: কেনসিংটন পার্কের ২ হোল্ডেন স্ট্রিট। ডন ব্র্যাডম্যানের বাড়ি। কিছুটা দূর থেকে লাল দালানটা চোখে পড়তেই বুঝে গেলাম চলে এসেছি গন্তব্যে। বাড়ির বাইরে একদমই চাকচিক্য নেই। শুনশান নীরবতা। প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখে হতাশই হতে হলো। রাস্তায় দাঁড়িয়েই ছবি তুলছিলাম আমরা। অপর দিকের বাড়ি থেকে এগিয়ে এলেন এক কিশোরী। নাম অলিভিয়া।
আমাদের দলবদ্ধ ছবি তুলে দেওয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ালেন নিজ থেকেই। এসেই বললেন, আমি তোমাদের ছবি তুলে দিচ্ছি।
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ কাভার করতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে খুব খুশি হলেন। পরিচয় পর্ব শেষে জানালেন, ‘আমার বয়স কেবল ১৭, ব্র্যাডম্যানকে আমি দেখিনি। আমার জন্মের আগেই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। তবে আমি তার গল্প শুনেছি। বিখ্যাত একজন মানুষ। আমার বাবা তোমাদের বলতে পারবেন ডনের ব্যাপারে।’
দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যে বাবাকে নিয়ে এলেন। ভদ্রলোক হাসতে হাসতে আমাদের কাছে এলেন। জানালেন তার নাম নয়েল।
তারও যে খুব ভালো স্মৃতি আছে ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে এমনটা না। ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে একবারই সাক্ষাত হয়েছিল, তাও খুব ছোটবেলায়। নয়েলের বাবা অ্যাডিলেড ওভালে ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেছেন তখন। প্রায়ই ব্র্যাডম্যানের খেলা থাকত এই স্টেডিয়ামে।
একদিন বাবার সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন নয়েল। পরে ব্র্যাডম্যানকে দাঁড় করিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন, এই দেখো, আমার ছেলে।
ব্র্যাডম্যান কী বলেছিলেন সেটিও মনে নেই নয়েলের। ক্রিকেট পাগল না হওয়ায় তখন বুঝতে পারেননি কত বড় একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তার। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নয়েল অবশ্য গর্ববোধ করছিলেন। ব্র্যাডম্যানকে যখন ‘ক্রিকেটের গড বললাম তখন তিনি বললেন, ‘না, তার চেয়েও বেশি কিছু।’
‘ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে মাঠে সাক্ষাতের ওই ঘটনার মাহাত্ম্য তখন বুঝতে পারিনি। এজন্য এখনো আফসোস হয়।’ ব্র্যাডম্যানের প্রতিবেশি হতে পেরে গর্ববোধ করেন নয়েল এবং তার মেয়ে অলিভিয়া।
নয়েল জানালেন ব্র্যাডম্যানের একমাত্র ছেলে জন ব্র্যাডম্যান থাকেন ছয় বাড়ি পরই। তবে মানুষের সঙ্গে খুব কম মেশেন।
জনও ক্রিকেট খেলতেন ছোটবেলায়। পোলিও হওয়ার পর বেশি দূর আগাতে পারেননি। বিশ্বজুড়ে বাবার যে সুখ্যাতি সেটির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারেননি।
হতাশা থেকে নিজের নামও বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন ব্র্যাডম্যানের ছেলে। আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে আসেন এই বাড়িতে। যদিও এটি এখন শহরের ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত একটি স্থান।
ব্র্যাডম্যানের বাড়ির পাশেই একটি স্কুল। সন্ধ্যা নামার আগে গেটে তালা লক করছিলেন এক নারী। বয়স পঞ্চাশের বেশি হবে। তিনি জানেন ব্র্যাডম্যান সম্পর্কে তবে কখনো দেখেননি। খ্যাতির কথা স্থানীয়রা কেবল শুনেছেনই। ২০০১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন ডন ব্র্যাডম্যান। সেটিই শুধু মনে করতে পারেন প্রতিবেশীরা।