চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

১৫ বছর পর মূলপর্বে জিতল বাংলাদেশ

টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ

সাউথ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বিশ্বআসরে মূলপর্বে জয় অধরাই থেকে গিয়েছিল টাইগারদের। র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় একাধিকবার খেলতে হয়েছে বাছাইপর্ব, সেখানে অবশ্য অহরহ জয় এসেছে। কিন্তু মূলপর্বে আরেকটি জয়ের অপেক্ষা ঘুচল দীর্ঘ ১৫ বছর পর, নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারিয়ে।

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। তাতে এবারের বিশ্বকাপ মিশন জিতেই শুরু করতে পারল লাল-সবুজের দল। ব্যাটারদের লড়াকু পুঁজির পর বোলাররা ছিলেন উজ্জ্বল, বিশেষ করে ৪ উইকেট নেয়া তাসকিন ও ২ উইকেট নেয়া হাসান। তাতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেকেই জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ।

সোমবার হোবার্টে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা ৮ উইকেটে ১৪৪ রানের মাঝারি পুঁজি পায়। জবাবে ডাচরা পুরো ২০ ওভার ব্যাট করে ১৩৫ রানে অলআউট হয়েছে।

টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের বছরসেরা ওপেনিং জুটি গড়ে সকালটা আলোয় এনে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের ৪৩ রানের জুটি ভাঙার পর হঠাৎ নামে ধস।

হোবার্টের আকাশ টানা মেঘলা। ইনিংসের মাঝে বৃষ্টির কারণে দুবার বন্ধ ছিল খেলাও। মাঠ ভারি থাকায় বল সহজে গড়াচ্ছিল না। পেসাররা পেয়েছেন বাড়তি সুবিধা। বল হাতে বাংলাদেশের জ্বলে ওঠার দিনে ফিল্ডারদের প্রদর্শনীও ছিল চোখে পড়ার মতো।

ভালো শুরুর পর মিকেরেনের করা ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে উড়িয়ে মারতে যেয়ে ১৪ বলে ২ চারে ১৪ রান করে ফিরেছিলেন সৌম্য। মিড উইকেটে ডে লেডের হাতে ধরা পড়েন। পরের ওভারে আউট হন ২০ বলে ৪ চারে ২৫ রান করা শান্ত। টিম প্রিঙ্গলের বলে ফন বিকের তালুবন্দি হন।

সৌম্য-শান্তর বছরসেরা জুটির আগে ওপেনিংয়ে এবছর সর্বোচ্চ ৩৭ রানের জুটি এনেছিল টাইগাররা, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। হারারেতে জুটিতে ছিলেন লিটন দাস ও মুনিম শাহরিয়ার।

ওপেনিং জুটি ভাঙার পর হঠাৎ অমানিশা। ব্যাটিংয়ে ধস। এলোমেলো হয়ে পড়া লাল-সবুজের দল টপাটপ হারিয়ে বসে ৫ উইকেট, ৩৩ রানের মধ্যে। তিনে নামা লিটন দাস প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ১১ বলে ৯ রান করে লোগানের বলে চিপ শটে মিডঅফে কুপারের সহজ ক্যাচ হয়েছেন।

সাকিবও হয়েছেন ব্যর্থ। অধিনায়ক ৯ বলে ৭ রান করে শারিজের বলে স্লগ সুইপ খেলে সীমানার কাছে ডে লেডের দারুণ ক্যাচে মাঠ ছাড়েন। বিনা উইকেটে ৪৩ থেকে চোখের পলকের বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৬৩ রান।

আফিফ এসে শারিজের বলে সুইপ শটে মারেন ছক্কা। পরে বৃষ্টির কারণে খেলা ৭ মিনিট বন্ধ থাকে। বৃষ্টির পরেও চলে উইকেট পতনের ধারাবাহিকতা। ৫ বলে মাত্র ৩ রান করে মিকেরেনের বলে বোল্ড হন ইয়াসির।

বিপর্যয়ের পর সোহানকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়েন আফিফ। মাঝে ২৮ রানে তার ক্যাচ নিতে পারেননি প্রিঙ্গল। বড় বিপদ থেকে রক্ষা মেলে। ডে লেডের বলে ১৮ বলে ১৩ রান করে সোহান আউট হলে জুটি ভাঙে।

দারুণ খেলতে থাকা আফিফ ২৭ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তাসকিন রানের খাতা না খুলে ক্ল্যাসেনের হাতে ধরা পড়েন। শেষদিকে মোসাদ্দেক হোসেন ১২ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ২০ রানের অপরাজিত ক্যামিও ইনিংস খেলায় লড়াইয়ের পুঁজি আসে।

ডাচদের পক্ষে মিকেরেন ৪ ওভারে ২১ ও বাস ডে লেডে ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে দুটি করে উইকেট নেন।

বোর্ডে ১৪৪ রানের পুঁজি জমিয়ে শুরু থেকেই জয়ের আশা বুনতে থাকে বাংলাদেশ। তাসকিনের পেস তোপে ইনিংসের প্রথম দুই বলে উইকেট হারানো নেদারল্যান্ডসের ৬ ওভারে ৪ উইকেট যায় ৩২ রানে।

তাসকিনের প্রথম ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল। ডাচ ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংয়ের ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে ইয়াসিরের হাতে চলে যায়। বল মাটিতে লেগেছিল কিনা, সেজন্য টিভি আম্পায়ারের সাহায্যের দরকার পড়ে। টিভি আম্পায়ার আউট দিলে শূন্য রানে উইকেট হারায় কমলা জার্সিধারীরা।

পরের বলটিও অফ স্টাম্পের বাইরে করেন তাসকিন। বাস ডে লেডের ব্যাটে লেগে বল সোহানের গ্লাভসবন্দি হয়। টানা দুই বলে ২ উইকেট নিয়ে তাসকিন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন।

চতুর্থ ওভারে বল হাতে নেন সাকিব। প্রথম বলে ছক্কা হজম করলেও দ্বিতীয় বলে ৮ রান করা ম্যাক্স ও’ডাউড হন রান আউট। বলটিতে দারুণ ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারিতে ঠেকান আফিফ। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে দুই ব্যাটারের মাঝে হয় ভুল বোঝাবুঝি। ক্রিজের মাঝ পর্যন্ত দৌড়ে ও’ডাউড আবার ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হননি, সাকিব বল ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন।

দুই বল পর কুপার অযথাই দৌড়ে রানের খাতা না খুলে হন রান আউট। শান্তর ছোড়া বল ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন সোহান। পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন কলিন অ্যাকেরম্যান ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। ৪৪ রানের জুটি গড়েন দুজনে। টাইগার ডেরায় খানিক চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিলেন।

২৪ বলে ১৬ রান করা এডওয়ার্ডসের উইকেট নিয়ে স্বস্তি ফেরান সাকিব। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ নেন হাসান। খানিকপর এক রানে হাসানের বলে জীবন পান প্রিঙ্গল। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা শান্ত অতি সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। দুই বল পরই অবশ্য প্রিঙ্গলকে দারুণ এক সুইংয়ে বোল্ড করেন হাসান।

এরপর বৃষ্টির বাধায় আবারও বন্ধ হয় খেলা। বল আর মাঠে না গড়ানোর শঙ্কা জাগে। গাণিতিক হিসেবে তখন বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। বৃষ্টির বাধায় খেলা বন্ধের আগে ডাচদের সংগ্রহ ছিল ১২.৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৬৬ রান।

১২.৫ ওভারে জয়ের জন্য নেদারল্যান্ডসের পাশে থাকতে হতো ৯৮ রান, ৩২ রানে তারা পিছিয়ে তখন। ১৩ মিনিট পর খেলা শুরু হয় এবার। ১৫তম ওভারে ফন বিকের উইকেট তুলে বাংলাদেশকে জয়ের আরও কাছে নেন হাসান। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ নেন তাসকিন।

নিজের শেষ ওভারে তাসকিন তৃতীয় উইকেটের দেখা পান। ডিপ থার্ডম্যানে থাকা হাসানের হাতে ধরা পড়েন শারিজ। একই ওভারের পঞ্চম বলে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে ফিফটি পাওয়া অ্যাকেরম্যানও মাঠ ছাড়েন। পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে মোসাদ্দেকের হাতে ধরার পড়েন। ৪৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় তিনি ৬২ রানের ইনিংস খেলেন।

নেদারল্যান্ডসের শেষ ওভারে জেতার জন্য দরকার ছিল ২৪ রান, হাতে তখন এক উইকেট। শেষ ব্যাটার ফন মিকেরেন সৌম্যর শেষ ওভারে খানিকটা উত্তেজনা ছড়িয়ে দেন। চতুর্থ বলে ছক্কা মারলে সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ১২ রান। পঞ্চম বলে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি। শেষ বলে ডিপ মিড উইকেটে লিটনের হাতে ধরা পড়েন। ১৪ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৪ রান তার।

৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগারের মালিক হয়েছেন ম্যাচসেরা তাসকিন। বল হাতে চমৎকার ছন্দে থাকা হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সাকিব ৩২ রান ব্যয়ে একটি, সৌম্য ৩ ওভারে ২৯ রান বিলিয়ে নেন একটি করে উইকেট।