জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার ২২ মার্চ রাতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুই সাংবাদিককে হেনস্থার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের হেনস্থায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে হল থেকে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য এবং দেশীয় অস্ত্র বের করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতেরও দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘কয়দিন পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি হয়। কিন্তু এতে প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ দেখি না। আমাদের কথা হলো প্রশাসন কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়? চলমান গুন্ডামি, ভন্ডামি, সন্ত্রাসী দূর করে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে হবে।’
ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অস্ত্র থাকে। কারা অস্ত্র রাখে তা সবারই জানা। পান থেকে চুন খসলেই আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেখা যায়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত। হলের গণরুমে নির্যাতন হয়, নিয়মিত গেস্টরুম হয় প্রশাসনের ন্যূনতম পদক্ষেপ দেখতে পাই না। তার প্রমাণ সাংবাদিকদের উপর হামলা হলো। প্রশাসন আর কতদিন এভাবে নিশ্চুপ থাকবে। এরকম ঘটনার সুরাহা হওয়া দরকার।’

এর আগে বুধবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে রড, চাপাতি, রামদা, কাঁচের বোতল, লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যেতে চাইলে বটতলায় তাদের বাধা দেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। সেখানে ওই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের ঘণ্টাব্যাপী বাগবিতণ্ডা হয়। রাত পৌনে ৯ টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে ডিবিসি টেলিভিশনের আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং একুশে টেলিভিশনের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি জোবায়ের আহমেদের দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তেড়ে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। সেখানে ওই দুই সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন জুবায়ের।
অভিয়োগ সূত্রে জানা যায়, জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেনিন মাহবুব, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরানের ইন্ধনে নাসির মুস্তাকিম (জিওলজিক্যাল সাইন্সেস-৪৭ ব্যাচ), আব্দুল্লাহ প্রিন্স (প্রাণীবিজ্ঞান-৪৯ ব্যাচ), অনুপ সরকার দীপ (পরিবেশ বিজ্ঞান- ৪৯ ব্যাচ), মাহমুদুল হাসান শান্ত (রসায়ন- ৪৯ ব্যাচ), মারুফ ফয়সাল (দর্শন, ৫০ ব্যাচ), কাজী রাইসুল জুহালা (নৃবিজ্ঞান, ৫০ ব্যাচ), রাকিবুল হাসান (নৃবিজ্ঞান , ৫০ ব্যাচ) ও আবু নাঈম (বাংলা, ৫০ ব্যাচ) তাদের ওপর হামলা করেন।