সীতাকুণ্ড এর আগেও ট্র্যাজেডি দেখেছিল। সেসময়ও হতবাক হয়ে গিয়েছিল দেশের মানুষ। এবারের ট্র্যাজেডি আরও ভয়াবহ। কনেটেইনার টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ড। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের যে কর্মীরা ছুটে এসেছিল জীবন বাঁচাতে, সেই জীবনও নিভে গেছে সীতাকুণ্ডে কদমরসুলে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা চল্লিশ ছাড়িয়ে গেছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মুহূর্তে এত মানুষের প্রাণ ঝরে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে কাশেম জুটমিল সংলগ্ন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে আগুনের সূত্রপাত হয়। রাত ১০টার দিকে কেমিক্যালের কন্টেইনারে আগুন স্পর্শ হওয়ার সাথে সাথে বিকট শব্দে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা। ভেঙে পড়ে আশপাশের ঘরবাড়ির দেয়াল এবং জানালা।
চ্যানেল আই, চ্যানেল আই অনলাইন সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মানবিক বিপর্যয়ের খবর উঠে আসছে। তবে এমন বিপর্যয়েও কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষ কাউকে পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও ডিপোর কর্মীরা বলেছেন, ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক রয়েছে। এ কারণেই আগুন নেভানো যায়নি এবং এত বড় বিপর্যয় ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে।
এর আগেও নিমতলী থেকে শুরু করে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডিতে কেমিক্যাল সংক্রান্ত বিষয়ই সামনে এসেছে। এ নিয়ে তখন কিছুদিন হইচই হলেও শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। কেউই শিক্ষা নেয়নি। নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা আসেনি। এখানেও এরই পরিণতি লক্ষ্যণীয় হলো। সীতাকুণ্ডের স্থানীয় সংসদ সদস্য এখন অবশ্য বলছেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ জমা করা হয়েছে তা তদন্ত করা উচিত।’ দুর্ঘটনার পর এমন বক্তব্য আগেও শোনা গেছে, এখনও একই ধরনের বক্তব্য আসছে।
তবুও সীতাকুণ্ডের স্থানীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্য অনুযায়ী আমরাও বলতে চাই, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে কনটেইনার টার্মিনালে রাসায়নিক ডিপো করা হলো? কারা দিল এই অনুমোদন? কীভাবে দেওয়া হলো অনুমোদন। এই অনুমোদনের সব ধাপ কি সঠিকভাবে পার হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এজন্য অবশ্য বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিগুলো যথাযথ প্রতিবেদন দেবে বলেই আমাদের আশাবাদ।
যে মানুষগুলো এমন ট্র্যাজেডির শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন, তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং যারা আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে অনেকটাই হয়েছে, তবে আরও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর ভূমিকা রাখতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।