উঠছে ফুটবল মহাযজ্ঞের পর্দা। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর, মাসব্যাপী ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনে কোথাও ঘাটতি রাখছে না স্বাগতিক কাতার। সোনালি ট্রফি সামনে রেখে আটটি ভেন্যুতে লড়বে ৩২ দল। বৈশ্বিক আসরটিতে সমর্থন, দল, প্রিয় খেলোয়াড়কে সাহস জোগাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ভ্রমণ করছে লাখো ফুটবলপ্রেমী।
কোথায় কোথায় হবে হাসি-কান্না, রোমাঞ্চ-উন্মাদনার মঞ্চায়ন, কোথায় উচ্ছ্বাস সবুজ গালিচা পেরিয়ে আছড়ে পড়বে গ্যালারিতে। সেসবের পরিচিতিতে এপর্বে থাকছে ফিফা বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু আল ওয়াকরাহের ‘আল জানুব স্টেডিয়াম’র কথা।
ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের খোঁজে স্টেডিয়াম তৈরি করতে কাতার যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তা খরচের দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে। ব্যয়বহুল আটটি স্টেডিয়ামের প্রত্যেকটিতেই কোনো না কোনো ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আল জানুবও কাতারিদের ইতিহাসের কথা বলে। ডো-নৌকায় চড়ে যেমন মুক্তো খুঁজত তারা, তেমনি এই মাঠেই খোঁজা হবে ফুটবলের সেরাদের।
পারস্য উপসাগরে স্রোতের মধ্যে কেটে চলা ঐতিহ্যবাহী ডো-নৌকার আদলে গড়া হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর স্টেডিয়ামটি। নকশাতে ধরা পড়েছে ঢেউ খেলানো স্থাপত্যশৈলী। ডো-নৌকাটি উপসাগরীয় বাসিন্দারা মুক্তো খোঁজা ও মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করত। বিশাল সমুদ্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খুঁজে আনা সেই সমৃদ্ধশালী ইতিহাসকে, সমুদ্রের দুঃসাহসী অভিযানকে আবারও সামনে আনতে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী এই নকশা।
আল ওয়াকরাহের স্টেডিয়ামটি একেবারেই নতুন নয়। এখানে আগেও খেলা হয়েছিল। বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভেন্যুটি বড় সংস্কারের মাঝ দিয়ে গেছে। মাঠটির ‘আল ওয়াকরাহ্’ নামও পাল্টে আল জানুব রাখা হয়েছে। ৪০ হাজার দর্শক একসঙ্গে দেখতে পারবেন খেলা। দর্শকরা পাবেন জাহাজে ভ্রমণের অনুভূতি। এছাড়াও মাঠ ও মাঠের বাইরে থাকবে সবধরনের আধুনিক সুবিধা।
ফুটবল মহাযজ্ঞের মোট সাতটি ম্যাচ আয়োজন করবে আল জানুব। গ্রুপ পর্বের ৬টি ও শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ। এখানে লড়বে ডারউইন নুনেজ-লুইস সুয়ারেজদের উরুগুয়ে, করিম বেনজেমা-কাইলিয়ান এমবাপেদের ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকেও আতিয়েথতা জানাবে সুন্দর স্টেডিয়ামটি।
ব্রিটিশ-ইরাকি স্থপতি জাহা হাদিদ মাঠটির নকশা করেছেন। রাজধানীর মধ্যভাগ থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে শেষ করা হয়। নতুন করে নির্মাণে খরচ প্রায় ৬৫৬ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামটির আবারও সংস্কারের মাঝ দিয়ে যাবে, তখন দর্শক ধারণক্ষমতা অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।
আল জানুবের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে মাল্টিপারপাস হল, সুইমিং পুল, স্পা ও সবুজ ছাদসহ শপিং সেন্টার রয়েছে। প্রবেশদ্বার ঢেকে রাখা হয়েছে সুন্দর গাছ দিয়ে। ভেন্যুটির হাতের নাগালে থাকছে বিয়ের হল, সাইকেল, ঘোড়দৌড় ও রানিং ট্র্যাক, রেস্টুরেন্ট ও অত্যাধুনিক জিম।