মোহাম্মেদ সালাহ নাকি করিম বেনজেমা— কার হাতে উঠছে ইউরোপসেরার শিরোপা? ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়েই বা কে কাকে পেছনে ফেলতে চলেছেন? ইতি ঘটতে চলা মৌসুমে পরিসংখ্যান, অর্জন আর সম্ভাবনাকে কাটাকুটি করে সাফল্যের সমীকরণ টানলে কে থাকছেন এগিয়ে? প্যারিসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল মহারণের আগে এসব বড় প্রশ্ন ভাসছে!
পরিসংখ্যানের খেরোখাতার সমাধান টানতে চাইলে শুরুতেই আসবে লিভারপুলের ‘ফারাও’য়ের প্রতিশোধ অথবা রিয়াল মাদ্রিদ ‘ব্যাটম্যানের’ দৃঢ় ধারাবাহিকতার কথা। এমৌসুমে জাতীয় দলে পারফরম্যান্স, ক্লাবে শিরোপা এবং ব্যক্তিগত সাফল্য— সবকিছুতে সমানে-সমান লড়ছেন ফ্রেঞ্চম্যান ও মিশর তারকা। শেষের সমাধান যেন আটকে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের নব্বই মিনিটে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে সর্বোচ্চবার মাঠে নামার রেকর্ডে ষষ্ঠ স্থানে আছেন বেনজেমা। লিওন (১২) ও রিয়াল মাদ্রিদের (৬৪) হয়ে মোট ১৪১ বার ইউরোপসেরার মঞ্চে নেমেছেন, পেয়েছেন ৪৬ বার জালের দেখা। অন্যদিকে গোল ও মাঠে নামার তালিকায় সেরা দশে নেই সালাহ। চারটি ক্লাবের হয়ে ৭০ ম্যাচে ৩০ গোল ও ১৩ এসিস্ট আছে লিভারপুল ফরোয়ার্ডের।
সদ্যগত মৌসুমে লা লিগা জয়ী বেনজেমা বছরজুড়ে কাটিয়েছেন দুর্দান্ত সময়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোলের পাশাপাশি ১১ ম্যাচে ১৫ বার পেয়েছেন জালের দেখা, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন আরও দুবার। লা লিগায়ও দুর্দান্ত ছিলেন, ৩২ ম্যাচে ২৭ গোলের পাশে রয়েছে ১২ এসিস্ট। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এমৌসুমে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ গোল ও ১৫ এসিস্ট ফ্রেঞ্চম্যানে নামের পাশে।
এফএ কাপ, কারবাও কাপ জয়ী সালাহও কম যাননি। প্রিমিয়ার লিগে ৩৫ ম্যাচে ২৩ গোলের সঙ্গে তার ১৪ এসিস্ট। জিতেছেন ইপিএলের মৌসুম সেরার গোল্ডেন বুট। সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এমৌসুমে ৫০ ম্যাচে ৩১ বার জালের দেখা পেয়েছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ১৬ বার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২ ম্যাচে ৮ গোল ও ২টি এসিস্ট করে রিয়ালের চোখের বালি হয়ে আছেন।
অলরেডদের তারকা ফরোয়ার্ডের কথা আসলে, তার প্রতিশোধ নেয়ার ভাবনাটাই বেশি আসবে। মহারণের আগে ভিন্ন সময়ে সালাহর কথা সেটাই প্রমাণ করছে। ২০১৮ সালে ফাইনালে যেবার রিয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল লিভারপুল, সেদিন দারুণ ছন্দে থাকা সালাহর সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় ছিল ফুটবলবিশ্ব। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। অনাকাঙ্ক্ষিত চোটে পড়ে প্রথমার্ধ শেষ না হতেই মাঠ ছাড়তে হয় সালাহকে। এবার রোনালদোকে পাচ্ছেন না সালাহ।
ফাইনাল ও ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে সালাহর নিকটতর প্রতিদ্বন্দ্বী কাব্যিক ছন্দে থাকা বেনজেমা। রিয়ালে একসময় রোনালদোর ছায়ায় থাকা ফ্রেঞ্চম্যান এখন ইযূর্গেন ক্লপের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে প্রথমে পিএসজি, পরে চেলসি এবং ম্যানসিটি হয়ে ফাইনালে আরেক কঠিন প্রতিপক্ষ লিভারপুলকে পেয়েছে বেনজেমার রিয়াল। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে লস ব্লাঙ্কোসদের ১৪তম শিরোপা এনে দেয়ার লক্ষ্যে ফ্রেঞ্চম্যানের দিকেই তাকিয়ে থাকছেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
অন্যদিকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন সালাহ। হিসেব-নিকেশ বাকি আছে জানিয়ে নিজেদের সেমিফাইনাল ম্যাচ শেষেই তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলতে চাই। যদি ব্যক্তিগত লক্ষ্য জিজ্ঞেস করেন, আমি মাদ্রিদকেই পছন্দ করব।’
সেই মহারণ প্রস্তুত, প্রস্তুত পরিবর্তিত মঞ্চও, এখন অপেক্ষা শনিবার রাতে খেলা মাঠে গড়ানোর। সালাহকে আবারও কাঁদিয়ে ইউরোপসেরার শিরোপা তালিকা বাড়িয়ে নেবেন বেনজেমা, নাকি জমানো ক্ষোভের বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে অলরেডদের সপ্তম শিরোপা এনে দেবেন সালাহ, উত্তর পেতে অপেক্ষা একটা দিনের।