চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বনেতাদের এত অবহেলা কেন?

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে জীবন বাঁচানোর জন্য ছুটে বেড়াচ্ছিলেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সেই নির্মম পরিস্থিতিতে বিশ্বের কোনো দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়নি। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের সময় তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য। প্রতিবেশীর চরম দুর্দিনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মানবিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল।

তবে এরপর থেকেই বিশ্ব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে! রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলেও তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহযোগিতার বদলে চীন-ভারত পর্যন্ত মিয়ানমারের পক্ষ নেয়। এমনকি তাদের ভেটোর কারণে খোদ জাতিসংঘও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

শুধু তাই নয়, নজিরবিহীন অমানবিক রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ আরেক শঙ্কার কথা জানিয়েছে। এতে রোহিঙ্গা ইস্যু যে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে কতটা অবহেলিত সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী বছরের জাতিসংঘের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে ভাটা পড়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৮১ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই তহবিলে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত অর্থের মাত্র ৪৯ শতাংশ বা ৪২৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে।

সেই হিসাবে রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ ও দাতাসংস্থার কাছ থেকে সংগ্রহ করা তহবিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্ধেকও হয়নি। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ জাতিসংঘ। ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, রোহিঙ্গা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। এতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়বে।

এমন একটি অমানবিক সংকট সমাধানে পাঁচ বছর কম সময় নয়। আমরা বরাবরের মতো বলতে চাই, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে, বিশেষ করে তাদেরকে নিজ ভূমিতে ফেরানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতেই হবে। কেননা তাদের অনুরোধেই বাংলাদেশ মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এই বোঝা বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বহন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

আমরা শুরু থেকেই বলছি, এই সংকট মিয়ানমারের, মিয়নামরকেই তা শেষ করতে হবে। নিজস্ব নাগরিকদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়ে প্রতিবেশী দেশের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া আধুনিক ও সভ্য বিশ্বের কারও কাজ হতে পারে না। এবং কেউ সেটা সমর্থনও করতে পারে না। সেজন্য ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের মাধ্যমে সংকট সমাধানে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।