চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘মৃত্যুর আগে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই’

স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে বললেন রকিবুল হাসান

ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্টিকার লাগিয়ে খেলতে নেমে আলোড়ন তুলেছিলেন ১৮ বর্ষী এক তরুণ। টেস্ট ক্যারিয়ার গড়তে না পারা সেই ক্রিকেটার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্রিকেট পুনর্গঠনে রাখেন ভূমিকা। ক্রীড়াক্ষেত্রে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার তাই স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন সাবেক ক্রিকেটার এ এস এম রকিবুল হাসান।

সুখবরটি পাওয়ার খানিক পরই রকিবুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া। কণ্ঠে ছিল আনন্দের রেশ, সম্মানিত হওয়ার গর্ব। একনাগাড়ে বলে গেলেন নিজের অনুভূতি।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

‘যেকোনো সম্মান ও স্বীকৃতি মানুষকে অনেকবেশি উৎসাহিত করে, আনন্দিত করে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবদ্দশায় ভালো কর্মকাণ্ড যখন দেশের বা সমাজের কোনো কাজে অবদান রেখে থাকে, পরবর্তীতে যখন সেটা স্বীকৃতি পায়, সেটা আনন্দের ব্যাপার।’

১৯৭১ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় সেদিন শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক একাদশ ও পাকিস্তান একাদশের অনানুষ্ঠানিক টেস্ট ম্যাচ। সুযোগ পেয়েছিলেন রকিবুল। ম্যাচের আগেরদিন বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল বন্ধু রকিবুলকে ব্যাটে জয় বাংলা লেখা স্টিকার লাগিয়ে খেলতে নামার পরামর্শ দেন।

ম্যাচের দিন সকালে জয় বাংলা স্টিকার নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন রকিবুল। গোটা স্টেডিয়াম জয় বাংলা স্লোগানে গর্জে ওঠে। ৭০ বর্ষী ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের কাছে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার খবরটি যেন তাই ভিন্ন এক আবেগে ভেসে যাওয়ার উপলক্ষই এনে দিয়েছে।

‘স্বাধীনতা পুরস্কার তো আমার জন্য বড় সম্মানের। এটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনীত করেছেন। আমি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার ক্রিকেটে অবদান সেই পাকিস্তান আমল থেকে এখন পর্যন্ত রয়েছে। সেটার স্বীকৃতি হিসেবে উনি আমাকে এটা দিয়েছেন।’

১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অন্যতম সদস্য রকিবুল হাসান। তিনি তিনবার আইসিসি ট্রফিতেও খেলেছেন। ক্রিকেটীয় চেতনা থেকেই এমন অর্জন সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইলেন রকিবুল।

‘আমার এই সম্মানটাকে আমি ভাগাভাগি করতে চাই। আমার আগে এবং আমার সময়ের সকল ক্রিকেটারদের, খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে এবং অবশ্যই বর্তমান ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যেও এটা আমি উৎসর্গ করলাম।’

‘আমার পরিবারকেও আজকের দিনে আমি এটা উৎসর্গ করলাম। তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা, তাদের সমর্থন আজকে আমাকে এই জায়গায় এনেছে।’

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সাবেক এ ক্রিকেটার দেশ নিয়ে বলেছেন প্রত্যাশার কথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখে যাওয়ার ইচ্ছার কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করলেন।

‘আমি সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকবে। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ রাখার জন্য আমি আবেদন করব আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে। যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে বা সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে যেন সামনে আনা হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানে এই দেশ কীভাবে স্বাধীন হয়েছে। কারণ আমি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি। আজকে সেই স্বীকৃতি খেলোয়াড় হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছি।’

‘আমি দেখতে চাই বাংলাদেশ যেন একটা দুর্নীতিমুক্ত দেশ হয়। একটা অনুকরণীয় দেশ যেন হতে পারে। দুর্নীতি আগেও ছিল, এখনো কম-বেশি থাকবে। দুর্নীতির মাত্রাটা যেন খুব কম থাকে। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত উন্নত দেশেও কিন্তু দুর্নীতি আছে। আমি বলব না সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতি পুরোপুরি মুক্ত হবে। আমি শুধু বলব যে এটাই আমার প্রত্যাশা। যেন এটা আমি দেখতে পাই। এরকম একটা বাংলাদেশ মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই।’

স্বাধীনতার ৫২ বছরে ক্রিকেট নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাই শোনালেন ৭০ বর্ষী ম্যাচ রেফারি ও ক্রিকেট বিশ্লেষক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি ম্যাচে জয়ের দিনে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার খবর তার হৃদয়ে বেশ দোলা দিয়েছে। আলাপকালে সেই সরল স্বীকারোক্তিটাও দিলেন দেশবরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব।

‘যে মুহূর্তে আমি আপনার সাথে কথা বলছি, সেই দিন (৯ মার্চ) কিন্তু সকল আলোচনা সকল বিশ্লেষণকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দিয়ে বাংলাদেশের টাইগাররা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টুয়েন্টিতে পরাজিত করেছে। টি-টুয়েন্টিতে সবসময় আমাদেরকে বলা হতো বা আমরা জানিও যে অতটা এগিয়ে যাইনি। যেরকম ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এগিয়েছি।’

‘আজকে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া একটা কাকতালীয় ব্যাপার। ঠিক সেই দিনেই ম্যাচ জয়ের আনন্দ, তাও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এদিন আমার এই খবরটা আসল। এই টি-টুয়েন্টি দিয়েই ফরম্যাটটিতে এগিয়ে যাওয়ার শুরু হোক। একইসঙ্গে আমাদের ক্রিকেটাররা অনুভব করুক, তাদের ভেতর সেই আস্থাটা আছে। তারা যেন এক্সপ্রেস করে। কমপক্ষে ৫ বছরের মাথায় যেন আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি। সম্ভব হলে তারও আগে।’

‘আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব। সেটাই আমি চাই। সেটা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাদের কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে যে দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য খেলতে হবে। দেশ আগে তারপর সবকিছু।’

সাক্ষাৎকারের একদম শেষদিকে চ্যানেল আইয়ের প্রতি রকিবুল হাসান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও বার্তা সম্পাদক শাইখ সিরাজের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন।

‘চ্যানেল আইয়ের প্রত্যেকে আমাকে ভালো করেই জানে। সাগর ভাই, শাইখ সিরাজ ভাই, আরও অন্যান্য যারা আছেন, আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে এক্সপোজ করেছে। আমাকে ও আমার কর্মকাণ্ডকে সামনে এনেছে। তাই তো দেশবাসী আজকে জানে যে আমি কী করেছি। আমার অবদান কী। যতটুকু ছিল তারা জানতে পেরেছে। সেজন্য ধন্যবাদ।’