সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেছেন, ‘আজ রাত থেকেই বিশ্বকাপ ফুটবলের লড়াইয়ে শক্তি ও নান্দনিকতার বহিঃপ্রকাশ শুরু হবে। প্রথম ম্যাচ ইংল্যান্ড বনাম ইরানের চেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগাল এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার লড়াই হবে বেশি উপভোগ্য। শক্তি-সামর্থ্য, প্রাচুর্যও দেখা যাবে এই ম্যাচে। একই সাথে আমেরিকা এবং ওয়েলস এই দুই দলের লড়াইটাও হবে চমৎকার। গতকাল কাতার-ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ দর্শকদের যে চাহিদা পূরণ ব্যর্থ হয়েছে, হয়ত আজ রাতেই তা পাল্টে যাবে। দর্শকদের হৃদয়ে ফুটবলের নতুন এক উত্তাপ স্পর্শ করবে।’

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আজ দ্বিতীয় দিন। গতকাল উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার ইকুয়েডরের কাছ ০-২ গোলে পরাজিত হয়। বিশ্বকাপে কাতারের প্রথম ম্যাচ নিয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা খানিকটা প্রাক আশাবাদ ব্যক্ত করলেও মাঠে কাতার ছিল অনেকটাই নিষ্প্রভ এবং অনালোকিত। আক্রমণে কোনো ধার ছিল না, যেটা বেশি ছিল ইকুয়েডরের। ফলে জয় মুঠোবন্দি করতে কোনো সমস্যা হয়নি ইকুয়েডরের। শুধু দলগতভাবে নয়, ইনডিভিজ্যুয়াল পারফরম্যান্সেও কাতার ছিল অনেক অনেক পিছিয়ে।
আজ বিশ্বকাপ ফুটবলের মোট তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যা ৭টায় গ্রুপ ‘বি’ থেকে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইরান। রাত ১০টায় গ্রুপ ‘এ’ থেকে আফ্রিকান নেশনস কাপ চ্যাম্পিয়ন সেনেগাল এবং নেদারল্যান্ডস মুখোমুখি হবে। রাত ১টায় একে অপরের মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েলস। উল্লেখিত কোনো দলই সেই অর্থে আমাদের ফুটবলমোদীদের কাছে তেমন জনপ্রিয় নয়। ফলে আজকের তিনটি ম্যাচ নিয়ে এদেশের আমজনতার খুব একটা আগ্রহ-আবেগ নেই। তবে যারা ফুটবলপ্রেমিক তারা এই তিনটি ম্যাচের নির্যাস নিতে ভুল করবেন না।
ইরান এবং ইংল্যান্ড এর আগে কখনোই কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হয়নি। আজই তারা প্রথম ইংল্যান্ডকে মোকাবিলা করবে। এই ম্যাচ নিয়ে ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেন, ‘ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ডের অবস্থান ৫। এই বিশ্বকাপ তারা অন্যতম হটফেভারিট দেশও। ইংল্যান্ড বরাবরই শক্তিশালী, চৌকস। প্রিমিয়ার লিগে খেলা চকচকে সব ফুটবলারে পরিপূর্ণ এক দল। লাইনআপও চমৎকার। ফরোয়ার্ডে রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হ্যারি কেন। নেতৃত্বও তার হাতে। ইংল্যান্ড আজ চাইবে বড় ব্যবধানে ইরানকে পরাজিত করতে। কোচ সাউথগেট যে নিশানা এঁটে বসে আছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবদিক দিয়ে ইংল্যান্ডকে অনেক সামনে এগিয়ে রাখবে।’
এই বিশ্বকাপে ইরান আন্ডারডগ, যাদের হারানোর কিছুই নেই। আবার সবচেয়ে বেশি বয়সী ফুটবলারদের নিয়ে দলটি গড়া। এই দেশটি এবার নিয়ে মোট ছয়বার বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সেই ’৭৮ সাল থেকে খেলছে তারা। কিন্তু কখনোই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি। ফলে মনোবেদনাও তাদের কম না। এ যাবত ইরান জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচে। ’৯৮ সালে তারা আমেরিকাকে হারিয়েছিল। এরপর সর্বশেষ বিশ্বকাপে হারিয়েছিল মরক্কোর মতো শক্তিশালী দলকে। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে ইরানের পর্তুগিজ কোচ কার্লোস কুইরোজ বলেছেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার কৌশল নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্য পূরণ হলে ইরান ইতিহাস গড়বে। আর তার দলে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ফরোয়ার্ড লাইনে রয়েছেন মেহদী তারেমি এবং সর্দার আজমউন। যাদের ইউরোপিয়ান পেশাদার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

প্রথম ম্যাচের চেয়ে আজকের দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগাল এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার লড়াই বেশি আনন্দময়-উপভোগ্য হবে বলে ইমতিয়াজ সুলতান জনি প্রত্যাশা করছেন। ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী নেদারল্যান্ডস প্রতিপক্ষ সেনেগালের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এই দেশটির অবস্থান ৮। অন্যদিকে সেনেগাল ১০ ধাপ পিছিয়ে, তাদের অবস্থান ১৮। বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস অভিজ্ঞ আবার পোড়াকপালের এক দলও। বিশ্বকাপের ট্রফির পথে থেকেও তারা বারবার পথ হারিয়ে ফেলেছে। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তারা ফাইনালে হেরে যায় স্পেনের কাছে। এবার নেদারল্যান্ডস কতদূর এগোতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। অবশ্য দলটির কোচ লুইস ফন গাল বলেছেন, তার টিম ভারসাম্যপূর্ণ এক দল। যেখানে ফুটবলারদের মাঝে পেশাদারিত্ব ও এক অপরের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুবই শক্ত। এই বিষয়টিকে তিনি খুব ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেন, ‘এই দুদলের খাতা-কলমের ব্যবধান অনেকটাই পরিষ্কার। নেদারল্যান্ডস অভিজ্ঞতা এবং টেকনিক্যালি অনেক এগিয়ে। সেনেগালও আবার আফ্রিকার মধ্যে এখন সেরা। এ বছরের প্রারম্ভে তারা আফ্রিকান নেশনস কাপে টাইব্রেকারে মিশরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করেছে। এটি তাদের প্রাণশক্তি। ফলে রক্তে তাদের উৎসাহ আর উদ্দীপনার কোনো ঘাটতি নই। এই দলের মূল চাবিকাঠি সাদিও মানে না থাকাতে শক্তিমত্তা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই দুদলের লড়াইটা খুবই উপভোগ্য হবে। সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস ম্যাচে শক্তির প্রাচুর্যও দেখা যাবে। তবে সবমিলিয়ে নেদারল্যান্ডসকেই এগিয়ে রাখবো।’
ইমতিয়াজ সুলতান জনি আরও বলেন, ‘আফ্রিকানরা তো আবার অঘটন পিয়াসী। প্রতিপক্ষ সুযোগ দিলে ফসল ঘরে তুলতে তারা কার্পণ্য করবে না।’
আজকের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েলস। আজকের ম্যাচ নিয়ে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চে ডুবে আছে ওয়েলস। ৬৪ বছর পর ওয়েলস বিশ্বকাপ খেলবে আজ কাতারের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে। সবার তাই সীমাহীন আনন্দ। যে যেখানে আছে সেখান থেকেই ম্যাচ দেখবে। ওয়েলস ক্যাপ্টেন গ্যারেথ ফ্র্যাঙ্ক বেল বলেছেন, আজ তারা তরুণদের নিয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করার প্রত্যয়ে মাঠে নামবেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েলস ম্যাচ নিয়ে সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেন, ‘ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ১৬ এবং ১৯-এর মধ্যে খেলা। বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ দলের সাথে এক নতুনের লড়াই। নতুনরা (ওয়েলস) উচ্ছ্বসিত, রোমাঞ্চিত, ভীষণরকম কমিটেডও। এসবকে বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা ঘুমিয়ে পড়বেন তারা এই লড়াই মিস করবেন।’