চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বিশ্বকাপ: কাতারে আমার প্রথমদিন

কাতার থেকে: আমার ক্রীড়া সাংবাদিকতার জীবন কাতারের রাজধানী দোহা পান্থশালার মতো। অসংখ্য ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট কাভার করতে ইউরোপ-আফ্রিকা যাওয়ার পথে ট্রানজিট হয়েছে কাতারের রাজধানী। দু’তিন ঘণ্টার ট্রানজিট যাত্রী হিসাবে কাঁচের ওপার থেকে দোহা দেখেছি। একবার এক এয়ার লাইন্সের সৌজন্যে পুরো দু’দিন দোহায় ছিলাম। প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় না বেরিয়ে হোটেল আর শপিং মলেই সেই সময়টা কেটেছে।

এবার বিশ্বকাপ কাভার করতে দোহাগামী উড়ানে চড়ার আগে আমার ভিন্ন অনুভূতি, মাত্র ছয় ঘণ্টার যাত্রায় পৌঁছে যাবো বিশ্বকাপে। একসময়ের মরুভূমি সর্বস্ব দোহার নতুন রূপ দেখার ব্যাকুলতায় কেটেছে সেই ছয় ঘণ্টা। মাঝে ২০১৯’এ দোহায় এসে টের পাচ্ছিলাম বিশ্বকাপে বিশ্বকে চমকে দিতে মোহনীয় রূপে সাজছে কাতার।

১৭ তারিখ মাঝরাতে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর শুক্রবার সকালে হোস্ট কান্ট্রি ব্রডকাস্টার সেন্টারে আসার পথে দেখলাম পাশ্চাত্য যাই বলুক, বিশ্বকাপ’কে রাঙিয়ে দিতে সাজসজ্জার কমতি রাখেনি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মধ্যপ্রাচ্যের এই বিত্তশালী রাষ্ট্রটি। ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা এর আগে স্বপ্নেও ভাবেনি কোনো দেশ।

এর আগে এক বিশ্বকাপ আসর আয়োজন করতে রাশিয়া খরচ করেছিল ১৩ বিলিয়ন, তার কতগুণ বেশি খরচ করছে কাতারিরা ভাবলে মাথা ঘুরে যাওয়ার দশা! অনেকে বলবেন টাকার গরমের কথা। আমার কাছে মোটেই তা মনে হয় না। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে কাতারিরা কিনেছে পৃথিবীর অন্যতম দামী ফুটবল ক্লাব পিএসজি। বাঘে-সিংহে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর মতো পিএসজি একই সাথে দলে রেখেছে মেসি, নেইমার, এমবাপে’র মতো ইতিহাসের অন্যতম সেরা তিন ফুটবল নক্ষত্রকে।

এটাকে শেখদের খেয়ালখুশি ভাবেন যারা, তাদের চিন্তায় গলদ আছে। কাতার এয়ারওয়েজ, আল-জাজিরা’র মতো পিএসজি’কেও বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে বসিয়ে কাতারকে বিশ্বসেরা ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জানান দিচ্ছে দেশটি।

বিশ্বকাপের মূলপর্বে এবারই প্রথম খেলছে তারা। সবকিছু মিলিয়ে এটা ভাবতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না যে, কাতার ফুটবলে বিনিয়োগ করছে অনেক বড় উচ্চাভিলাষ নিয়ে। এটা শুধু একটা-দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য নয়। শুধু ফুটবল কেনো, এ যাত্রায় দোহা শহরের এপর্যন্ত যা দেখেছি তাতে আমার মুগ্ধতা ডানা মেলছে স্বপ্নের আকাশে। বিশাল, বিশাল রাস্তা, ফ্লাইওভার, অট্টালিকা, ছিমছাম পরিবেশ এবং অগ্রগতিতে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশী দক্ষ-অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়ে কাতার এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে।

দোহার রাস্তায় উবার চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা বাংলাদেশের কুমিল্লার তরুণ শাহ আলম বললেন, বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকে গত দশ বছরে কাতার নিজেকে সাজিয়েছে মনের মতো করে। কঠিন মরুর বুকে আরামদায়ক হাজারো আবাসন ভবন, মেট্রোর দ্রুত সম্প্রসারণ, আরামদায়ক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম, এত কাজ হলো। তবে কাতারিরা থামবে না। আরও অনেক কাজ হবে, বাংলাদেশের আরও শ্রমিক আসবে এখানে, আমাদের প্রচুর চাহিদা ওদের কাছে।

দোহায় আসার পর পেরিয়েছে বারো ঘণ্টা। যতটুকু দেখলাম, কথা বলে জানলাম, তাতে বোঝা গেছে কাতারের সাথে, কাতারের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের নাম জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্য হয়ে। চার লাখ বাংলাদেশি কাজ করেন এখানে। নির্মাণ কাজ ছাড়াও গ্রোসারি, উবার চালনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি ভাই নিজেদের শ্রম, ঘাম দিয়ে কাতার আর নিজেদের ভাগ্য গড়ছেন।

শুধু এখানেই থেমে নেই তারা। বিশ্বকাপে হোস্ট কান্ট্রি ব্রডকাস্ট সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবী বিশেষজ্ঞ হিসাবে বাংলাদেশের রফিকুল, আসিফরা আছেন সদর্পে। দোহায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের ছেলে আসিফ কাজ করেন এক মেডিকেল সেন্টারে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রডকাস্ট সেন্টারে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে। জানালেন, অসংখ্য বাংলাদেশি এবার বিশ্বকাপ আয়োজনের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

শুক্রবার বিকেলে দোহার কর্নিশনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ জড়ো হবেন কাতার দলকে সমর্থন জানাতে। বাংলাদেশি সাংবাদিক হিসাবে বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছি। বাংলাদেশ দল যেহেতু ফিফা র‌্যাঙ্কিং’য়ে দেড়শোর মধ্যেও নেই তখন স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে মনে হয় অনাহুত, আউটসাইডার।

শাহ আলম, রফিকুল, আসিফদের সরব উপস্থিতি জানিয়ে দেয় মাঠের বিশ্বকাপে না থাকলেও আমাদের বাংলাদেশ আছে বিশ্বকাপ আসরে আয়োজকদের সহযোগী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। এটা মোটেই হেলাফেলার নয়। একদিন পরেই শুরু হচ্ছে এশিয়ায় দ্বিতীয় এবং আরবের বুকে প্রথম বিশ্বকাপ।

ফুটবল বিশ্বকাপের খবর জানানোর আরও অনেক সময় আছে সামনে। তার আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনের মানুষগুলোর খবর জানাই। মেসি, নেইমার, এমবাপে, বেনজেমারা মাঠে নামলে মঞ্চ সাজানোর পেছনের কর্মীদের অবদানের কথা আর তুলে ধরা হবে না।