চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘ফ্রান্স এগিয়ে, তবে মরক্কো আনপ্রেডিক্টেবল’

সাবেক তারকা ফুটবলার খোন্দকার রকিবুল ইসলাম

অধিনায়ক লিওনেল মেসির নানান রেকর্ডের মধ্যে দিয়ে শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। মেসি কাল রাতটা অনেকটাই মাতিয়ে তোলেন নিজের ছন্দায়িত ফুটবলের অপরূপতা দিয়ে। নিজে গোল করেন, অ্যাসিস্ট করেন।

বিশ্বকাপে বেশি গোল করে টপকে গেলেন স্বদেশের বাতিস্তুতাকে। বেশি ম্যাচ খেলে জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের সঙ্গীও হলেন। আবার বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার কৃতিত্বটাও নিলেন। কিন্তু এসবের বাইরে কাল আসলে সবার মূল দৃষ্টি ছিল শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ফলাফলটা কী হয় সেটা নিয়ে।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

স্বভাবতই ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ছিল নানা সংশয় আর শঙ্কা। প্রতিপক্ষ লুকা মদ্রিচের নেতৃত্বে দুর্দমনীয়, অপ্রতিরোধ্য ক্রোয়েশিয়া বলেও কথা। যারা ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে বুলেটবিদ্ধ করে এসেছেন। তাদের সামনেই আবার সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা। কিন্তু না, আর্জেন্টিনার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের কাছে হেরে গেছে ক্রোয়েশিয়া। স্কালোনির গেম প্ল্যান শতভাগ সফল হয়েছে।

কাল ম্যাচের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়া ছিল ভীষণ আক্রমণাত্মক। ভেঙেচুরে প্রতিপক্ষের সীমানা তছনছ করার অভিপ্রায়ে সংঘবদ্ধ আক্রমণে যাচ্ছিল বারবার। বিপরীতে আর্জেন্টিনা ছিল অনেকটাই ‘শান্তশিষ্ট’ দর্শনে বিশ্বাসী। এই দর্শন মাথায় ধরে ডিফেন্স লাইনকে মজবুত রেখে মধ্যমাঠ দখল আর পাল্টা আক্রমণে সক্রিয় থাকে তারা।

খেলার সূচনাতে বল দখলে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে থাকলেও তা অনেকটাই ‘ছোটাছুটি’তে পরিণত হয়। ফলে টার্গেট শট করতে ব্যর্থ হয় বারবার। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা পাল্টা আক্রমণ থেকে দ্রুত গোল আদায় করে নেয়। মেসি, আলভারেজ সংযোগের স্ফুরণ ঘটে মারাত্মকভাবে। পেনাল্টি এবং পরবর্তী দু’গোল আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করে। আলভারেজের দেওয়া প্রথম গোলটি ছিল একেবারেই ‘ম্যাজিক’ ওয়ার্ক।

‘স্পাইডার’খ্যাত আলভারেজ নিজেদের সীমানা থেকে বল নিয়ে দুর্দান্ত গতিতে ছিঁড়েফুঁড়ে বেরিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের বুক চিরে গোল করেন। আর তৃতীয় গোলটি ছিল মেসি ম্যাজিকের অপরূপ এক নান্দনিক উপস্থাপন। ডানপ্রান্ত দিয়ে ড্রিবলিং করতে করতে বক্সে ঢুকে বল এগিয়ে দেন পেনাল্টি বক্সে আলভারেজের পায়ের কাছে। আলভারেজ ফিনিশিংটা দেন মেশিনের মতো করে।

কালকের ম্যাচ নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক তারকা ফুটবলার খোন্দকার রকিবুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, ‘মেসির কাছে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা সে দেখিয়েছে। মেসির অনবদ্য নেতৃত্ব ও পারফরম্যান্স আর স্কালোনির চমৎকার কৌশলের কাছে পরাভূত হয়েছে ক্রোয়েশিয়া। কাল আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইনও ছিল শক্তিশালী। ফলে ক্রোয়েশিয়া কামড়ে ধরার কোনো সুযোগ পায়নি। মেসি তার সমর্থক, ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। মেসি প্রমাণ করেছে সক্ষমতা, পারঙ্গমতা, তার ক্রিয়েটিভিটি। এখন ফাইনালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ফাইনালে মেসি নিশ্চিত আরও নতুন কিছু উপহার দেবে।’

খোন্দকার রকিবুল ইসলাম সত্তর দশকে আমাদের ঘরোয়া লিগের মাঠ মাতানো ফুটবলার। লেফট উইং ব্যাক পজিশনে খেলতেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছেন অনেক অনেকদিন। জাতীয় দলের হয়েও খেলেন দীর্ঘসময় ধরে।

আর্জেন্টিনার সাথে ফাইনালে কার দেখা হবে ফ্রান্স না মরক্কো? এমন প্রশ্ন করতেই খোন্দকার রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সব বিবেচনায় নিঃসন্দেহে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স-ই বেশি এগিয়ে। কিন্তু এই বিশ্বকাপে একেবারেই আনপ্রেডিক্টেবল একটি দল মরক্কো। যারা প্রতিনিয়ত অঘটনের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা যে নতুন কোনো অঘটনের জন্ম দিতে পারবে না, সেই গ্যারান্টি কোথাও নেই।’

ফ্রান্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবমিলিয়ে একটি পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দল ফ্রান্স। প্রতিটি সাইডই তাদের শক্তিশালী। তিউনিশিয়ার মধ্যকার ম্যাচটি বাদ দিলে প্রতি ম্যাচেই তারা তাদের মতো করে ভালো খেলেছে। ফ্রান্স দলটিতে পরীক্ষিত উঁচুমানের ফুটবলাররা রয়েছেন। তবে এই দেশটির মূল ম্যাজিক হল কিলিয়ান এমবাপে। গতি আর ড্রিবলিং এ যিনি বিশ্বসেরা। প্রত্যেকটি ম্যাচে সে প্রমাণ তিনি রেখে চলেছেন।’

‘আজকের ম্যাচেও তিনি যথারীতি ক্রীয়াশীল থাকবেন। লেফট ও রাইট উইং দিয়ে মরক্কোর সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। আর সামনে থাকবেন জিরুদ। খুব ভালো ফর্মে রয়েছেন এই খেলোয়াড়টিও। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জয় পেতে গেলে আরও অনেককিছুর সহায়তাও লাগবে।’

এবারের বিশ্বকাপে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে মরক্কো। শুরুতে মরক্কো আমজনতার কাছে অনেকটা অচেনা-অজানা থাকলেও একের পর এক জয়ের মধ্যে দিয়ে তারা এখন আলোচিত এক দল। জনসমর্থনেও তারা এখন বড় ভাগ বসিয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে এই দেশটি স্পেনকে টাইব্রেকারে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। এখানেও তারা চমক জাগানিয়া ফলাফল করে। কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে জানান দেয়— যেকোনো দলকে পরাজিত করার পূর্ণ সক্ষমতা তাদের রয়েছে।

এমন প্রেক্ষিত মনে করিয়ে দিতেই খোন্দকার রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘মরক্কো আসলেই এই বিশ্বকাপের এখন সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল ভয়ডরহীন দল। নিজেদেরকে এখন পর্যন্ত তারা অনতিক্রম্য রেখেছে। ম্যাচে পরাজয়ের কোনো কালিমা নেই। বিপরীতে শক্তি ও সাহসের প্রতীক যেনো তারা। কাউকে ভয় পাচ্ছে না। এ এক বিরাট সাফল্য। এই দলটি আজকেও সিংহের মতো আক্রমণ শুরু করবে।’

‘হতে পারে আজ তারা আরও নতুনরূপে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। তবে কোনো কারণে অভিজ্ঞ ফ্রান্স মাঠে খেই হারিয়ে ফেললে মরক্কো সেটা পুঁজি করতে ভুল করবে না। আমি মনে করি কাইলিয়ান এমবাপেকে আটকানোর পরিকল্পনাও থাকবে। যদি মরক্কো জয়ী হয় সেটাও হবে এক নতুন ইতিহাস। এই বিশ্বকাপে তো কতকিছুই ঘটে গেল।’

সবশেষে খোন্দকার রকিবুল ইসলাম বলেন, সন্দেহ নেই ফ্রান্স ফাইনালে উঠলে এবারের ফাইনালের লড়াইটা অন্যরকম রূপ নেবে। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডের লড়াই-এ ফ্রান্সের কাছে ৩-৪ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে যে অনিঃশেষ ব্যথা পেয়েছিল সেই ব্যথার কথা ভোলেনি। আর্জেন্টিনারও সুযোগ আসবে সেই ব্যথা পরিশোধের। আর এমন লড়াই হলে ফুটবল দর্শকরা একটি অন্যরকম ফাইনাল দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে।