ভারতের বিপক্ষে ব্যাটে নেমে শুরুটা ভালো করলেও শেষের দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় পাকিস্তান। স্বল্প পুঁজি নিয়ে বোলিং আক্রমণেও ব্যর্থ হয় তারা। রোহিতের ঝড়ো ইনিংসে লণ্ডভণ্ড হয়েছে বাবর আজমের দল। ৭ উইকেটের বড় জয়ে রীতিমত উড়ছে ভারত।
শনিবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটে নেমে ৪২.৫ বলে ১৯১ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। জবাবে নেমে ১১৭ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে ভারত।
১৯২ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে রান তোলা শুরু করে ভারত। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠে একাদশে ফেরা শুভমান গিল শুরুতেই রানের গতি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে শাদাব খানের দারুণ ক্যাচে ১১ বলে ৪টি চারে গিল ১৬ রানে ফেরেন।
রোহিতের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় অধিনায়কের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট থেকে রক্ষা পেলেও কোহলি ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। হাসান আলীর বলে মোহাম্মাদ নেওয়াজ ক্যাচ নিলে ১৮ বলে ৩ চারের ইনিংসটি থামে।
১৩তম ওভারে প্রথম বলে দ্রুততম ফিফটির দেখা পান রোহিত। তিনটি চার ও চারটি ছক্কায় ৩৬ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি।
টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। তবে বাধ সাধেন শাহিন শাহ আফ্রিদী। ২১.৪ ওভারে দলীয় ১৫৬ রানে পাকিস্তান পেসারের ধীরগতির অফকাটার বল মিডউইকেটের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ইফতিখার আহমেদের হাতে। ছয়টি করে চার ও ছক্কায় ৬৩ বলে ৮৬ রান করেন রোহিত।
৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন শ্রেয়াস আইয়ার। সে সঙ্গে নিজের ফিফটিও পূর্ণ করেন তিনি। ৬২ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন শ্রেয়াস। তাকে সঙ্গ দেয়া লোকেশ রাহুল করেছেন ২৯ বলে ১৯ রান।
পাকিস্তানের হয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদী দুটি উইকেট নেন। এছাড়া হাসান আলী নেন একটি উইকেট।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটে নামা পাকিস্তানের দুই ওপেনারের শুরুতেই চার মারার নেশায় পেয়ে বসে। জাসপ্রীত বুমরাহর করা প্রথম ওভারে আসে চার রান। বাউন্ডারি মারেন আবদুল্লাহ শফিক। পরে মোহাম্মাদ সিরাজের করা দ্বিতীয় ওভারে তিনটি চার মারেন ইমাম উল হক। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলটি সীমানা ছাড়া করেন শফিক। বল হাতে বুমরাহ অবশ্য পঞ্চম ওভারটিতে পান মেডেন। কমতে থাকে রানের গতি।
অষ্টম ওভারে ভাঙে ৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি। শফিক ২৪ বলে ৩ চারে ২০ রান করে সাজঘরে যান। বল হাতে খরুচে হলেও ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন মোহাম্মাদ সিরাজ। পাকিস্তানের ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক লেগ বিফোরে কাটা পড়ে ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন।
ব্যাট হাতে ছন্দেই ছিলেন ইমাম উল হক। ভারতীয় বোলারদের সামলে তুলছিলেন রান। ইনিংসটা অবশ্য বড় করতে পারেননি পাকিস্তানি ওপেনার। জাসপ্রীত বুমরাহর বলে লোকেশ রাহুলের গ্লাভসবন্দি হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৬ চারে করেন ৩৬ রান।
মোহাম্মাদ রিজওয়ান এক রান করেই আউট হওয়া থেকে রক্ষা পান। আম্পায়ার রবীন্দ্র জাদেজার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দিলেও রিভিউ নেন রিজওয়ান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করছিল।
পাকিস্তানের দলীয় ৭৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন বাবর ও রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে এ দুই ব্যাটার যোগ করেন ৮২ রান। ফিফটির দেখা পাওয়া মাত্রই বাবর আজমকে বোল্ড করে ভারতীয় দলে স্বস্তি ফেরান মোহাম্মাদ সিরাজ। চমৎকার ব্যাটিং করতে থাকা পাকিস্তানের অধিনায়ক ৫৮ বলে ৭ চারে খেলেন ৫০ রানের ইনিংস।
বাবরের বিদায়ের পর ফিফটি কাছাকাছি যান রিজওয়ান। তার সঙ্গে বড় জুটি গড়তে ব্যর্থ হন শাকিল ও ইফতিখার। রিস্ট স্পিনার কুলদ্বীপ যাদবের করা ৩৩তম ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে শাকিল ৬ রান করে মাঠ ছাড়েন। একই ওভারে লেগ স্টাম্পের উপরে থাকা বল সুইপ করতে যান ৪ রান করা ইফতিখার। বল তার গ্লাভসে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে।
অর্ধশতক থেকে মাত্র এক রান দূরে থাকতে মোহাম্মাদ রিজওয়ানকে বোল্ড করেন জাসপ্রীত বুমরাহ। এরপর ২ রান করা শাদাব খানও বোল্ড হন বুমরাহর বলে। মাত্র ১৬ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২ উইকেটে ১৫৫ থেকে আকস্মিকভাবে স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৭১ রান।
১৮৭ রানে পাকিস্তান অষ্টম ও নবম উইকেট হারায়। পান্ডিয়ার বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ ধরেন বুমরাহ। খানিক পর হাসান আলীর উইকেট তুলে নেন জাদেজা। বল সহজেই তালুবন্দি করেন শুভমান গিল। শেষ ব্যাটার হিসেবে জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ হন ২ রান করা হারিস রউফ। ২ রানে অপরাজিত থাকেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ভারতের হয়ে বুমরাহ, সিরাজ, হার্দিক, কুলদ্বীপ ও জাদেজা দুটি করে উইকেট শিকার করেন।