১৬ শতকের জনপ্রিয় কবি দৌলত কাজী তার ‘সতী ময়না লোর চন্দ্রানী’ কাব্যে লিখেছেন-
‘কর্ণফুল নদী কূলে আছে এক পুরী,
রোসাঙ্গ নগর নাম স্বর্গ অবতারি।
তাহাতে মগধ বংশ ক্রমে বুদ্ধাচার।
নাম শ্রী সুধর্ম রাজা ধর্ম অবতার।’
কাছাকাছি সময়ের আরেক বিখ্যাত কবি আলাওল তার ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে লিখেছেন-
‘অতএব বৃথা কেন বাড়াইবে গােল।
পদ্মিনীরে এনে দাও রাখ মন বােল।।
সব দিক রক্ষা পাবে হইবে মঙ্গল।
একেবারে নিবে যাবে সমর অনল।।’
দৌলত কাজী, কবি আলাওল, কোরেশি মাগন ঠাকুর, নসরুল্লাহ খান এরা সবাই ছিলেন আরাকান/রাখাইন (রোসাঙ্গ নাম ছিল) রাজ্যের সভাকবি বা রাজদরবারের কবি। ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলা সাহিত্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিল আরাকান রাজ্যের রাজসভা। পদ্মাবতী, চন্দ্রাবতী, সতী ময়না লোর চন্দ্রানী, হপ্ত পয়কর, সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামান, শরিয়তনামা, দারা সেকেন্দারনামা’র মতো অনেক কালজয়ী কাব্য, মহাকাব্য রচিত হয়েছে আরাকানে। এসব কাব্যে উঠে এসেছে আরাকান রাজ্যের অনেক অজানা ইতিহাস।
যারা আশি ও নব্বই দশকের বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হীরামন’ অনুষ্ঠান দেখেছেন, তারা ষোল-সতের শতকের সাহিত্যে কিছুটা ছাপ দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া উপমহাদেশের বিভিন্ন সিনেমায় সেসময়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের চিত্র উঠে এসেছে।
বৃটিশ আমলতো বটেই মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত আরাকানে বাঙালির বিচরণ অনেকটা অবাধ ছিল বলে জানা যায়। এছাড়া ঐতিহাসিকভাবে চট্টগ্রামের বাঙালিদের সাথে আরাকানিদের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকই নয়, আত্মিকও বটে।
আরাকানে সংঘাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পনের শতক থেকে শুরু করে মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজার আরাকানে আশ্রয়ের সময় ও তার মৃত্যু পর্যন্ত নানা ধর্ম-বর্ণ ও বর্ণিল জাতিতত্ত্বের নানা ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। এই সময়েই নানা জাতি-ধর্মের মিশ্রণ এবং আরাকানের সেসময়ের রাজা চন্দ্র সুধর্মার সাথে শাহ সুজার নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে আরাকানের নানা জাতি-গোষ্ঠি ও মুসলমানদের সংঘাতের চিত্র দেখা যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৬৬১ সালে শাহ সুজার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুরু হয় হাজার বছরের সমৃদ্ধ স্বাধীন আরাকানের পতনকাল। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষ তথা বাংলা রাজ্য ও আরাকান রাজ্যে শুরু হয় তীব্র অস্থিরতা আর অশান্তি। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে আরাকান সাম্রাজ্য। পরে কিছুটা শান্তি ফিরে এলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ১৭৮৪ সালে বর্মিদের কাছে চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা হারায় আরাকানরা। বলা হয়ে থাকে যার ধারাবাহিকতায় আজও সংঘাতময় রাখাইন রাজ্য। সেখানকার রোহিঙ্গারা আজ রাষ্ট্রহীন নাগরিক, বিশ্বে সবচেয়ে হতভাগা সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত।
অভ্যন্তরীণ অনেকগুলো সশস্ত্র বাহিনীর মুখোমুখি জান্তা
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এর সেনা অভ্যুত্থান মারাত্মক সংঘাতকে তীব্র করে তুলেছে এবং মিয়ানমারের বহু জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে জড়িত কয়েক দশকের পুরনো শান্তি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘তাতমাদো’ হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই সময়ে প্রায় হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যা ও বিক্ষোভকারীদের নৃশংসভাবে দমন করে বিশ্বকে হতবাক করেছে। এরফলে প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী হিসেবে পরিচিত তাতমাদো এখন নতুন নতুন এবং পুনরুজ্জীবিত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি, যাদের মধ্যে কেউ কেউ একটি প্রকৃত ফেডারেল রাষ্ট্রের জন্য সম্মিলিতভাবে একত্রিত হতে শুরু করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এবং আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট ডেটা (একলেড) প্রজেক্ট তথ্যমতে, কয়েক যুগেরও বেশি সময় হলো পুরো মিয়ানমার জুড়ে কমপক্ষে ৫৮টি সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ১২টি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলি স্থানীয় বিভিন্ন স্তরে গঠিত, তারা তাদের কাঠামো ও প্রশিক্ষণের প্রকৃতি বিষয়ে খুব কমই জানান দেয়। তবে সময়ের সাথে সাথে তাদের সামর্থ্য ও প্রভাব পরিবর্তিত হয়। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গোষ্ঠীগুলির মধ্যে জোট গঠন ও শান্তি চুক্তির ঘটনাও ঘটেছে।
সামরিক দখলের আগে, দেশটিতে প্রায় দুই ডজন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল। সেইসাথে বিভিন্ন আকারের শত শত মিলিশিয়া ছিল, যাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাতমাডোর পক্ষে ছিল। বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য কয়েক দশকের লড়াইয়ের পরে, এই জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির বেশিরভাগই হয় দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে (এনসিএ) স্বাক্ষর করেছিল। এমনকি অনেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে রাজনৈতিক আলোচনায় সহায়ক অথবা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেনা অভ্যুত্থানের আগে তাতমাদোর সাথে সংঘর্ষ কয়েকটি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল, যেগুলোর বেশিরভাগ ছিল উত্তর শান, কাচিন এবং রাখাইন রাজ্যে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের তথ্যমতে, বর্তমানে পুরো মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সংঘাত-সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
আরসার পরে মাথা ব্যথার কারণ আরাকান আর্মি
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’র কাঁধে বন্দুক রেখে ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নির্মূলে মেতে ওঠে মিয়ানমার সরকার। তার কিছুদিন আগে নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করা হয়। আরসার একটি হামলাকে কারণ দেখিয়ে চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। যা এই শতাব্দীর অন্যতম বড় ঘটনা। সেসময় থেকেই নতুন করে বিশ্বের নজরে আসতে শুরু করে মিয়ানমার। তবে তাতমাদো’র ঘাড়ত্যাড়া বৈশিষ্ট ধরে রেখে তারা বিশ্বের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। এমনকি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন উগ্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোও রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নেয়।
সম্প্রতি দেশটির তিনটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী- আরাকান আর্মি, তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বড় ধরনের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর সাথে। গঠিত হয়েছে সমান্তরাল সরকার ব্যবস্থাও। মিয়ানমার একটি নতুন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। একলেডের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবছর আরও বেশি যুদ্ধ হয়েছে। এছাড়া মারাত্মক হারে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কামান, শেলিং, গ্রেনেড বা আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনা চিহ্নিত হয়েছে।
রাখাইন বা আরাকান রাজ্যে আরাকান আর্মি দিন দিন ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে। ২০০৯ সালে মাত্র ২৯ জন নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি’র বর্তমানে সক্রিয় ১০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। তাদের রয়েছে রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড লীগ ফর আরাকান (ইউএলএ)’। সমগ্র আরাকান প্রদেশে আরাকান আর্মি ও ইউএলএ বেশ জনপ্রিয়। রাজনৈতিক ও যুদ্ধের কৌশলের পাশাপাশি তথ্য যুদ্ধ ও কূটনীতিতে তারা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। ২০১৯ সালে তারা ‘রাখাইন পিপলস অথরিটি’ নামে’ একটি স্বশাষিত সরকার গঠন করে আরাকানে কর সংগ্রহ শুরু করে, যা তাদের নিজস্ব আর্থিক সক্ষমতা তৈরি করেছে। এসবকিছুতে স্থানীয় আরাকানিদের সমর্থন রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রমাণ মেলে। এই আরাকান আর্মি বর্তমানে ভয়াবহ সংঘর্ষ লিপ্ত জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ সীমান্তে।
কতোটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ? চীন-ভারতের ভূমিকা কী?
যুগ যুগ ধরে চলা সংঘাত ও অভিযানে অংশ নেওয়ার ফলে মিয়ানমারের সেনারা মারাত্মক যুদ্ধবাজ এবং তাদের দেশের ভেতরে হত্যায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতো কিছু সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী তাতমাদোর নৃশংসতার শিকার।
বারবার সীমা লঙ্ঘনের ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে মিয়ানমার। দেশটি সীমান্ত লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা মানছে না। বরং বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই আকাশে উড়ছে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার। মাঝে মাঝেই মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা, মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মিয়ানমার যুদ্ধভিত্তিক কূটচাল দিচ্ছে উপমহাদেশের পরিস্থিতি অস্থির করতে। একটি দেশ যখন যুদ্ধে জড়ায় তখন স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সমস্যা ঢাকা পড়ে যায়।
মিয়ানমারের বড় সংকটে চীন ও ভারত বেশ খোলামেলাভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুটি দেশেরই রয়েছে মিয়ানমারের সাথে অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। নিজেদের প্রয়োজনে উভয় দেশই মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর অনেকের সাথে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ। সেদেশের দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেইট আর্মি, আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিসহ বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন চীনের কাছ থেকে অর্থ, অস্ত্র ও আশ্রয় পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারও চীনের একচ্ছত্র কতৃত্ব মোকাবিলায় ভারত, জাপান ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখছে। রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তি ও জাপানের সাথে উন্নয়ন চুক্তির পাশাপাশি কালাদান প্রকল্প ও ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় হাই ওয়ে প্রকল্পও মিয়ানমারের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার কৌশল মনে করা যেতে পারে।
মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে যে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা করেছে তা বাংলাদেশের প্ররোচনায় ওআইসির সহযোগিতায় করা হয়েছে বলে মিয়ানমার বিশ্বাস করে। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে বৈশ্বিক চাপ সাম্প্রতিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উচ্চারিত হয়েছে তা সামাল দিতে মিয়ানমার না কৌশল অবলম্বন করছে। ব্যক্তিগত জীবনে আমরা কারও উপর ক্ষিপ্ত হলে বা নাখোশ হলে যেমন নানা আচার আচরণে তার প্রকাশ ঘটাই, মিয়ানমারও বাংলাদেশের উপর তার ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাচ্ছে বারবার সীমানা লঙ্ঘন করার মাধ্যমে। এছাড়া গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স মতে, সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩৯ আর বাংলাদেশের অবস্থান ৪৬। তাছাড়া মিয়ানমারে সারাবছর ধরে নানা সশস্ত্র সংঘাত চলার কারণে তারা স্বভাবতই যুদ্ধবাজ মনোভাবের, অন্যদিকে বাংলাদেশের রয়েছে শান্তিপ্রিয় নীতি। এসবদিক মাথায় রেখেও হয়তো মিয়ানমার গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে চাইছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি’র প্রবল উপস্থিতি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন হুমকি বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। আরাকান বা রাখাইন রাজ্যের বিষয়ে আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই বলে মনে হচ্ছে, শুধুমাত্র জান্তা সরকারের ইচ্ছায় যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না, এটা আমাদের সরকারের চিন্তায় রাখতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)