“আমি এখন বাংলাদেশি নাগরিক। আমার দাদু কাজী নজরুলকে অপমানিত হতে দেব না। কে গান বিকৃত করেছে, সেটা জানা আমাদের মুখ্য নয়। বরং যে গানটি বিকৃত করেছেন; তার জানা দরকার ছিলো তিনি কার গানকে এরকম করে উপস্থাপন করছেন! কবি নজরুল সারা বিশ্বের খ্যাতিমান কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি।”
কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এ আর রহমান বিকৃতভাবে সুরারোপ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী সব্যসাচীর কন্যা মিষ্টি কাজী। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে কবি নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে অতিথি হিসেবে ছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মিষ্টি কাজী বলেন, আমি এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি আমার দাদা কাজী নজরুল ইসলামের গানটিকে বিকৃত করে গাইবার প্রতিবাদ জানাতে। নিন্দা জানাতে।
তিনি বলেন, দাদার যে গান শুনে লাখো মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছেন, যে গান শুনে মানুষ যুদ্ধে গেছেন; এমন একটা ঐতিহাসিক গানকে সকলের শ্রদ্ধাভাজন সুরকার এ আর রহমান কী করে বিকৃত করে তৈরী করলেন! আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা। এই গানটা যখন আমরা পরিবারের সদস্যরা শুনলাম, আমাদের মুখে ভাষা নেই। বার বার আমাদের মনে হলো, এই গানটি তিনি কী করে করলেন? কে কী করেছে, আমাদের দেখার দরকার নেই; কে উল্টো সুরে গাইছে কে রিয়েল সুরে গাইছে- তা আমাদের দেখার দরকার নেই। আমাদের দেখার দরকার কাজী নজরুল ইসলামকে।
তিনি বলেন, তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এমন সুর বিকৃতির জন্য যেন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। এসময় মিষ্টি কাজী বলেন, আমাদের অতি প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা। কবি পরিবারের পক্ষ থেকে বলছি, তিনি যেন কঠিনভাবে একটু পদক্ষেপ নেন। ‘ভুল সুরে গাওয়া হয়েছে’-এরকম সমালোচনা করার সুযোগ নেই; এখন প্রতিবাদ ও পদক্ষেপ নেয়ার সময়।
এরআগে নজরুল সংগীতশিল্পী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুর বিকৃতি বা পরিবর্তিত হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বহু বছর ধরেই এমনটা হয়ে আসছে। যেহেতু ‘কারার ঐ লৌহ কপাদ’ গানটি অতি প্রতিষ্ঠিত, তাই আমাদের চিত্তে আঘাত লেগেছে। তারপরও এই গানটির বিকৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে আজকে বহু সংস্কৃতিকর্মী আমরা সবাই একত্র হয়েছি, এবং এই ভুল কাজটির বিষয়ে প্রতিবাদ করছি; এটা একটা বড় ঘটনা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নজরুল-রবীন্দ্রনাথ বাঙালির প্রাণের কবি, শিল্পী ও সুরকার! তাদেরকে আমরা অবিকৃতভাবে রাখতে চাই। তাই এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ আর রহমানসহ ‘পিপ্পা’র পরিচালকের উদ্দেশে বলতে চাই; পুনরায় আপনারা নজরুলের এই গানটির সুর অবিকৃত রেখে রেকর্ড করুন। গালিগালাচ না করে সম্মিলিতভাবে যদি সবাই আমরা এই দাবি করি, তাহলে যে সংকট তৈরী হয়েছে; তা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। এবং ভবিষ্যতে অন্যরা যদি কেউ নজরুল-রবীন্দ্রনাথ সহ অন্য কারো সুর পরিবর্তন করে নতুন করে গান তৈরী করতে চান, তারা সচেতন হয়ে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক পিএটু মো. জিয়াউল হক, এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল সহ নজরুল গবেষক ও খ্যাতিমান শিল্পী, সাধক, গবেষক ও অনুরাগীরা।