চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভালোবাসা, ভালো নেই

১৯৮৪ সালে ঈদ সংখ্যা নিপুণ’এ মোহন খানের উপন্যাস ‘ভালোবাসা, ভালো নেই’ পড়ে মাথা পুরাই আউলা হয়ে গিয়েছিল। তখন ক্লাস টেনে পড়ি- সে আমলে আমাদের আশেপাশের সবাই ইমদাদুল হক মিলনে আসক্ত। মোহন খানের লেখা খুব ভালো লেগেছিল। একটা ছেলেমানুষি আর অদ্ভুত সারল্য নির্ভর অনুভূতি ছিল সেই লেখায়- লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল, এই লেখাটা তো আমারই লেখার কথা ছিল। তার ছেলেমানুষি আমার খুব মনে ধরেছিল।

এর বছর চার-পাঁচ পর মিলন ভাইয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকভাবে মোহন খানের কথা উঠতেই তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বললেন, মোহন আমাদের সময়ের একজন অসম্ভব শক্তিশালী লেখক। প্রচুর পড়াশোনা ওর। কিন্তু কেন যেন ও আর লিখল না। মোহন যদি সিরিয়াসলি লিখত তাহলে আমাদের মতো লেখকদের খবর ছিল।

মোহন খানের একটা অসম্ভব গুণ, তাহলো তিনি তাৎক্ষণিকভাবে খুব বানিয়ে বানিয়ে গল্প করতে পারতেন। সেসব গল্পে তিনি কত কত মানুষের, কত কত জীবনের বলা, না বলা গল্প যে তুলে আনতেন! এই শহরে আমি উনার মতন এত গুছিয়ে, এত মায়ায় গল্প বলতে কাউকে শুনিনি। এই শহরে আমার মতন অনেক প্রিয় অনুজ রয়েছে, মোহন খানের যাদের কাছে কাছে তোলা আছে তার বলা, না বলা গল্প।

১৯৯০ সালে মোহন খানের সাথে আমার পরিচয় দৈনিক খবরে কাজ করার সময়। আমি তখন সে পত্রিকার প্রতিবেদক। খবর থেকে সাপ্তাহিক ‘মনোরমা’ নামে একটি সাপ্তাহিক বের হতো। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন তার নির্বাহী সম্পাদক। একদিন শান্তিনগরের অফিসে এলেন মোহন খান। রিটন ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাকে মোহন ভাইয়ের সঙ্গে। প্রথম পরিচয়ে রীতিমত মুগ্ধ এবং আমি মোহন ভাইয়ের ভক্ত হয়ে যাই। রিটন ভাই মোহন খানের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, মোহন ভাই তখন টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখছেন। নাট্যকার হিসেবে তার সাক্ষাৎকার মনোরমা’য় যাবে।

আমি বললাম, উনি তো একজন লেখক- নাট্যকার হিসেবে সাক্ষাৎকার নেব কেন?

আমার কথা শুনে মোহন ভাই চোখ ছোট করে আমার দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি যে খুশি হয়েছেন বোঝা গেল।
সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় থেকেই মোহন ভাই আমার প্রিয় মানুষে পরিণত হলেন। আমার সঙ্গে কোথাও দেখা হলে সবাইকে তিনি বলতেন, মাহবুব আমার খুব প্রিয় ছোটভাই।

এরপর অনেক বছর গ্যাপ, তারপর তার সাথে হুট-হাট করে এখানে সেখানে দেখা হতো। বছর দশেক আগে বইমেলায় আমাকে পেয়ে নিজের আপন ভাইকে যেমন করে ধরেন, তেমন করে জড়িয়ে ধরে তার স্টলে নিয়ে গেলেন- নিজের প্রকাশিত উপন্যাস আমাকে দিলেন। আমি বোকার মতো তার সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে বই দেখে অবাক হই।

মোহন খান তার ‘মেয়েটি কাছে আসতে চায়’ উপন্যাসটি আমাকে উৎসর্গ করেছিলেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)