চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে কৃষক

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হলেও তীব্র তাপদাহ ও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। তাপদাহের কারণে জমিতেই মরে যাচ্ছে পাট। পাটের আঁশ শুকিয়ে যাচ্ছে। চাহিদামত বৃষ্টিপাত না হলে পাটের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।

আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাস শেষের পথে। তবু উপজেলায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে অধিকাংশ খাল-বিলে পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ খাল-বিল এখন শুকনো। উপজেয়ায় কয়েক দিনে বিভিন্ন স্থানে যে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং জলাশয়ে যেটুকু পানি রয়েছে তা খুবই অপ্রতুল যা পাট পঁচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

চাষিদের অনেকেই বৃষ্টিপাতের আশায় পাট কেটে জমির পাশে, কেউবা রাস্তার পাশে, খাল-বিল বা ডোবার পাশে স্তুপ করে রেখে দিয়েছেন। যারা তাপদাহ থেকে পাটকে রক্ষা করতে কেটেছে, তারা পানির অভাবে জমিতে খড় ও আর্বজনা দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার খাল-বিল বা জলাশয় এর অল্প পানিতেই পাটের উপর মাটি ও ভারী কিছু দিয়ে পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ ডোবা কিংবা জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে পচানোর জন্য শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিতে দেখা গেছে। আবার কেউ ভ্যানে করে পানি এলাকায় নিয়ে গিয়ে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চাষিরা শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে রোপা-আমন লাগানোর জন্য পাট কেটে ফেললেও পানি না থাকায় রোদে এসব কাঁচা পাট নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে ।

উপজেলার ধরঞ্জী গ্রামের ইউনুছ আলী, শ্রীমন্তপুরের ফারায়েজ হোসেন, রতনপুর গ্রামের মোক্তাদিরসহ একাধিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বর্ষা মৌসুমে প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্মের তাপদাহ। কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ার মাঠের পাট মাঠেই পুড়ছে। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও পাট জাগ দেওয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছি না। অনেকে পাট কেটেও পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে জমিতে স্তুপ করে রেখেছেন। অনেক কৃষক পুকুর বা ছোট জলাশয়ে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। নিশ্চিত লাভ জেনেও প্রকৃতির বিরুপ আচরনে কৃষকের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় এখনও প্রচুর পাট ক্ষেতেই রয়ে গেছে। প্রচন্ড তাপদাহে জমিতে পাটগাছের উপরের পাতা, কান্ড ও গোড়া মরতে শুরু করেছে।

কৃষকরা জানায়, একবিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড় ফলন ১০ মন। প্রতিমণ পাটের বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এ দামে পাট বিক্রি করলে তারা খুব বেশি লাভবান হবেন না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় দেশী ও তোষা জাতের পাট ১ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, পাট জাগ দেওয়ার আধুনিক রিবন রেটিং পদ্ধতি এ উপজেলায় তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি, কারণ এ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ের একদিন পরেও যদি পাট জাগ দেওয়া হয় তাহলে পাটের আঁশ সঠিকভাবে ছাড়িয়ে নেওয়া যায় না। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্য দিকে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ায় পরিবেশ দূষিতও হয়। তবে আধুনিক ভাবে পাট জাগ দেওয়ার বিরন রেটিং পদ্ধতি সম্পর্কে এই এলাকার কৃষকরা জ্ঞান সম্পন্ন না হওয়ায় তারা এখনও সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করছে। কৃষকরা যেন পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয় সেজন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে চাষিদেরকে আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প পরিমাণ পানিতে পাট জাগ দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।