পৃথিবী বিখ্যাত নির্মাতা কিম কি দুক চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো শনিবার (১১ ডিসেম্বর)। গেল বছরের এই দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ‘থ্রি আয়রন’-এর এই নির্মাতার।
গত বছরের ২০ নভেম্বর নিজ দেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে লাটভিয়ায় যান কিম কি দুক। উদ্দেশ্য ছিলো দেশটির রাজধানী রিগার সাগর তীরবর্তী এলাকায় একটি বাড়ি কেনা। কিন্তু বাড়ি কেনার নির্ধারিত মিটিংয়ের দিনে কিমের অনুপস্থিতি দেখে সহকর্মীরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন তারা কিম এর খোঁজ করতে শুরু করেন হাসপাতালগুলোতে। পরে জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন কিম। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
১৯৬০ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া বিখ্যাত এই নির্মাতার প্রথম সিনেমা ‘ক্রোকোডাইল’। স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র দিয়েই তার হাতেখড়ি। এরপর একে একে নির্মাণ করেন রিয়েল ফিকশন, বেড গাই, দ্য কোস্ট গার্ড, স্প্রিং সামার ফল উইন্টার… এন্ড স্প্রিং, থ্রি আইরন, সামারিটান গার্ল, দ্য বো, ড্রিম, আরিরাং, পিয়েতা এবং আমেন এর মতো পৃথিবী বিখ্যাত সব সিনেমা।
তার নির্মিত সিনেমাগুলো মস্কো, বার্লিন, ভেনিস ও কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো সবচেয়ে দাপটে উৎসবগুলোতে নিয়মিত প্রতিযোগিতা করে এবং সম্মান বয়ে আনে। ষাট বছর বয়সী এই নির্মাতার হাত ধরেই কোরিয়ান সিনেমা বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পায়।
তার সিনেমাগুলো বিতর্ক তৈরি করেছে কোরিয়ায়, কিন্তু সাড়া ফেলেছে আন্তর্জাতিক মহলে। ‘বার্ডকেজ ইন’-এর প্রিমিয়ার হয় বার্লিনেল এর প্যানারোমা শাখায় এবং ‘দ্য আইল’ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয়।
ব্যাড গাই (২০০১) বাণিজ্যিক ভাবে সফলতা পায় কোরিয়ায়। প্রায় ৭ লাখ দর্শক হলে গিয়ে ছবিটি দেখেছিলেন। ২০০৩-এর ছবি ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার… অ্যান্ড স্প্রিং’ ছবিটি গ্র্যান্ড বেল অ্যাওয়ার্ড এবং ব্লু ড্রাগন ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।
২০০৪ সালে ‘সামারিটান গার্ল’ ছবির জন্য বার্লিনে ‘সিলভার বিয়ার’ পুরস্কার জিতেন কিম। এই ছবির গল্প একজন টিনএজ দেহপসারিনিকে ঘিরে। একই বছর তিনি ভেনিস উৎসবে সিলভার লায়ন পুরস্কার জিতে নেন সাইকো-হরর ড্রামা ‘থ্রি-আয়রন’ এর জন্য।
কিম কি দুক-এর ছবিতে দেখানো সহিংসতা ও নির্যাতন অনেক দর্শকের মনে অস্বস্তি তৈরি করতো। বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও থেমে থাকেননি কিম কি দুক।
২০১৭ সালে একটি খবর কিম কি দুক এর ভক্তদের চমকে দেয়। একাধিক নারীকে যৌন হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে নির্মাতার বিরুদ্ধে। তাদের অনেকেই কিম এর ছবির অভিনেত্রী, আবার অন্যরা বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন কিম এর সাথে।
কিম কি দুক এর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, জোরপূর্বক চুমু দেয়া, শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন অভিযোগকারীরা। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কিম বলেন, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে তার ভিন্ন মত আছে। ক্ষমা চাওয়ার বদলে তিনি অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করে দেন।
কোরিয়ায় সমালোচিত কিম কি দুক বুঝতে পারেন, তার কাজের বিশেষ সমাদর আছে রাশিয়ায়। তিনি কাজাখস্তান-এ চলে যান এবং সেখানে ‘ডিসলভ’ নির্মাণ করেন। এরপর তিনি লাটভিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ গেল বছরের নভেম্বরের ২০ তারিখে সেখানেই বাড়ি কিনতে গিয়েছিলেন তিনি।
কিম এর মৃত্যুর পর সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী মানুষ শোক অনুভব করলেও কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নীরব ছিল। কোনো ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি বা শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়নি। কিম-এর কাছের কয়েকজন শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন।
কোরিয়ার সমালোচকদের মতে, ‘কিম মেধাবী হলেও তিনি একজন অপরাধী।’