এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
খোকন হাজী ঠিকাদার পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা কিনে ভারতে পাচার করে আসছিলেন। অবৈধভাবে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করে বিক্রি করা আরেক ব্যবসায়ী ঝালকাঠির মোস্তফা হাওলাদারের কাছ থেকে যার প্রায় ৯৫ লাখ টাকায় মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা কিনে প্রতারিত হন খোকন।
নকল মূর্তি ও মুদ্রা বিক্রি করে আত্মগোপনে চলে যান মোস্তফা। ফলে খোকন প্রতারিত হয়ে মোস্তফাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো হদিস না পেয়ে টাকা আদায় করতে মোস্তফার ভায়রা ভাই আনোয়ারের হোসেন খানকে (৪৪) অপহরণ করেন খোকন হাজী ও তার চক্রের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে আনোয়ারের হোসেনকে অপহরণ করা হয়।
অভিযোগ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা খোকন হাজীসহ সাতজনকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব -৩। এ সময় অপহৃত আনোয়ারকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন, মো. আরিফ হোসেন, সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন, সিরাতুল মোস্তাকিম, মো. রুহুল আমিন, মো. জাকির হোসেন, ও মো. স্বাধীন। এসময় তাদের কাছ থেকে রিভালবার, ৮ রাউন্ড গুলি ও শটগান জব্দ করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।
ফিরোজ কবীর বলেন, গত ১মে রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র আনোয়ারকে তুলে নিয়ে যায়। পরে কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের আটকে রাখে। পরে অপহরণকারীরা আনোয়ারের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছে ৯৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
পরিবার আনোয়ারের জীবন বাঁচাতে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্রের দেওয়া একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে পাঠায়। সাড়ে ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার পর আরও টাকার দাবিতে নির্যাতন চালাতে থাকে। এমনকি অপহরণকারীরা টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিলেন। তার এই অপকর্মের সহযোগী ছিল ভারতীয় এক নাগরিক যার নাম মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা মিলন চক্রবর্তী।
খোকন হাজী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেন। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে নাঈম, মোস্তফা হাওলাদার ও রবি নামের কয়েকজন সহযোগী বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করতো। বিনিময়ে তাদের মাসে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিত খোকন।
র্যাব-৩ এর সিও আরো জানান, খোকন হাজী একজন ঠিকাদার। মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিলেন। এই অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার সহযোগীরাও অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের জড়িত।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।