সাহাবী বলতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচরগণকে বুঝি। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার ‘আল-ইসাবা ফি তাময়িযিস সাহাবা’ গ্রন্থে সাহাবীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘সাহাবী সেই ব্যক্তি, যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইমান সহকারে তার সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপর ইন্তেকাল করেছেন।’
নবিদের পরেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মর্যাদা। যে-কেউ ইচ্ছে করলেই সাহাবী হতে পারবে না। বরং সাহাবায়ে কেরাম হলেন ঐ সকল ব্যক্তি, যাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচর হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় ওই সমস্ত লোক (সাহাবায়ে কেরাম), যারা আপন কণ্ঠস্বরকে নিচু রাখে আল্লাহর রসুলের নিকট। তারা হচ্ছে ওই সব লোক, যাদের অন্তরকে আল্লাহ খোদাভীরুতার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কার রয়েছে।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত: ৩)
সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের চরিত্রের ক্ষেত্রে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তার দ্বারা নববি চরিত্রে আদর্শিত হয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাহাবায়ে কেরামদের চরিত্র সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল এবং তার সাহাবীগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত অবস্থায় দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন।’ (সুরা আল ফাতহ, আয়াত: ২৯)
সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেকের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তষ্টি রয়েছে এবং প্রত্যেক সাহাবী আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন শরিফে ইরশাদ করেন, ‘আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।’ (সুরা তাওবাহ, আয়াত: ১০০)
সাহাবাগণ সত্য ও ন্যায়ের মাপকাঠি। একেকজন সাহাবী আকাশের একেকটি তারকার মতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার সাহাবাগণ আকাশের তারকাতুল্য। তোমরা তাদের যে কারো অনুসরণ করবে, হেদায়েত পাবে।’ (দারে কুতনি ৪/১৭৭৮)
প্রত্যেক সাহাবী জান্নাতি। দুনিয়াতেই তাদের জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে মুসলিম হিসেবে আমাকে দেখেছে এবং আমি যাদের দেখেছি, তাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৫৮)
সাহাবায়ে কেরাম সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাদের পরে উম্মতের কেউ-ই সাহাবায়ে কেরামের সমকক্ষ কিংবা সম-পর্যায়ের হতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার সাহাবাদের সমালোচনা করো না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পাহাড়ের সমান স্বর্ণ ব্যয় করে দেয়, তাহলেও তাদের (সাহাবীদের) কারোর এক মুঠো অথবা অর্ধ-মুঠো সমান হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৪০)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। যারা সাহাবায়ে কেরামদের সমালোচনা করবে, তাদের কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। বরং তাদের ভাগ্যে আল্লাহর লানত নেমে আসবে। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যারা সাহাবাদের গালি দেবে, মন্দ বলবে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও মানবকুলের লানত বর্ষিত হবে। তাদের ফরজ ও নফল কোনো আমলই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না।’ (কুরতুবি ৮/১৯৬)
সাহাবায়ে কেরামকে কষ্ট দেওয়া আল্লাহ এবং তার প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেওয়ার সমান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে আমার সাহাবীদের কষ্ট দিল, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল। আর যে আমাকে কষ্ট দিল, সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল। যে আল্লাহকে কষ্ট দিল, অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৯৬৪১)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যেক সাহাবীর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা, তাদের অনুকরণ-অনুসরণ করা প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। তাই আমরা সাহাবীদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসব এবং তাদের নিয়ে কটুকথা বলা থেকে বিরত থাকবো।