দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন গোলাম ফরিদা ছন্দা। বহু জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তার পথ অনুসরণ করেই যেন প্রথমবার সিনেমায় পা রাখলেন মেয়ে টাপুর। আর প্রথম সিনেমাতেই কুড়াচ্ছেন দর্শকের প্রশংসা! যা দেখে আপ্লুত মা ও অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা।
ছোট পর্দার প্রিয় অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা দুই কন্যার মা। তার যমজ দুই মেয়ের নাম টাপুর ও টুপুর। এরমধ্যে টাপুর অভিনীত ‘দেশান্তর’ মুক্তি পেল শুক্রবার (১১ নভেম্বর)। ঢাকার দুটি প্রেক্ষাগৃহে চলছে ‘টিনের তরোয়াল’ খ্যাত নির্মাতা আশুতোষ সুজনের এই ছবি।

মেয়ের প্রথম সিনেমা হওয়ায় ‘দেশান্তর’র নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছন্দা। ছবি মুক্তির আগে থেকেই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় প্রকাশ করেছেন নিজের উচ্ছ্বাস। সেই সঙ্গে প্রকাশ করেছেন আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত অনুভূতির কথাও।

ভিডিও শেয়ার করে ‘দেশান্তর’ মুক্তির দিনে ছন্দা বলেন,‘আজকের দিনটা আমার জন্য যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনই কষ্টের। কারণ, আমার মেয়ে দুটো আজ আমার পাশে নেই। আসলে জীবনে কিছু কিছু ব্যাপার থাকে, যখন একটাকে গুরুত্ব দিতে গেলে আরেকটাকে কম গুরুত্ব দিতে হয়। ওদের সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা, একেবারে কাছেই টেস্ট পরীক্ষা। যে কারণে ওরা ঢাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে চলে গেছে। ওদের আমার দিয়ে আসতে হয়েছে।’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় কণ্ঠ জড়িয়ে আসে ছন্দার। অশ্রুসিক্ত অভিনেত্রী বললেন, ‘মা হিসেবে আমার খারাপ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। আমি আমার মেয়েকে পাশে নিয়ে ছবিটা দেখতে পারছি না। তার প্রথম দিনের শো দেখতে পারছি না। এটা তো আমার কাছে অনেক বড় কষ্টের।’
টাপুর অভিনীত ‘দেশান্তর’ দেখে শনিবার সন্ধ্যায় আরও একবার নিজের অনুভূতির কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন ছন্দা। বলেন,‘দেখা হলো দেশান্তর। প্রিয় কবি, ঔপন্যাসিক, দেশান্তর উপন্যাসের জনক কিংবদন্তী নির্মলেন্দু গুণের সাথে। যে মানুষটি এতো মোহময় তার লেখাও তেমনি আবিষ্ট করে রাখবে পুরো মনোন ও হৃদয়কে- এটাই স্বাভাবিক।’
সিনেমায় মেয়ের যাত্রা শুরুর গল্প জানিয়ে ছন্দা আরও লিখেছেন,‘আমার কন্যা টাপুরের চরিত্র মনসা এই ছবির প্রাণ। বড় ভয় ছিল জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রে এমন কঠিন একটি চরিত্রকে ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারবেতো টাপুর? তাই পণ করেছিলাম যতক্ষণ ছবির কাজ চলবে, টাপুরের পাশে থাকতে হবে। চরিত্রকে ধারণ করার মনোবলটাকে ধরে রাখতে হবে, খেই হারালে চলবে না। কিন্ত আমার বাচ্চাটা প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে অবাক করিয়েছে, কারণ আমরা যতটুকু বলেছি, যেভাবে বলেছি সেটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করার সাথে সাথে তা আরও ভালোবাসা দিয়ে প্রকাশ করেছে। একটা সুস্পষ্ট জায়গায় দাঁড় করিয়েছে মনসাকে! সেইখানেই টাপুরের কৃতিত্ব, সেইখানেই টাপুর অন্য রকম!’
মনসা চরিত্রে টাপুরের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন স্বয়ং নির্মলেন্দু গুণ- এমনটা জানিয়ে ছন্দা আরও লিখেন,‘আমার কন্যা বলে বাড়িয়ে বলার একবিন্দু ইচ্ছে আমার নেই। গুণদা যখন বললেন “এখন মনে হচ্ছে দেশান্তরের মনসা চরিত্রটি আমি টাপুরের জন্যই লিখেছিলাম। আহা! আমাকে চার পাঁচ জায়গায় কাঁদালো মেয়েটি! আগে জানলে লিখতাম ই না দেশান্তর!” এরপর আমার আর কিছুই বলার থাকে না।’
মেয়েকে নিয়ে ছন্দা নিজের অনুভূতি শেয়ার করেন এভাবে,‘শুধু চোখ দুটো ঝাপসা হয়েছে টাপুরকে খুঁজে, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে মা তুমি কী যাদু দেখালে! শুধু টাপুর নয়, ছবির প্রতিটি চরিত্র ঝকঝকে, জীবন্ত!’