জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে আটক হওয়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানকে সাময়িক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের সই করা অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, রোববার মধ্যরাতে প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রয়ের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় বলে বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত খবর থেকে জানা গেছে। সরকারি চাকরি আইন মোতাবেক তাকে বোর্ডের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ আদেশ ১ এপ্রিল (সোমবার) থেকেই কার্যকর হবে। তিনি বরখাস্তকালীন সময়ে বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
হুঁশিয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর
শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অবৈধ সনদ বিক্রির সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত আছে বলে আমাদের ধারণা। জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, একদিকে মেধাবী ছাত্ররা কঠিন লেখাপড়া করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না অন্যদিকে সে (শামসুজ্জামান) তার বাসায় বসে ইচ্ছামত টাকার বিনিময়ে ভালো রেজাল্ট বসিয়ে দিয়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করছে। এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আর কোনো কর্মকর্তা এ সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে একজনের জোচ্চুরি কঠিন
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপির ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান (অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক) বলেন: আমরা মনে করি একজন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে এতো বড় জোচ্চুরি করাটা কঠিন। তার সাথে অন্যরা হয় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে না হয় দায়িত্বে অবহেলা করে তাকে এই অসাধু কাজ করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তদন্ত করে জড়িত সকলকেই আইন আমলে নিয়ে আসা হবে। কাওকে ছাড় দেয়া হবে না। ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালেও মার্কশিট-সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রজ্জু হওয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এরআগে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম সোমবার ভোররাত্রি থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে আটক করে। সেসময় কাছাকাছি দুইটি বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরি করা শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়ে়ছে। এ সকল কম্পিউটার প্রিন্টার ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়ে়ক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সার্টিফিকেট, মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্র করা সার্টিফিকেটগুলোকে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়ে়ছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার গুলোকে সার্স করলে সার্টিফিকেটগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।